৩০ বছর পর ধর্মেন্দ্রের প্রথম বাড়িতে ঈশা দিওলের প্রবেশ: সৎমা প্রকাশ কৌরের পা ছুঁয়ে প্রণাম

৩০ বছর পর ধর্মেন্দ্রের প্রথম বাড়িতে ঈশা দিওলের প্রবেশ: সৎমা প্রকাশ কৌরের পা ছুঁয়ে প্রণাম

ভারতীয় চলচ্চিত্রের সর্বাধিক জনপ্রিয় ও ভালোবাসার নায়কদের একজন ধর্মেন্দ্র প্রয়াত হওয়ার চার দিন পেরিয়েছে। দেশজুড়ে তাঁর জন্য শ্রদ্ধার বন্যা বইছে—সহকর্মীরা স্মরণ করছেন তাঁর সহজ-সরল আচরণ, উদার মানসিকতা ও অসাধারণ সহানুভূতি; আর ভক্তরা স্মরণ করছেন পর্দায় তাঁর ছ’দশকের অনবদ্য উপস্থিতি, আকর্ষণ ও অভিনয়শৈলী।

কিন্তু তাঁর দীপ্তিমান অভিনয়জীবনের বাইরেও, ধর্মেন্দ্র ব্যক্তিজীবনও অনেক সময় আলোচনায় এসেছে—বিশেষ করে তাঁর দুটি বিয়েকে ঘিরে। মাত্র ১৯ বছর বয়সে তিনি প্রথম স্ত্রী প্রকাশ কৌরকে বিয়ে করেছিলেন। পরবর্তীতে ৪৫ বছর বয়সে বিয়ে করেন হেমা মালিনীকে। দ্বিতীয় বিয়েকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তৈরি হলেও ধর্মেন্দ্র কখনোই প্রকাশ কৌরকে তালাক দেননি। তিনি জীবনের শেষ পর্যন্ত দুই পরিবারকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে আগলে রেখেছেন এবং তাদের সম্পর্কের সূক্ষ্ম ভারসাম্য নষ্ট না হওয়ার জন্য সচেষ্ট থেকেছেন।

ধর্মেন্দ্রের প্রথম পরিবারের সদস্যরা তাঁদের পুরনো বাড়িতেই থাকতেন, এবং দীর্ঘ নিয়ম ছিল—হেমা মালিনীর পরিবারের কেউ কখনোই সেই বাড়িতে প্রবেশ করবেন না। প্রায় তিন দশক এই নিয়ম অটুট ছিল। কিন্তু ২০১৫ সালে সেই প্রথা ভঙ্গ হয়—একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে, ঈশা দিওলের আন্তরিক অনুরোধে।

২০১৫ সালে ধর্মেন্দ্র বড় ভাই অজিত দেওল—যিনি অভিনেতা অভয় দেওলের বাবা—গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ঈশা ও অহনার সঙ্গে অজিত দেওলের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত আন্তরিক। তাঁরা তাঁদের কাকা ও ভাই অভয়ের সঙ্গে সবসময়ই পারিবারিক বন্ধন বজায় রেখেছিলেন।

অজিত দেওলের শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হওয়ার পর তাঁকে ধর্মেন্দ্র প্রথম বাড়িতে চিকিৎসার জন্য রাখা হয়। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে ঈশা দিওল সিদ্ধান্ত নেন কাকাকে দেখতে যাবেন। কিন্তু সেখানে যাওয়া মানে সেই বাড়িতে প্রবেশ করা—যেখানে তাঁর মায়ের পরিবার থেকে কেউ ৩০ বছর ধরে কোনোদিন যাননি।

তাই তিনি যোগাযোগ করেন তাঁর সৎভাই সানি দেওলের সঙ্গে। সানি দেওল সবসময়ই দুই পরিবারের মধ্যে দূরত্ব কমানোর চেষ্টা করেছেন। ঈশার অনুরোধ শোনার পর তিনি নিজেই বাড়িতে যাবার ব্যবস্থা করে দেন এবং নিশ্চিত করেন যাতে ঈশার আগমনকে সবাই স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করেন।


