চট্টগ্রাম চেম্বারের লোগোছবি: চেম্বারের ফেসবুক থেকে

চট্টগ্রাম চেম্বারে কত পদে ভোট হবে তা চূড়ান্ত হয়নি, প্রশাসক বদল

প্রায় এক যুগ পর চট্টগ্রাম চেম্বারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে ভোটের আবহ। ২০১৩ সালের পর এবার সরাসরি নির্বাচনে ভোট দেওয়ার আশা দেখছেন ব্যবসায়ীরা। ভোটের এই আবহের মধ্যেই পরিবর্তন করা হয়েছে চেম্বারের প্রশাসককে। গত সোমবার চেম্বারের প্রশাসক হিসেবে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত কমিশনার (সার্বিক) মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর আগে এই দায়িত্বে ছিলেন বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা।

প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বের এক বছর পূর্ণ হওয়ায় আনোয়ার পাশাকে পরিবর্তন করা হয়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, নির্বাচন দিতে বারবার বিলম্ব করেছেন প্রশাসক। চেম্বারে প্রশাসক বসানোর মূল উদ্দেশ্য ছিল, যত দ্রুত সম্ভব গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে নির্বাচিত কমিটির হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করা। কিন্তু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা ও ভোটার তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে তিনি ব্যবসায়ীদের মতামতকে প্রাধান্য দেননি।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রশাসকের দায়িত্ব নেন তৎকালীন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা। প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণের ১১ মাস পর গত ১১ আগস্ট চট্টগ্রাম চেম্বারের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ১ নভেম্বর চট্টগ্রাম ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে অনুষ্ঠিত হবে চেম্বারের নির্বাচন।

এদিকে ভোট নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। চেম্বারে ঠিক কত পদে নির্বাচন হবে, তা নিয়েও রয়েছে অস্পষ্টতা। নির্বাচন বোর্ডও এ বিষয়ে সরাসরি কিছু বলছে না। চেম্বারের সংঘস্মারক ও বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা নিয়ে এই জটিলতা দেখা দিয়েছে। ফলে চেম্বারে ২৪ নাকি ১৮ পদে নির্বাচন হবে—তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

তৃণমূল ব্যবসায়ীরা চেম্বারবিমুখ হয়ে গেছেন। তাঁদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করে চেম্বারের নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। নির্বাচন পদ্ধতিকেও একটি সংশয়ের মধ্যে রেখে প্রশাসক বিদায় নিলেন
আমীর হুমায়ূন মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক সভাপতি, চট্টগ্রাম চেম্বার

জানতে চাইলে চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমীর হুমায়ূন মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, তৃণমূল ব্যবসায়ীরা চেম্বারবিমুখ হয়ে গেছেন। তাঁদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করে চেম্বারের নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। নির্বাচন পদ্ধতিকেও একটি সংশয়ের মধ্যে রেখে প্রশাসক বিদায় নিলেন। এগুলো স্পষ্ট করা দরকার ছিল। ভোটারের বিষয়েও অনেক প্রশ্ন রেখে গেলেন তিনি।

নির্বাচন দিতে ১১ মাস

চেম্বার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম আলোর সঙ্গে কয়েক দফা নির্বাচন নিয়ে কথা হয় মুহাম্মদ আনোয়ার পাশার। শুরুতে এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি। এরপর ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়, দুই শ্রেণির ভোটার বাদ দিতে। এরপর আগস্টে নির্বাচনের পরিকল্পনা হয়। সেটিও হয়নি। এর মধ্যে কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ানো হয় চেম্বার প্রশাসকের।

নির্বাচন আয়োজনে বিলম্বের কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ হন প্রশাসকের ওপর। চেম্বারের সংঘস্মারক অনুযায়ী, সদস্য নবায়নের শেষ সময় ৩০ সেপ্টেম্বর। কিন্তু প্রশাসকের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ১ সেপ্টেম্বরের আগে সদস্যপদ নবায়ন না করলে ভোটার কিংবা প্রার্থী হওয়া যাবে না। তাতে কমে গেছে ভোটারসংখ্যা। গত রোববার চেম্বার প্রাথমিক ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে। তাতে মোট ভোটার ৬ হাজার ৭৬৫ জন। অথচ চেম্বারে বর্তমান সদস্য ১৩ হাজার ৬৬৯ জন। অর্থাৎ ৬ হাজার ৯০৪ জন সদস্য ভোটার হওয়ার সুযোগ পাননি।

নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে সংশয়

চট্টগ্রাম চেম্বারের সংঘস্মারক অনুযায়ী, চেম্বারে চার ধরনের সদস্য রয়েছে—সাধারণ, সহযোগী, টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ। চেম্বারে ভোট হয় ২৪টি পরিচালক পদে। এর মধ্যে ১২ জন পরিচালক সাধারণ, ৬ জন সহযোগী, ৩ জন টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ৩ জন পরিচালক ট্রেড গ্রুপ থেকে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। তবে প্রাথমিক ভোটার তালিকায় টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপের প্রতিনিধিদের নাম নেই। ফলে বিদ্যমান বিধানে নির্বাচনের আগেই পরিচালক পদ কমে ১৮টি হয়ে গেছে।

চেম্বার সূত্রে জানা গেছে, টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে কয়েক দফা চিঠি–চালাচালি হয়েছে। সংগঠনগুলো অকার্যকর হলে তাঁদের ভোট দেওয়ার সুযোগ না রাখার কথা জানায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেই অনুযায়ী চারটি টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও চারটি ট্রেড গ্রুপকে অকার্যকর ঘোষণা করা হয়। তবে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, যে ৮টি সংগঠনকে অকার্যকর ঘোষণা করা হয়েছে, সেটি কিসের ভিত্তিতে, তার কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

এ ছাড়া ভোটের প্রক্রিয়া কী হবে, তা নিয়েও সংশয়ে রয়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা অনুযায়ী, প্রতিটি বাণিজ্য সংগঠনে একটি নির্বাচিত নির্বাহী কমিটি বা পরিচালনা পর্ষদ থাকবে। ফেডারেশন ছাড়া অন্য সব বাণিজ্য সংগঠনের ক্ষেত্রে এই কমিটির সদস্যসংখ্যা তাদের নিজস্ব সংঘবিধি অনুযায়ী ঠিক করা হবে। চেম্বারের সংঘবিধি অনুযায়ী, এ সংখ্যা ২৪।

জানতে চাইলে নির্বাচনী বোর্ডের প্রধান ও অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মনোয়ারা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখনো আপিলের সুযোগ আছে। সুতরাং ১৮ নাকি ২৪ পদে ভোট হবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। সংঘবিধি অনুযায়ী, পরিচালক পদে ভোট হবে। তাঁরাই সভাপতি ও দুই সভাপতি নির্বাচিত করবেন। এরপরও আমরা মন্ত্রণালয়ে স্পষ্টতা চেয়ে চিঠি দিয়েছি।’