সুযোগ পেলে আগের শ্রাবন্তীকে একটু সেলফিশ হতে বলতাম: শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়
অন্য সময় প্রাইম: দেবী চৌধুরানী’ হিসেবে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়ে প্রথম ঠিক কী মনে হয়েছিল?
শ্রাবন্তী: নিজেকে খুব লাকি মনে হয়েছিল। সচরাচর তো মহিলাকেন্দ্রিক সিনেমাই কম হয়, সেখানে এ রকম একটা চরিত্র, অফারটা পেয়ে খুব এক্সাইটেড হয়েছিলাম। ঐতিহাসিক ঘটনাক্রমের অবলম্বনে এখন দাঁড়িয়ে সিনেমা তৈরি করা ও সেখানে দেবী চৌধুরানী’ হিসেবে কাজের সুযোগে সত্যিই নিজেকে ভাগ্যবতী বলেই মনে হয়েছিল।
অন্য সময় প্রাইম: নারীকেন্দ্রিক সিনেমা কম হওয়ার কী কারণ রয়েছে বলে মনে করেন?
শ্রাবন্তী: পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার জেরে। ইতিহাসও তাই বলছে। এমনটাই হয়ে এসেছে। মহিলা অভিনেত্রীরাও সমান পরিশ্রম করলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরুষকেন্দ্রিক ছবি হয়। এখন অবশ্য খানিক নারীকেন্দ্রিক বিভিন্ন কাজও হচ্ছে। ‘বিনোদিনী’-র মতো কিছু কাজ হলেও সংখ্যাটা বেশ কম। তার মাঝে আমরাও নিজেদের অভিনয় প্রতিভা আরও ভালো করে সামনে তুলে ধরার খানিক সুযোগ পাচ্ছি, সে জন্যই নিজেকে লাকি বললাম।
অন্য সময় প্রাইম: এমন গুরুত্বপূর্ণ একটা চরিত্র, বিশেষ কী ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?
শ্রাবন্তী: প্রথমবার গল্পের ন্যারেশনটা শুনেই ভালো লেগেছিল। বাংলার ব্যান্ডিট কুইন তথা অন্যতম স্বাধীনতা সংগ্রামীর গল্প, অন্য ধরনের কাজ বলে সেটা আরও মন ছুঁয়েছিল। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখার পাশাপাশি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আকার্ইভে যে সমস্ত তথ্য, ঘটনাক্রমের উল্লেখ রয়েছে সেগুলোকে এক জায়গায় এনেছেন পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্র।
পাশাপাশি ঘোড়-সওয়ারি থেকে তরোয়াল চালানো, ছবিটাতে অনেক কিছু করার ছিল। ফাইট সিক্যুয়েন্সও ছিল প্রচুর। তরোয়ালের ট্রেনিংয়ের সময়ে হালকা চোটও পাই, তবে সে সব নিয়ে না ভেবে কাজটা করেছি। কারণ, এ ভাবে দর্শক আগে কখনও আমাকে দেখেননি। তাই বাড়তি উৎসাহ ছিল। গোটা শুটিংপর্বে নিজেকে যেন নতুন করে এক্সপ্লোর করতে পেরেছি। আশা রাখি দর্শকরাও সিনেমাতে সেটা দেখতে পাবেন। পুরুলিয়া, বোলপুর-সহ বাংলার বিভিন্ন জায়গার জঙ্গলে অনেক দিন ধরে শুটিংপর্বও চলেছে।
অন্য সময় প্রাইম: আপনার প্রায় দু’দশকের অভিনয় জার্নি, তার পরও নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ কেন অনুভব করেন?
