ধর্মেন্দ্রের স্মরণ সভা: সানি-ববির আয়োজন থেকে অনুপস্থিত হেমা মালিনী ও দুই কন্যা

ধর্মেন্দ্রের স্মরণ সভা: সানি-ববির আয়োজন থেকে অনুপস্থিত হেমা মালিনী ও দুই কন্যা

বলিউডের কিংবদন্তি তারকা ধর্মেন্দ্রকে স্মরণে মুম্বাইয়ে আয়োজিত প্রধান প্রার্থনা সভায় পরিবারের প্রায় সকল সদস্য উপস্থিত থাকলেও অনুপস্থিত ছিলেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী অভিনেত্রী হেমা মালিনী এবং তাদের দুই মেয়ে ঈশা দিওল ও অহনা দিওল।

বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এই সভা ঘিরে বলিউড মহলে যেমন ছিল আবেগ, তেমনি ছিল আলোচনা বিশেষ করে হেমার অনুপস্থিতিকে কেন্দ্র করে।

প্রধান প্রার্থনা সভায় উপস্থিত ছিলেন ধর্মেন্দ্রের প্রথম স্ত্রী প্রকাশ কৌর এবং তার দুই ছেলে সানি দিওল ও ববি দিওল। তারা মুম্বাইয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রার্থনা সভার আয়োজন করেন। সেখানে উপস্থিত হন পরিবার-পরিজনের অনেকেই, আসেন বলিউডের সহকর্মীরাও।

অনুষ্ঠানে ধর্মেন্দ্রের দীর্ঘ অভিনয়জীবন ও ব্যক্তিত্বের নানা দিক স্মরণ করা হয়। এই আয়োজনে প্রথম স্ত্রী এবং তার সন্তানদের উপস্থিতি ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু সবার নজর ছিল অন্য দিকে দ্বিতীয় স্ত্রী হেমা মালিনী ও তার দুই মেয়ের দিকেই, যারা কোনো সময়েই ভেন্যুতে দেখা যাননি।

সভার সময় ঘনিয়ে এলেও বাড়তে থাকে সংশয়। সাংবাদিক ও অতিথিদের অনেকেই ভাবছিলেন, পরিবারের অন্য অংশের সদস্যরাও হয়তো শোকসভায় যোগ দেবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, হেমা ও তার দুই কন্যা কেউই অনুষ্ঠানে যাননি।

ঠিক একই সময়ে, আলাদা দৃশ্য ধরা পড়ে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় একজন পুরোহিতকে প্রবেশ করতে দেখা যায় হেমা মালিনীর বাসভবনে। পরে জানা যায়, তিনি সেখানে স্বামী ধর্মেন্দ্রের আত্মার শান্তির জন্য একটি বিশেষ পূজা-আর্চনার আয়োজন করেন।

ধর্মেন্দ্রের মৃত্যুর পর থেকেই হেমা মালিনী সামাজিক মাধ্যমে নিয়মিত স্মৃতিচারণ করেছেন। তবে প্রধান প্রার্থনা সভায় অনুপস্থিত থাকার কারণ সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানাননি।

তবে পরিবারের ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্রের বরাতে জানা যায়, অভিনেত্রী নিজের মতো করে, নিজের বাসভবনে স্বামীকে সম্মান জানিয়ে শান্তির পূজা আয়োজন করতে চেয়েছিলেন। সেই কারণেই তিনি প্রধান অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। এই ব্যক্তিগত পূজায় তার দুই মেয়ে ঈশা ও অহনাও উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। পূজার সময় সেখানে কোনো ক্যামেরা বা গণমাধ্যমকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

ধর্মেন্দ্রের জীবনে দুই পরিবার প্রথম স্ত্রী প্রকাশ কৌর ও দ্বিতীয় স্ত্রী হেমা মালিনী দীর্ঘদিন ধরেই বাইরের দুনিয়ার নজরে ছিল। তাদের সম্পর্ককে সাধারণত সম্মানজনক হলেও দূরত্বপূর্ণ বলে ব্যাখ্যা করা হয়। ধর্মেন্দ্র সবসময়ই দুই পরিবারকে সমানভাবে দেখাশোনা করার চেষ্টা করলেও তারা খুব কমই একসঙ্গে জনসম্মুখে আসতেন। সানি ও ববির সঙ্গে হেমা বা ঈশার সম্পর্ক নিয়ে বরাবরই বলিউডে নানা গুঞ্জন থাকে। তবে প্রকাশ্যে কখনো বড় কোনো বিরোধের কথা বলেননি কেউই। তবুও ধর্মেন্দ্রের প্রধান স্মরণ অনুষ্ঠানে হেমা ও তার কন্যাদের অনুপস্থিতি বিষয়টিকে নতুন করে আলোচনা তুলেছে। অনেকে মনে করছেন, হয়তো এটি পারিবারিক দূরত্বের প্রকাশ; আবার অনেকেই বলছেন, হয়তো হেমা মালিনী নিজের মতো করে স্মৃতি রক্ষার পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন।

ধর্মেন্দ্র ভারতের চলচ্চিত্র ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায়। তার প্রয়াণে দুই ঘরেই শোক নেমেছে। তবে শোক প্রকাশের ধরন যে আলাদা তা বৃহস্পতিবারের ঘটনাই স্পষ্ট করেছে। একদিকে, প্রথম স্ত্রীর পরিবারের বৃহৎ আয়োজন; অন্যদিকে, দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরোয়া পূজা দুটিই ছিল তাকে শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যম। এই দুই ভিন্ন আয়োজনই বলিউড মহলে আলোচনা বাড়িয়েছে সম্পর্কের টানাপোড়েন কি নতুন করে মাথাচাড়া দিচ্ছে, নাকি এটি কেবলই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের ফল? এ বিষয়ে পরিবারের কেউ আনুষ্ঠানিক মন্তব্য না করলেও ধর্মেন্দ্রকে নিয়ে শোক ও শ্রদ্ধা প্রকাশে দুই পক্ষই একমত।

প্রার্থনা সভায় উপস্থিত অন্যান্য অভিনেতা ও পরিচালকরা বলেন, ধর্মেন্দ্র ছিলেন বলিউডের সবচেয়ে বিনয়ী ও জনপ্রিয় তারকাদের একজন। ‘শোলে’, ‘অমর আকবর অ্যান্টনি’, ‘চুপকে চুপকে’ এমন অসংখ্য চলচ্চিত্রে তার কাজ ভারতীয় সিনেমাকে সমৃদ্ধ করেছে। তার মৃত্যুতে ভারতীয় সিনেমায় যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা পূরণ করা অসম্ভব এমন মন্তব্যও করেন অনেকেই।