দুবাইর স্বপ্ন দেখিয়ে ২৭ লাখ টাকা নিয়ে উধাও

দুবাইর স্বপ্ন দেখিয়ে ২৭ লাখ টাকা নিয়ে উধাও

স্ত্রীর গহনা ও ছোট ভাইয়ের মোটরসাইকেল বিক্রির টাকায় দুবাই যেতে চেয়েছিলেন যশোরের আরজু আহমেদ। নিয়েছিলেন চড়া সুদে ঋণও। সব মিলিয়ে ৪ লাখ টাকা প্রতারকের হাতে তুলে দিয়ে এখন সে নিঃস্ব প্রায়।

আরজুর মতো আরও ৯ জন একই ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। বিদেশে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ১০ জনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন এক প্রতারক।

ওই প্রতারকের নাম শাওন সাহা। বাড়ি যশোরের বেজপাড়া এলাকায়। তার বিরুদ্ধে দুবাইয়ে চাকরি দেওয়ার নামে সাড়ে ২৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। অভিযুক্ত শাওন সাহা, তার ছোট ভাই সবুজ সাহা ও স্ত্রী পূজা সাহার নামে কোতোয়ালি থানায় ৩টি পৃথক অভিযোগ করেন তারা। এ তালিকায় রয়েছে শাওন সাহার আপন চাচাতো ভাই রনি সাহাও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোর শহরের বেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা শাওন সাহা দীর্ঘদিন দুবাই ছিলেন। সেই সূত্রে বিভিন্ন সময় লোকদের দুবাই নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখান তিনি।

ভুক্তভোগী আরজু আহমেদ জানিয়েছেন, ২০২৪ সালে দুবাই যাওয়ার উদ্দেশে স্ত্রীর গহনা বিক্রির ২ লাখ টাকা, ছোট ভাইয়ের মোটরসাইকেল বিক্রির ১ লাখ টাকা ও এনজিও থেকে কিস্তি তুলে ১ লাখ টাকা দেন প্রতারক শাওনের হাতে। প্রমাণ হিসেবে ১০০ টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে একটি চুক্তিও করেন। টাকা নেওয়ার পর থেকেই নানা অজুহাত দিতে থাকেন শাওন। এরপর হঠাৎ একদিন উধাও হয়ে যান।

আরজু আহমেদ বলেন, বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন দেখে এখন আমি পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে গেছি। ঠিকমতো কিস্তির টাকাও দিতে পারছি না। সংসারে চরম অশান্তি নেমে এসেছে। এখন আত্মহত্যা ছাড়া আর কোনো পথ নেই।

শহরের আরএন রোডে একটি মোটর পার্টসের দোকানে চাকরি করেন আশিকুর রহমান, উন্নত জীবনের আশায় যেতে চেয়েছিলেন বিদেশে। ধারদেনা করে অভিযুক্ত শাওনকে দিয়েছিলেন ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। এখন উন্নত জীবনযাপন দূরের কথা পাওনাদারদের জন্য বাড়িতে ঘুমাতেও পারছেন না।

আশিকুর রহমান বলেন, টাকা নেওয়ার আগে প্রায় প্রতিদিন ফোন দিতেন শাওন। দ্রুত টাকা না দিলে ভিসা হবে না। পরেরবার জটিলতা বাড়বে, এমন নানা সমস্যার কথা বলতেন। টাকা নেওয়ার পর থেকেই তার চরিত্র বদলে যায়। ফোন দিলে ব্যস্ততার কথা বলে কেটে দিতেন। ভিসা আজ আসবে কাল আসবে বলে ভরসা দিতেন। হঠাৎ একদিন জানতে পারি, আমার মতো আরও কয়েকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সে পালিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, আমরা কয়েকজন ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ দিয়েছি। পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আবার শাওনের পরিবারের কাছে টাকার কথা বলতে গেলে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে।

আরেক ভুক্তভোগী শাওনের চাচাতো ভাই রনি সাহা বলেন, দুবাই যাওয়ার জন্য আমি ঋণ করে ১ লাখ টাকা দিই। কথা ছিলো ভিসা এলে বাকি টাকা দিতে হবে। কিন্তু তার আগেই জানতে পারি আরও কয়েকজনের কাছ থেকে একই কথা বলে বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়ে সে পালিয়ে গেছে। এখন আমার চাচাতো ভাই হওয়া সত্বেও আমি কিছু করতে পারছি না। বরং আমাকেই হুমকি দিচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চৌগাছার ট্রাক ড্রাইভার মো. মহসিনের কাছ থেকে দুবাই নিয়ে যাওয়ার নামে ১ লাখ, বেজপাড়ার সোহরাব হোসেনের কাছ থেকে ৫ লাখ ৭০ হাজার, যশোরে আনির কাছ থেকে ৩ লাখ ৯২ হাজার, নিপুণের কাছ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার ও ঢাকার ব্যবসায়ী সেলিমের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা নিয়েছে অভিযুক্ত শাওন সাহা।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় শাওনের স্ত্রী পূজা সাহার সঙ্গে। তার মোবাইল ফোন নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।

অবশ্য শাওনের ছোট ভাই সবুজ সাহা এ প্রতিনিধিকে বলেন, কেউ কেউ টাকা পাবে দাবি করে বাড়ি আসছে। তারা সত্যিই টাকা পাবে কি না তা আমার জানা নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শাওন বাড়িতে নেই। কোথায় আছেন তাও জানি না। তিনি ফিরে এলে জানা যাবে আসলে কেউ টাকা পাবে কি না।

এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি আবুল হাসনাত খান জানিয়েছেন, দুবাই নিয়ে যাওয়ার নামে প্রতারণার বিষয়ে কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।