শ্রাবন্তী: অভিনয় জগতটাই তো আমার সবকিছু। ধ্যান, জ্ঞান, ভালোবাসা, প্রেম, সবকিছু। এটা নিয়েই ঘুমাই ও জাগি। তাই, এটা না থাকলে তো আমিও নেই। সে জন্যই দর্শকদের সামনে নিজেকে নতুন ভাবে প্রমাণ করার তাগিদ বরাবর অনুভব করি। আমার যখন আট-নয় বছর বয়স তখন থেকে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কেরিয়ার শুরু করেছি। তার পরে একটা লম্বা যাত্রাপথ। এই পথচলা নিয়ে আমি থাকতে, বাঁচতে চাই।
অন্য সময় প্রাইম: আজকের শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় যদি দু’দশক আগের শ্রাবন্তীকে কোনও পরামর্শ দেওয়ার সুযোগ পায়, কী বলতেন?
শ্রাবন্তী: শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় বরাবরই খুব ইমোশনাল। নিজেরটা নিয়ে খুব কমই ভেবেছি। এ বার একটু ভাবছি। তাই যদি আগের নিজেকে পরামর্শ দেওয়ার সুযোগ পেতাম, বলতাম নিজেরটা একটু ভাবা উচিত। মাঝেমধ্যে একটু সেলফিশ হওয়া উচিত। তবে পাস্ট ইজ় হিস্ট্রি। কারণ যেটা হয়ে গিয়েছে, সেই টাইমলাইনে ফিরে গিয়ে বিষয়গুলো বদলাতে পারব না। সে জন্য আমি আর অতীতকে কখনও বর্তমানে নিয়ে আসি না। আমার কাছে প্রেজেন্টই সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
অন্য সময় প্রাইম: সামনেই পুজো, এ বারের স্পেশাল কী প্ল্যান?
শ্রাবন্তী: সিনেমা নিয়ে ব্যস্ততা থাকবে। সঙ্গে কিছু পুজো পরিক্রমার অংশ হওয়ার কমিটমেন্ট রয়েছে। এ ছাড়া পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সময় কাটানোর প্ল্যান রয়েছে। আমি যে আবাসনে থাকি সেখানে খুব বড় করে পুজো হয়, ওখানে যতটা সম্ভব সময় কাটাই। আর সঙ্গে জমিয়ে খাওয়াদাওয়া করব।
অন্য সময় প্রাইম: পুজো মানেই তো নস্ট্যালজিয়াও, কোন বিশেষ স্মৃতি মনে পড়ে?
শ্রাবন্তী: ছোটবেলায় পুজো নিয়ে আলাদা রকম উৎসাহ ছিল। তাই ছোটবেলার কথা বললে আমার কাছে সব পুজোর স্মৃতিই স্পেশাল। আমার এখনও দারুণ লাগে পুজো আসার আগে থেকে আকাশের পরিবর্তন দেখে। বাড়িতে থাকলে সন্ধের সময়ে চুপ করে বসে সূর্যাস্ত দেখি। আকাশটা দেখতে কী অদ্ভুত যে ভালো লাগে সেই সময়ে। সঙ্গে চারিদিকে মণ্ডপ তৈরির প্রস্তুতি, রাস্তায় মানুষজনের কেনাকাটার ভিড়, যেন এক্সসাইটমেন্ট আরও বাড়িয়ে দেয়। পুজোর চারটে দিন তো চোখের নিমেষে কেটে যায়, তার আগের সময়টাই স্পেশাল।
অন্য সময় প্রাইম: পুজোয় একসঙ্গে চারটে বাংলা ছবি রিলিজ় করছে, তাতে কী বক্স অফিস ফলাফলে কোনও প্রভাব পড়তে পারে?
শ্রাবন্তী: পুজো আমাদের সব থেকে বড় উৎসব। বিশ্বের সমস্ত জায়গার বাঙালিরা মা আসার অপেক্ষায় থাকেন, এই সময়ে। এই আবহে মানুষ অনেক বেশি সিনেমাও দেখেন। আর বক্স অফিস ফলাফলের ভিত্তিতে আমার মনে হয় মা আমাদের সবাইকেই আশীর্বাদ করবেন। ব্যক্তিগত ভাবে সমস্ত দর্শকদের চারটে বাংলা ছবিই দেখতে বলব। তা হলেই বাংলা সিনেমার জয় হবে।