নিখোঁজ ইব্রাহিমের সন্ধান ও তাঁকে তুলে নেওয়ার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে নড়াইল সদর উপজেলার শেখহাটি বাজারেছবি: প্রথম আলো

নড়াইলে ‘ডিবি পরিচয়ে’ তুলে নেওয়ার তিন দিনেও যুবকের সন্ধান পায়নি পরিবার

নড়াইল সদর উপজেলায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে এক যুবককে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত সোমবার ভোরে উপজেলার শেখহাটি ইউনিয়নের তপনভাগ গ্রামের বাড়ি থেকে ওই যুবককে তুলে নেওয়ার পর আজ বুধবার পর্যন্ত তাঁর সন্ধান পায়নি পরিবার। পূর্বশত্রুতার জের ধরে ‘ডিবি পুলিশের’ নাম করে প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁকে অপহরণ করেছে বলে অভিযোগ পরিবারের।

আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে শেখহাটি বাজারে এক সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগের কথা জানান পরিবারের সদস্যরা। নিখোঁজ ওই যুবকের নাম ইব্রাহিম মোল্যা (৪২)। তিনি তপনভাগ গ্রামের আবদুর রহমান মোল্যার ছেলে এবং পেশায় একজন কৃষক।

সংবাদ সম্মেলন শেষে নিখোঁজের সন্ধান ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন তাঁরা। এতে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। এ সময় বক্তব্য দেন নিখোঁজ ইব্রাহিমের স্ত্রী ইরানী খানম, ভাই রুহুল আমিন, চাচা ফজলে করীম, শেখহাটি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বাবর আলী, ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মুরাদ প্রমুখ।

এ বিষয়ে জেলা গোয়েন্দা শাখার পুলিশ পরিদর্শক শাহ্ দারা খান বলেন, ওই দিন তপনভাগ এলাকায় ডিবি পুলিশ কোনো অভিযান পরিচালনা করেনি। সেখান থেকে কাউকে আটকও করা হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিখোঁজ ইব্রাহিমের স্ত্রী ইরানী খানম। তিনি বলেন, গত সোমবার ভোররাতে সাত থেকে আটজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাঁদের দরজা ধাক্কাতে থাকে। পরে ইব্রাহিম মোল্যা দরজা খুলে দেন। এ সময় ‘মামলার প্রয়োজনে ডিবি অফিসে যেতে হবে’ জানিয়ে তাঁকে তারা সঙ্গে করে নিয়ে যায়। পরে সকাল ৯টার দিকে ডিবি কার্যালয়ে ও থানায় গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, সেখানে ইব্রাহিম মোল্যাকে আনা হয়নি। পরে এ ঘটনায় তাঁরা থানায় অভিযোগ করেন।

ইব্রাহিমের স্ত্রী ইরানী খানম, ভাই রুহুল আমিন ও চাচা ফজলে করীম বলেন, বাড়ির পাশের একটি জলমহাল নিয়ে স্থানীয় প্রতিপক্ষের হামলায় ২০১৭ সালে ইব্রাহিমের বাবা হত্যার শিকার হন। এ ঘটনায় একই এলাকার ইউসুফ মোল্যা, রসুল মোল্যাসহ কয়েকজনকে আসামি করে নড়াইল সদর থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলার বাদী এবং ১ নম্বর সাক্ষী ছিলেন ইব্রাহিম। এ ছাড়া মামলার আসামিদের সঙ্গে ইব্রাহিমদের আরও একাধিক মামলা ও বিরোধ চলমান রয়েছে। মাঝেমধ্যে ইব্রাহিমকে প্রতিপক্ষরা হুমকিধমকি দিত।

অভিযোগ করে তাঁরা বলেন, ‘এসব বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষরা ভাড়া করে এলাকার বাইরে থেকে লোক এনেছে এবং তাদের দিয়ে ডিবি পুলিশের মিথ্যা পরিচয় প্রদান করে ইব্রাহিমকে তুলে নিয়ে আটকে রেখেছে। বাইরে থেকে লোক এনেছে, যাতে তাঁরা চিনতে না পারেন। ইব্রাহিমের কোনো ধরনের ক্ষতি হওয়ার আগে প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি, তাঁর অবস্থান শনাক্ত করে দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করা হোক। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের কঠিন শাস্তির দাবি করছি।’

ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মুরাদ বলেন, ‘যে জলমহালের ইজারাকে কেন্দ্র করে ইব্রাহিমের বাবাকে হত্যা করেছিল প্রতিপক্ষরা, সেই জলমহালটি বর্তমানে ইজারা নিয়ে ভোগ করছিল ইব্রাহিম। এসব নিয়ে সম্প্রতি ইব্রাহিমকে প্রতিপক্ষরা হুমকিও দিয়েছিল। তাই আমাদের ধারণা, এই কারণেই তাকে গুম করা হয়েছে। আমরা তাকে দ্রুত ফেরত পেতে চাই।’

এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে ইব্রাহিমের বাবার হত্যা মামলার আসামিদের কয়েকজনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িগুলো পুরুষশূন্য। তাঁদের মুঠোফোন নম্বর চাইলেও দিতে অস্বীকৃতি জানান নারীরা। এ কারণে অভিযুক্তদের কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে বুধবার দুপুরে নড়াইল সদর থানা-পুলিশের কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ইব্রাহিম নিখোঁজের ঘটনায় তার স্ত্রী থানায় একটি অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।