দীর্ঘ তিন দশকের অভাবনীয় এই সফর ঈশার জন্য ছিল অত্যন্ত আবেগপূর্ণ। বাড়িতে প্রবেশ করার পর তিনি প্রথমেই তাঁর সৎমা প্রকাশ কৌরের পা ছুঁয়ে প্রণাম করেন। প্রকাশ কৌর, যিনি সবসময়ই খুব সাদামাটা ও পারিবারিক মানুষ হিসেবে পরিচিত, ঈশাকে আশীর্বাদ ও উষ্ণতা দিয়ে গ্রহণ করেন।

পরবর্তীতে এক সাক্ষাৎকারে ঈশা বলেছিলেন, আমি বাড়িতে ঢুকতেই প্রকাশ আণ্টির পা ছুঁয়ে প্রণাম করি। তিনি আমাকে আশীর্বাদ করেন। সানি ভাইয়া সব ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন। সেই মুহূর্তটা খুব আবেগঘন ছিল।

ঈশা আরও জানান, সানি ও ববি দেওল দু’জনেই তাঁকে অত্যন্ত আন্তরিকতায় স্বাগত জানান। পরিবারের দুই অংশ দীর্ঘদিন আলাদা থাকা সত্ত্বেও সেই মুহূর্তে কেউই অস্বস্তি তৈরি করেননি।

ধর্মেন্দ্র সবসময়ই দুই পরিবারকে আলাদা রেখে, কিন্তু ভালবাসা দিয়ে রক্ষা করতেন। তিনি প্রকাশ কৌর ও তাঁদের সন্তান সানি, ববি, বিজেতা ও আজিতাকে কখনোই অবহেলা করেননি। পাশাপাশি হেমা মালিনী ও তাঁদের দুই মেয়ে—ঈশা ও অহনা—কেও সমান ভালোবাসা দিয়েছেন।

তাই দুই পরিবারের সম্পর্ক যতই জটিল মনে হোক, বাস্তবে তাঁদের মধ্যে একটি সম্মানজনক দূরত্ব ও পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বজায় ছিল। ঈশার সেই ২০১৫ সালের সফরটা সেই সম্মান ও মানবিকতারই প্রতিফলন।

ঈশার এই সফর বলিউড পরিবারগুলোর ভেতরের দূরত্ব ও ভুল বোঝাবুঝি যে মুহূর্তে কোমল হয়ে আসে, তা দেখিয়েছে। সানি দেওলের আন্তরিকতা, ঈশার সাহস এবং প্রকাশ কৌরের গ্রহণযোগ্যতা—সব মিলিয়ে এটি ছিল একটি গভীর মানবিক মুহূর্ত।

এটিই ছিল প্রথম এবং একমাত্র সময়, যখন হেমা মালিনীর পরিবারের কেউ ধর্মেন্দ্র প্রথম বাড়িতে প্রবেশ করেছিলেন।

প্রয়াত অভিনেতার জীবনের মতোই তাঁর পরিবারেও ছিল নাটক, টানাপোড়েন ও বহু স্তরের আবেগ। কিন্তু এর মাঝেও মানবিকতা, সম্মান এবং সম্পর্কের মূল্যবোধ কখনোই হারিয়ে যায়নি।

ধর্মেন্দ্রের মৃত্যুর পর এই ঘটনাটি আবার সামনে আসছে—যা প্রমাণ করে, তাঁর পরিবারে দ্বন্দ্ব থাকলেও ভাঙন কখনোই পুরোপুরি তৈরি হয়নি। দুই পরিবারের সন্তানরা পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল—এটাই ধর্মেন্দ্র অসম্ভব পারিবারিক বোধের সাফল্য।