নড়াইলে এনজিওর ঋণ, কাগজে–কলমে থাকলেও গ্রাহকেরা জানেন না
অভাবের সংসারে আদ্-দ্বীন ওয়েলফেয়ার সেন্টার থেকে ঋণ নিয়েছিলেন গৃহবধূ জনতা বেগম (৩০)। কয়েক মাস আগে ঋণ পরিশোধও করেন। এরপর ঘর মেরামতের জন্য আবারও নতুন ঋণ নিতে আগ্রহী হন। ঋণ পাওয়ার আশায় সঞ্চয়ের পাঁচ হাজার টাকা এনজিওর মাঠকর্মী দিতি খানমের কাছে জমা দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই ঋণ আর পাননি। সম্প্রতি জানতে পারেন, তাঁর নামে ওই এনজিওতে রয়েছে ৭০ হাজার টাকার ঋণ। খবর শুনে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান তিনি ও তাঁর পরিবার।
গৃহবধূ জনতা বেগম বলেন, ‘লোন নিছিলাম, তা শোধ করে দিছি। পরে দিতির (মাঠকর্মী) কাছে গিয়েছিলাম আবার ৫০ হাজার টাকা লোনের জন্য। দিতি বললেন, সঞ্চয় লাগবে। পরে তাঁর কাছে পাঁচ হাজার টাকা জমা দিলাম। এরপর দিতি বারবার বললেন লোন হবে, কিন্তু আর হলো না। অথচ কিছুদিন আগে ওই অফিসের লোক এসে বলছেন, আমরা নাকি ৭০ হাজার টাকা লোন নিছি।’
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার নলদীতে অবস্থিত আদ্-দ্বীন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের অনেক সদস্যের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল রোববার দুপুরে নলদী, নওয়াপাড়া ও আশপাশের বাসিন্দা বিউটি বেগম, হুরজাহান বেগম, রুবিয়া বেগম, ময়না খানম, ঝুমুর বেগম, তহমিনা বেগমসহ ভুক্তভোগী অন্তত ১০টি পরিবারের সদস্যের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কিস্তির টাকা বইতে লিপিবদ্ধ করা হয়নি, আবার শোধ করা ঋণের ওপর নতুন ঋণ দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া যাঁরা সঞ্চয় রেখেছেন, তাঁদের টাকাও ঠিকমতো জমা হয়নি।
ভুক্তভোগী নওয়াপাড়া গ্রামের রুবিয়া খানম বলেন, ‘আমার ঋণের টাকার কিস্তি নিয়মিত দিই। অথচ একটা কিস্তির টাকা বইতে জমা হয়নি। আর আমার বইতে আরেকজনের ছবি ব্যবহার করে আরেকটা মৌসুমি লোন উঠানো হয়েছে, যার ব্যাপারে আমি কিছু জানিনে। আমি গরিব মানুষ, নিজেরই চলে না। কিডা টাকা ওঠায় নেছে, আমি তা কোহানতে দেব?’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমি ও আমার মেয়ের নামে দুটি ঋণ ছিল। আমরা তা শোধ করে দিছি। অথচ এখন শুনতিছি ওই দুই বই থেকে নাকি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা উত্তোলন হয়েছে। কিন্তু এর কিছু আমরা জানি না।’
এসব ঘটনায় নলদী শাখার মাঠকর্মী দিতিকে প্রতিষ্ঠানটি আইনি নোটিশ দিয়েছে। নোটিশে অভিযোগ করা হয়েছে, তিনি দেড় শতাধিক গ্রাহকের কিস্তি ও সঞ্চয়ের টাকা জমা না দিয়ে মোট ৩৬ লাখ ৩৩ হাজার ৫০৪ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এই টাকা তাঁকে ফেরত দিতে বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক হারুন অর রশীদ বলেন, দিতি এই টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থা নিচ্ছে। গ্রাহকেরা অফিস থেকে টাকা নেওয়ার পর কাকে দিয়েছেন, সেটা প্রতিষ্ঠানের দেখার বিষয় নয়। তবে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের বিষয়ে প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থা নেবে।
তবে দিতি অভিযোগ অস্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, শাখা ব্যবস্থাপক, আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক ও হিসাবরক্ষক গ্রাহকদের অজান্তে এসব ঋণ তুলেছেন। তিনি কেবল ঋণের প্রস্তাব দেন। অনুমোদন ও বিতরণের দায়িত্ব ছিল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। তাঁর দাবি, সব দায় এখন তাঁর ওপর চাপানো হচ্ছে।