দুর্জয় চৌধুরী

সন্ধ্যায় আটক, ভোরে থানাহাজতে ঝুলছিল যুবকের লাশ

কক্সবাজারের চকরিয়া থানাহাজত থেকে দুর্জয় চৌধুরী (২৭) নামের এক যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, হাজতখানার গ্রিলের রডের সঙ্গে পরনের শার্ট গলায় প্যাঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে ৪টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ। দুর্জয় চকরিয়া পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড ভরামুহুরী হিন্দুপাড়ার কমল চৌধুরীর ছেলে। তিনি চকরিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি করতেন। তার বিরুদ্ধে থানায় অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করেন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষিকা। এদিকে দুর্জয়কে ‘পরিকল্পিতভাবে’ হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে জড়িতদের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন স্থানীয়রা।

চকরিয়া থানা সূত্রে জানা যায়, চকরিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খানম ২ লাখ ৮৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে দুর্জয় চৌধুরীর বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার রাতে থানায় অভিযোগ দেন। অভিযোগ দেওয়ার সময় দুর্জয় প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে থানায় ছিলেন। এদিকে দুর্জয় চৌধুরীর পরিবারের লোকজন জানান, প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খানম দুর্জয়কে সঙ্গে করে থানায় নিয়ে গিয়ে পুলিশে হস্তান্তর করেন এবং থানাহাজতে রাখার জন্য ওসিকে চাপ সৃষ্টি করেন।

চকরিয়া থানার ওসি শফিকুল ইসলাম বলেন, রাত ৮টার দিকে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা দুর্জয়কে সঙ্গে নিয়ে থানায় আসেন। এ সময় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুর্জয় আমার কাছে দায় স্বীকার করলে তাকে ৫৪ ধারায় আটক ও অভিযোগ গ্রহণ করে এএসপি সার্কেলসহ আমরা রাতে অভিযানে বেরিয়ে যাই। পরে ?রাত ১২টা থেকে ভোর ৪টার মধ্যে থানাহাজতে দুর্জয় নিজের গায়ের শার্ট গলায় প্যাঁচিয়ে দরজার গ্রিলে ঝুলে আত্মহত্যা করেন। এদিকে রাতের অভিযানে গ্রেফতার অন্য আসামিকে ভোরে থানাহাজতে নিয়ে গেলে দুর্জয়ের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পায় পুলিশ। পরে চকরিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রূপায়ণ দেবের উপস্থিতিতে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়।

চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রূপায়ণ দেব বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে চকরিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দুর্জয়কে সঙ্গে নিয়ে তার কাছে যান। এ সময় জিজ্ঞাসাবাদে দুর্জয় চৌধুরী টাকা আত্মসাতের পর খরচ করে ফেলার কথা স্বীকার করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য থানার ওসিকে ফোনে জানান।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বলেন, একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে দুর্জয়ের সুরতহাল করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুলিশের কারও গাফিলতি পরিলক্ষিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে দুর্জয়কে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে চকরিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খানমসহ জড়িতদের বিচার দাবি করে শুক্রবার বিকালে থানা সেন্টার এলাকায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন স্থানীয়রা। চকরিয়া কেন্দ্রীয় কালীমন্দির দুর্গাপূজা উদ্যাপন পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এনামুল হক, ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা কফিলউদ্দিন ফারুকীসহ সনাতন ধর্মের নেতারা বক্তব্য দেন।