অজয়কে ঘিরে সম্পর্ক ও বিশ্বাস নিয়ে কাজলের খোলামেলা স্বীকারোক্তি

অজয়কে ঘিরে সম্পর্ক ও বিশ্বাস নিয়ে কাজলের খোলামেলা স্বীকারোক্তি

বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী কাজল তার ব্যক্তিগত জীবন ও বিবাহিত সম্পর্ক নিয়ে সবসময়ই খোলামেলা। বহু আগেই তিনি আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন এ মন্তব্য করে যে, বিয়েরও একটি মেয়াদ থাকা উচিত, কিংবা ইমোশনাল চিটিং শারীরিক প্রতারণার চেয়েও বেশি বেদনাদায়ক। তবে এর আগেও, বিশেষ করে ২০১৪ সালের জনপ্রিয় চ্যাট শো ‘কফি উইথ করণ’-এ কাজল তার বৈবাহিক জীবন, অবিশ্বস্ততা ও অগ্রাধিকার এসব বিষয় নিয়ে অনেক স্পষ্টভাবে মত প্রকাশ করেছিলেন।

তখনই তিনি বলেছিলেন, অবিশ্বস্ততা বা দাম্পত্য সংকট কখনোই একতরফা হয় না। আপনি যখন বিবাহবিচ্ছেদ, অবিশ্বস্ততা বা সম্পর্কের অন্য কোনো সমস্যার কথা বলেন, সেটি কোনো এক পক্ষের ব্যর্থতা নয়। দু’জনই কোথাও না কোথাও সম্পর্কের সমস্যা দেখেও চোখ বন্ধ করে থাকেন মত দিয়েছিলেন কাজল। তার মতে, সম্পর্ক টিকে থাকার জন্য দু’জনকেই নিজের ভুল, দুর্বলতা এবং প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের জায়গাগুলো স্পষ্টভাবে দেখতে হবে।

কাজল অনুষ্ঠানে অকপটে বলেন, তার স্বামী অজয় দেবগন এখনো তার কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় মানুষ। সে খুব ভালো মানুষ, ভরসার জায়গা খুব শক্ত। আমাদের অগ্রাধিকারও খুব পরিষ্কার বলেন কাজল।

তিনি জানান, ভিন্ন ব্যক্তিত্ব হয়েও দুজন একই মূল্যবোধে বিশ্বাস করেন পরিবার, বিশ্বস্ততা ও দীর্ঘমেয়াদি দায়বদ্ধতা। কাজলের ভাষায়, আমাদের ব্যক্তিত্ব আলাদা, মতপার্থক্যও আছে। তবু আমরা দুজনই জানি, প্রথমে পরিবার, তারপর অন্য সবকিছু। সেই বিশ্বাসই আমাদের সম্পর্ককে শক্ত রেখেছে।

কাজল স্পষ্ট ভাষায় বলেন, আমরা চেয়েছিলাম সম্পর্কটা দীর্ঘমেয়াদি হোক। আমরা দু’জনই একইভাবে এতে শ্রম দিই। শুধুমাত্র আমি নই অজয়ও সমানভাবে চেষ্টা করে। Taali dono haathon se bajti hai তালি দুহাতে বাজে। সম্পর্কও তাই দু’জনের সমান চেষ্টায় দাঁড়িয়ে থাকে।

কাজল আরও জানান, তিনি নিয়মিত পুরো পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, কারণ তিনি মনে করেন পারিবারিক বন্ধনই সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখে। “আমি সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখি, কারণ তারা আমার পরিবার। তারাও জানে, আমিও পরিবারেরই একজন। যেকোনো অনুষ্ঠানে, যেকোনো প্রয়োজনে সবাই পাশে থাকে এই সম্পর্কটাই আমাদের শক্তি।

সাইকোথেরাপিস্ট ডেলনা রাজেশ এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন, অবিশ্বস্ততা কখনোই হঠাৎ ঘটে না। বরং এটি সম্পর্কের ভেতরে দীর্ঘদিন ধরে তৈরি হওয়া আবেগগত দূরত্বের ফল।

তার ভাষায়, চিটিং আসল সমস্যা নয় এটি একটি উপসর্গ। আসল সমস্যা অনেক আগেই শুরু হয়, যখন দুই মানুষ ধীরে ধীরে আবেগগতভাবে একে অপরের নাগাল হারাতে থাকে।

ডেলনার মতে, বিশ্বাসঘাতকতার দায় যিনি করেন তারই, তবে সম্পর্কের ভাঙনের আগের পর্যায়গুলো দু’জনেরই বোঝা উচিত। সম্পর্ক ভাঙে তখনই যখন- আবেগগত একাকিত্ব তৈরি হয়, যোগাযোগে ক্লান্তি আসে, ক্ষোভ চেপে রাখা হয়, সম্পর্কের বন্ধুত্ব হারিয়ে যায়, কেউ কাউকে গুরুত্ব দেওয়া বন্ধ করে।

অনেক দম্পতি একসঙ্গে থাকেন ঠিকই, কিন্তু তারা তখন শুধুই একটি পরিবারের কার্যকর ম্যানেজার একজন আরেকজনের আবেগগত সঙ্গী নন বলেন তিনি।

ডেলনার মতে, কোনো সম্পর্ক তখনই দীর্ঘমেয়াদি হয় যখন দু’জনের অভ্যন্তরীণ মূল্যবোধ বা ‘ইন্টারনাল কম্পাস’ একই রকম থাকে, বিশ্বস্ততা, সম্মান, সততা।

যখন একজনও এই মূল্যবোধ হারাতে শুরু করেন, তখন নীরবে সম্পর্ক দুর্বল হতে থাকে। তবে এর মানে এই নয় যে চিটিং হলে দু’জনেই সমানভাবে দায়ী। বরং ঘটনার দায় যিনি করেন তারই। কিন্তু কেন করলেন তা বোঝার জন্য দু’জনেরই নিজেদের প্যাটার্ন দেখে নেওয়া প্রয়োজন। সম্পর্ক মেরামতও দু’জনের একসঙ্গে অংশগ্রহণ ছাড়া সম্ভব নয় জোর দিয়ে বলেন ডেলনা।

সাইকোথেরাপিস্ট ডেলনা রাজেশ বলেন, যে কোনো দম্পতিকে চাই তাদের সম্পর্কে চিটিং থাকুক বা না থাকুক কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া উচিত- আমরা কবে একে অপরকে শোনা বন্ধ করেছি? আমাদের বন্ধুত্ব কোথায় হারিয়ে গেছে? অন্তরঙ্গতা কেন অস্বস্তিকর হয়ে উঠলো? ক্ষোভগুলো কেন জমে থাকল, বলা হলো না? আবেগগত সততা কখন কঠিন হয়ে গেল? এই প্রশ্নগুলোর উত্তরই সম্পর্ককে নতুনভাবে দাঁড় করাতে সাহায্য করে।

নোট: এটি প্রকাশিত তথ্য ও বিশেষজ্ঞের মতামতের ভিত্তিতে তৈরি একটি প্রতিবেদন। যেকোনো মানসিক বা দাম্পত্য সমস্যার ক্ষেত্রে পেশাদার সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

জেএইচআর