খুলনায় রেলের ভূমির ভাড়া বাড়ল তিন গুণ, আন্দোলনের হুঁশিয়ারি ব্যবসায়ীদের
খুলনায় রেলওয়ের ভূমির ভাড়া তিন গুণের বেশি বাড়ানো হয়েছে। এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আজ বুধবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ‘রেল ভূমি ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ’ এ ঘোষণা দেয়। ১৮টি ব্যবসায়ী সংগঠনের এই জোটের সবাই রেলের ভূমি ব্যবহার করে ব্যবসা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা জানান, রেলওয়ের ভূমির প্রতি বর্গফুট ৭০ টাকা ভাড়া একলাফে ২০০ টাকা করা হয়েছে। ভ্যাট, আয়করসহ যা ২৪০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এতে যে দোকানের ভাড়া ৫০ হাজার টাকা ছিল, তা এখন ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা হয়েছে। ছোট্ট যে দোকানের ভাড়া ১০ হাজার টাকা ছিল, সেটা বেড়ে ৩৪ হাজার টাকা হয়েছে। এত ভাড়া পরিশোধের সক্ষমতা তাঁদের নেই। এটা কার্যকর হলে সবাই লোকসানের মুখে ব্যবসা ছাড়তে বাধ্য হবেন।
ব্যবসায়ীরা বলেন, কোনো ধরনের শুনানি ছাড়া তিন গুণ ভাড়া বাড়ানো অন্যায়। এতে দীর্ঘদিন ধরে রেলওয়ের জমিতে ব্যবসা করা হাজার হাজার প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। তাঁরা ‘অযৌক্তিক’ ভাড়া প্রত্যাহারের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধন কর্মসূচির ঘোষণা দেন। সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হলে রেলভবন ঘেরাও কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ‘রেল ভূমি ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ’–এর সদস্যসচিব আবু সাঈদ। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন পরিষদের আহ্বায়ক ও খুলনা চেম্বার অব কমার্সের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শরীফ আতিয়ার রহমান ও যুগ্ম আহ্বায়ক ও খুলনা চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মুনীর আহমেদ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০১৩ সালে আগের ১৪ টাকার পরিবর্তে রেল ভূমির প্রতি বর্গফুটের ভাড়া ২৫ টাকা করা হয়। এরপর ভাড়া বাড়িয়ে ৫০ টাকা ও ২০২১ সালে ৭০ টাকা করা হয়। মাত্র চার বছরের ব্যবধানে সেই ভাড়া বাড়িয়ে প্রতি বর্গফুট ২০০ টাকা করা হয়েছে। অথচ ভৈরব নদের তীরে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ব্যবসায়ীদের কাছে ভূমি ভাড়া দেয়। সেই ভূমির ভাড়া প্রতি বর্গফুট তিন টাকা। জেলা প্রশাসনও ব্যবসায়ীদের কাছে জমি ইজারা বা ভাড়া দেয়। তাদের ভাড়া প্রতি বর্গফুট ৩ টাকা ৮৮ পয়সা।
ব্যবসায়ীরা বলেন, রেলওয়ের পতিত ডোবা–নালা ভরাটের পর ব্যবহার উপযোগী করে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করছেন। ভূমির ওপর তৈরি স্থাপনাও তাঁদের নিজ খরচে নির্মাণ করা। শুধু ভূমি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েই প্রতি বর্গফুট ২০০ টাকা ভাড়া ধার্য করেছে রেলওয়ে। অথচ খুলনা শহরের বাণিজ্যিক এলাকাগুলোয় কোটি কোটি টাকা খরচ করে নির্মিত সুসজ্জিত ভবনের ভাড়া সর্বোচ্চ প্রতি বর্গফুট ৫০ টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ ও কাঁচাপাকা আড়তদার সমিতির সভাপতি আবদুর রব মাস্টার, খুলনা বড় বাজার সমন্বয় ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলামসহ স্টেশন রোড ব্যবসায়ী বহুমুখী কল্যাণ সমিতি, খুলনা ধান–চাল বণিক সমিতি, কাঁচা ও পাকা মাল আড়তদার সমিতি, খুলনা বিপণিকেন্দ্র, খুলনা জুট গুডস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, মানিক মিয়া শপিং কমপ্লেক্স, ডাক বাংলা সুপার মার্কেট, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মার্কেট, খুলনা বিপণিবিতান, শহীদ আবদুল জব্বার বিপণিবিতান, মশিউর রহমান বিপণিবিতান, চাঁদনি চক মার্কেট, দরবেশ চেম্বার মার্কেট, নান্নু সুপার মার্কেট, কবি কাজী নজরুল ইসলাম মার্কেট, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন মার্কেট, হার্ডওয়্যার মার্কেট অ্যাসোসিয়েশন ও খুলনা সাইকেল সেন্টার মার্কেটের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জানতে চাইলে রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, রেলের ভূমি উন্নয়ন কর নিয়ে মন্ত্রণালয়ে উচ্চপর্যায়ে কমিটি হয়েছিল। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সভা করে এই ভাড়া নির্ধারণ করেছেন। ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে এটা কার্যকর করতে বলা হয়। ২০২০ সালের রেলের যে ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা আছে, সেটার জন্য একটা সংশোধনী খসড়াও প্রস্তুত হয়ে গেছে। হয়তো কয়েক দিনের মধ্যে সেটা বাস্তবায়িত হবে। প্রাথমিকভাবে যেহেতু মানুষ খাজনা দেবেন, সে জন্য আগেই ভাড়ার বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।