ফাইল ছবি

চুয়াডাঙ্গায় সাবেক দুই নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চুয়াডাঙ্গা জেলা কমিটির আহ্বায়ক (সাবেক) আসলাম হোসেন অর্ক এবং সদস্য সচিব (সাবেক) সাফফাতুল ইসলামের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। কমিটির ১ ও ৫ নম্বর যুগ্ম-আহ্বায়ক তানভীর রহমান অনিক ও আবিদ হাসান রিফাত সংগঠনের মেসেঞ্জার গ্রুপে এ অভিযোগ করেন। মেসেঞ্জারে তাদের কথোপকথনের কিছু স্ক্রিনশট এই প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে।

আসলাম অর্ককে নিয়ে তানভির রহমান অনিক লেখেন, ‘কমিটি হওয়ার পর থেকেই জনাব অর্কের একটাই কথা ছিল ইনকাম করতে হবে। আমাকে অনেকবার অনেক কিছু বলেছে। প্রথম দিন শোনার পর আমার মনে হয়েছিল সে ঠিক হয়ে যাবে। এরপর যতদিন কথা বলেছি, একটাই কথা-ইনকাম। বিএনপি আওয়ামী লীগের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে। বলে, তুমিও নেও, আমাকেও দাও। কেরুতে ইনকামের রাস্তা বের করার কথা বলে।’ আর সাফফাতুল ইসলামকে নিয়ে তিনি লেখেন, ‘সাফফাত দর্শনায় আমাদের ওপর হামলাকারী একজনের কাছে ৫ লাখ টাকা চেয়েছিল। সে (ওই ব্যক্তি) আবার রেকর্ড করে আরেকজনকে দিয়েছে। আর বাকি জিনিস তো আছেই।’ অনিক আরও লেখেন, ‘আমার সঙ্গে কল দিয়ে খারাপ ব্যবহার করেছিল, কেন কেরুতে তাদের একসেস দিই না।’

আরেক মেসেজে অনিক লেখেন, ‘আমাদের বোকা বানিয়ে যারা টাকা খেল তারা এলাকায় চিটার-বাটপাড় হিসাবে চিহ্নিত হোক। তারা প্রতি পদে পদে লাঞ্ছিত হোক। যারা বালির ট্রাক আটকিয়ে টাকা নিল, তাদের কবর পানিতে হোক। যারা মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে টাকা নিল, তারা প্রতি পদে পদে প্রতারিত হোক। জুলাইকে বেচে যারা ভাতা তুলে খাবে, তাদের আল্লাহ এমন অসুখ দিক, ওই টাকা যেন তার কম পড়ে।’ অপর এক মেসেজে তিনি লেখেন, ‘আমাদেরকে কমিটিতে নিয়ে ব্যবহার করার ফল ভোগ করা লাগবে।’

মেসেঞ্জার গ্রুপে কথোপকথনের সত্যতা নিশ্চিত করে অনিক যুগান্তরকে বলেন, ‘শুধু তাই নয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে চুয়াডাঙ্গায় যে ৪৬ জন ১ লাখ টাকা করে পেয়েছেন, সেখানেও অনিয়ম হয়েছে। এই ৪৬ জন ১০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। তারা এমন কোনো কিছুই করেননি, তারপরও তারা টাকা পাবেন। ওদেরকে আসলাম অর্কই মনোনীত করেছে। যাদের অনেকেই সরাসরি আন্দোলনে ছিলেন না। এমনকি আমরা অনেককেই দেখিনি। এটা জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে বেইমানি।’

তিনি আরও বলেন, ‘যে কমিটিতে আমি ১ নম্বর যুগ্ম-আহ্বায়ক, সেখানে আমার মতামত নেওয়া হয়নি। এমনকি আমি জানতামই না। জুলাই যোদ্ধা নির্বাচনে আসলাম অর্কের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। সে ডিসির সঙ্গে মিলে লিস্ট করেছে। এখানে আমাদের নিজেদের মধ্যেই অনেক বিতর্ক রয়েছে। এসব বিষয়ে আমিই প্রতিবাদ করেছি। যারা ভাতা পাওয়ার যোগ্য না, তারা ভাতা পেলে এটা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ভাতা নেওয়ার মতো হবে।’

দুই নেতার (অর্ক ও সাফফাতুল) বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে একই কমিটির সদস্য আবিদ হাসান রিফাত ও সাব্বির হোসাইন বলেন, ‘আমরা কমিটিতে থাকলেও মূল্যায়ন করা হয়নি। আসলাম অর্কের কথাই শেষ কথা ছিল। কোনো বিষয়েই আমাদের মতামত নেওয়া হতো না। শুধু গ্রুপে জানাত এটা হচ্ছে বা হবে।’

তারা বলেন, ‘একটা সিন্ডিকেট ছিল ৪/৫ জনের। জেলার বিভিন্ন কমিটিতে তারাই থাকত বা আছে। সেখানে আমাদের কোনো স্থান নেই, তাহলে তো বৈষম্য থেকেই গেল। কেরুর শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন বন্ধ করে এই কমিটির নেতারা, নিশ্চয়ই সেখানে কোনো না কোনো স্বার্থ ছিল।’

আক্ষেপ করে রিফাত ও সাব্বির আরও বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গায় আহত জুলাই যোদ্ধার তালিকায় আসলাম অর্ক নিজেও আছেন। সে গুলিবিদ্ধ হয়েছে বা চরমভাবে নির্যাতিত হয়ে আহত হয়েছে, এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। বরং তার মিস গাইডের কারণে ৪ আগস্ট অনেকেই হামলার স্বীকার হয়। আর সে পালিয়ে যায়। এই হলো জুলাই যোদ্ধা। জুলাইকে পুঁজি করে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করছে সে, যা জুলাইকে বিক্রি করার সমান।’

এদিকে কেরুর চিনির ডিলারশিপ নিতে সাফফাতুলের বিরুদ্ধে এক লাখ টাকা দাবির অভিযোগ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম নীরব। এক অডিওতে তিনি বলেন, ‘আমরা কেরুর চিনির ডিলারশিপ নিতে চাই। এ ব্যাপারে সাফফাতুলের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ডিলারশিপ নিতে হলে এক লাখ টাকা লাগবে। সেটি নিবেন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (সদ্যবিদায়ি) চেয়ারম্যান ড. লিপিকা ভদ্র। পরবর্তী সময়ে সজিব নামে একজনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সেই টাকা সাফফাতুলকে দিই। তিনি বলেন, ১ মাসের মধ্যে সব হয়ে যাবে। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও কাজও হয়নি টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না সাফফাতুল।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আসলাম অর্ক বলেন, কমিটির স্থগিত হয়ে যাওয়ার পরই ওই মেসেঞ্জার গ্রুপ থেকে আমি লিভ নিয়েছি। মেসেঞ্জারে কেউ কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে ওটাই নিউজ হয়ে যাবে, এটা কেমন কথা! আমারও তো তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকতে পারে। যারা আমার বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ করছে, এটা এক ধরনের ষড়যন্ত্র। আমি সংগঠনের স্বার্থে তাদের নামে কিছু বলতে চাই না।’

আর সাফফাতুল ইসলাম বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগের সত্যতা নেই। আমাকে হেয় করার জন্য এ অভিযোগ আনা হয়েছে।’