যশোর অংশে ৫ বছরে অগ্রগতি ২ শতাংশ

যশোর অংশে ৫ বছরে অগ্রগতি ২ শতাংশ

যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের ৪৮ কিলোমিটার ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি নেই। পাঁচ বছরে যশোর অংশের ১৫ কিলোমিটারে মাত্র ২ শতাংশ কাজ হয়েছে। এর মূল কারণ জমি অধিগ্রহণ না হওয়া। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ দিকে হলেও জমি অধিগ্রহণ দীর্ঘসূত্রিতায় থমকে আছে এ মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ। এতে যাতায়াতে জনদুর্ভোগ বেড়েছে। প্রকল্পের আওতায় জোড়াতালি দিয়ে চলাচলের উপযোগী করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু ভারি বর্ষণে মহাসড়কে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মূল প্রকল্প ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডর (উইকেয়ার, ফেজ-১)-এর পরিচালক প্রকৌশলী নকিবুল বারী যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্পটি ২০২০ সালে অনুমোদন হলেও ডিজাইন ও ঠিকাদার নিয়োগ করতে প্রায় সাড়ে তিন বছর সময় লেগেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মূল চ্যালেঞ্জ ভূমি অধিগ্রহণ। যশোর অংশের ৫৩ একর জমি অধিগ্রহণে চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া গেছে। আরও ৭ একর জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। জেলা প্রশাসক জমি ও স্থাপনার ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করবে। তাদের চাহিদার ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করা হবে। জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হলে দ্রুত কাজ এগিয়ে নিতে পারব। আশা করছি ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হবে।

জানা যায়, ২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর একনেক সভায় ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডর (উইকেয়ার, ফেজ-১) যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের ৪৭ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার সড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণের প্রকল্প পাস হয়। চার হাজার ১৮৭ কোটি ৭০ লাখ টাকার এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। পরে প্রকল্পের ব্যয় ছয় হাজার ৬২৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ও মেয়াদ ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। এই প্রকল্পে মহাসড়কে একটি ফ্লাইওভার, চারটি সেতু, ৫৫ কালভার্ট, পাঁচটি ভেহিকুলার ওভারপাস, আটটি পেডিস্ট্রিয়ান ওভারপাস ও একটি রেলওয়ে ওভারপাস থাকবে। এছাড়া প্রকল্প করিডরকে স্মার্ট হাইওয়েতে রূপান্তরের লক্ষ্যে ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম ও অপটিক্যাল ফাইবার কেবল ডিজাইন করা হবে। পৌর এলাকার মধ্যে ৪ লেন এবং পৌর এলাকার বাইরে ৬ লেনে উন্নীত করা হবে মহাসড়কটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে তিনটি লটে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম লটে ঝিনাইদহ শহরের বাস টার্মিনাল থেকে কালীগঞ্জ মাহাতাব উদ্দিন কলেজ পর্যন্ত ১৫ দশমিক ৯ কিলোমিটার মহাসড়ক। দ্বিতীয় লটে কালীগঞ্জের মাহাতাব উদ্দিন কলেজ থেকে যশোর সদরের মুরাদগড় পর্যন্ত ১৫ দশমিক ৮ কিলোমিটার। সদরের মুরাদগড় থেকে যশোর শহরের চাঁচড়া মোড় পর্যন্ত তৃতীয় লটে ১৫ দশমিক ৮ কিলোমিটার রয়েছে। প্রায় ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পটির কাজের অগ্রগতি হতাশাজনক। প্রকল্পের যশোর অংশে কাজের অগ্রগতি মাত্র ২ শতাংশ। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় রয়েছে। যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সুজন সরকার বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে। এবার মৌজা মূল্য অনুযায়ী সরকারি নিয়মে জমির প্রাক্কলন ব্যয় নির্ধারণ করা হবে। প্রাক্কলন ব্যয় নির্ধারণের পর জমি ও স্থাপনার মালিককে ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করা হবে। টাকা পরিশোধের পর জমি প্রকল্পে হস্তান্তর করা হবে।

এদিকে, বেহাল মহাসড়ক বর্তমানে মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। বর্ষায় খানাখন্দে চরম ভোগান্তি হচ্ছে চলাচলকারীদের। মহাসড়কের তদারকি প্রতিষ্ঠান সড়ক ও জনপথ বিভাগ। কিন্তু মহাসড়কটি উন্নয়ন প্রকল্পে হস্তান্তর করায় প্রতিষ্ঠানটি এখন আরও উন্নয়ন করতে পারছে না। প্রকল্পের আওতায় জোড়াতালি দিয়ে চলাচলের উপযোগী করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রকৌশলী নকিবুল বারী বলেন, মহাসড়কের দুই পাশে সম্প্রসারণ কাজ সম্পন্ন না করে মূল সড়কের কাজ করা যাবে না। সড়ক সম্প্রসারণ করে পরিবহণ চলাচলের বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। এরপর মূল সড়কের কাজ করতে হবে।