মব সৃষ্টি করে মৎস্য কর্মকর্তাকে আটকে রাখলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা
যশোরের কেশবপুর উপজেলার মঙ্গলকোট ইউনিয়নের একটি রাস্তা নির্মাণে নদীপাড়ের মাটি কেটে ব্যবহার করায় ইউনিয়ন প্রশাসক বাধা দেওয়ায় তাকে মব সৃষ্টি করে অবরুদ্ধ করা হয়। পরবর্তীতে পুলিশ ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) শরীফ নেওয়াজ তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।
এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলকোট ইউনিয়নের মঙ্গলকোট ব্রিজের মাথা থেকে পূজামণ্ডপ পর্যন্ত সাড়ে চারশ ফুট দুই লাখ টাকা ব্যয়ে ইট বিছানো রাস্তার কাজ চলছে। কাজটি করছেন ওই ইউনিয়নের তিন নাম্বার ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কামরুল ইসলাম।
সোমবার দুপুরের দিকে তিনি ওই রাস্তায় ব্যবহার করার জন্য মঙ্গলকোট ইউনিয়ন পরিষদের সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িভদ্রা নদীপাড়ের গ্রাম রক্ষা বাঁধের মাটি কেটে পাওয়ার টিলারে করে বহন করছিলেন।
মঙ্গলকোট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা প্রশাসক ও উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা সুদীপ কুমার বিশ্বাস বাঁধের মাটি কাটতে বাধা দেন। এ খবর জানতে পেরে ইউপি মেম্বার কামরুল ইসলাম তার লোকজনদের নিয়ে গিয়ে প্রশাসক সুদীপ কুমার বিশ্বাসকে অবরুদ্ধ করে ফেলেন। তখন তাকে হুমকি দেওয়া হয় নদীর মাটি কাটতে না দিলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাকে বের হতে দেওয়া হবে না এবং ইউনিয়ন পরিষদে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।
পরে প্রায় এক-দেড়শ মানুষ সেখানে সমবেত হয়ে ওই প্রশাসককে অবরুদ্ধ করে ফেলেন। এ সময় মঙ্গলকোট ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোস্তাক হোসেনসহ বিএনপির নেতাকর্মীরা উপস্থিত হয়ে হট্টগোল করতে থাকেন।
এ পরিস্থিতিতে প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমিকে ঘটনাস্থলে পাঠান এবং তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।
সরেজমিন মঙ্গলবার মঙ্গলকোট ইউনিয়নের ওই রাস্তাটি পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, মঙ্গলকোট পূজামণ্ডপের পাশ থেকে ইটের ১০০ ফুট রাস্তা তৈরি হয়েছে। সেখানে রাখা ইট ২ নাম্বার বলে দেখা যায়। তাছাড়া ওই রাস্তায় ইটের নিচে কোনো বালি ব্যবহার করা হয়নি। এলাকাবাসী অভিযোগ করেন রাস্তাটি অত্যন্ত নিম্নমানের করে তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়াও বুড়িভদ্রা নদীরপাড়ে গিয়ে দেখা যায় প্রায় ৩০ ফুট এলাকার নদীপাড়ের মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে।
নদীপাড়ের পাশের বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, কামরুল মেম্বারসহ বিএনপির ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি মোস্তাক হোসেন ইউনিয়ন পরিষদের সামনে উপস্থিত ছিলেন। এ ঘটনার পরে সহকারী কমিশনার ভূমি ও পুলিশ এসে প্রশাসককে উদ্ধার করে নিয়ে যান।
এ ব্যাপারে মঙ্গলকোট ইউনিয়নের ইউপি সদস্য কামরুল ইসলাম জানান, রাস্তার কাজের প্রয়োজনে নদীর মাটি নেওয়া হচ্ছিল। এর আগেও ওখান থেকে সাধারণ মানুষ নদীর মাটি কেটে নিয়ে গেছেন। সেক্ষেত্রে তাদের দোষ না হলে তার কেন দোষ হচ্ছে। তাছাড়া সরকারি কাজেই ওই মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে এই মাটি ব্যবহার করাই তিনি কোনো অন্যায় হয়েছে বলে মনে করেন না। সেখানে প্রশাসককে অবরুদ্ধ করার কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে তিনি দাবি করেন। এই ইউপি সদস্য ওই রাস্তা নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোস্তাক হোসেনকে ফোন করা হলে তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না বলে দাবি করেন। তিনি এ ঘটনা সম্পর্কে জানেন না বলেও তার দাবি।
এ ব্যাপারে মঙ্গলকোট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা প্রশাসক ও উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা সুদীপ বিশ্বাস বলেন, ইউপি সদস্যকে জোরপূর্বক মাটি কেটে নিতে বাধা দেওয়ায় তিনি চরম অপমানিত হয়েছেন। এ কারণে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরিষদে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এমনকি তাকে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার হুমকি দেওয়া হয়।
মৎস্য কর্মকর্তা আরও বলেন, তিনি ওখানে প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তিনি এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এ ব্যাপারে কেশবপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেকসোনা খাতুন বলেন, মৎস্য কর্মকর্তার অভিযোগ পেয়ে ওই ইউপি সদস্যকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কেন নদীর মাটি কাটা হয়েছে এবং প্রশাসককে কেন অবরুদ্ধ করে রাখা হলো এবং তাকে ভয়-ভীতি হুমকি দেখানো হলো- জানতে চেয়ে তিন কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব পাওয়া গেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।