ফাইল ছবি

রাজনীতি নিয়ে কয়েক ছত্র

‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে!’ রবি ঠাকুরের এই গানটি কথা আর সুর মিলিয়ে বেশ জনপ্রিয়। তবে এই নির্দেশনা রাজনীতিতে এস্তেমাল করার যোগ্য নয়। রাজনীতি একলা চলার বিষয় নয়। আধুনিক সময় মানুষের জীবনযাপন পদ্ধতিকে জটিল করেছে। সেই সঙ্গে মানুষের চিন্তাজগতের বৈচিত্র্য হয়ে উঠেছে আরও বর্ণাঢ্য। এতো সব চিন্তাকে মেলানো এবং একসঙ্গে ধারণ করতে পারাই রাজনীতির নৈপুণ্য ও কুশলতা। এটাকেই এখন ইনক্লুসিভ পলিটিক্স বা অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি বলে। এর বিপরীতে একলা চলার রাজনীতি এখন অচল। এই একলা চলার অহম, সেটা ব্যক্তির কিংবা দলের হোক, রাজনীতিতে অবশ্যই পরিত্যাজ্য।

আমাদের এই দেশে বিশ শতকের ষাট, সত্তর, আশি ও নব্বইয়ের দশকে রাজনীতিতে প্রদর্শনবাদ একটা বড় ইতিবাচক দিক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু একুশ শতকে এসে এই প্রদর্শনবাদ প্রকটতর হয়ে ওঠায় তা এখন নেতিবাচক রূপ নিয়েছে। অপরদিকে মিথ, কাল্ট ও ক্যারিশমার বদলে এখন যুথবদ্ধতা ও বহুবাচনিকতা অনেক বেশি গ্রহনযোগ্য হয়ে উঠছে।

এখন রাজনীতিতে গলাবাজির চেয়ে সঠিক বয়ান গ্রহনযোগ্যতা পাচ্ছে। মেহনত, লেগে থাকা, নিষ্ঠা ও সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া পরিকল্পনাহীন তৎপরতা রাজনীতির মাঠে কিংবা ব্যালটে কোথাও সাফল্য এনে দেবে না।

এখনকার রাজনীতিতে মানুষের মন পড়তে হবে, তাদের ওপর কিছু চাপাবার বদলে জনগণের প্রত্যাশার পথে নিজেদেরকে চালিত করতে হবে। চাতুরি ও স্ট্যান্টবাজি ধরে ফেলার ব্যাপারে এখনকার তরুণেরা অনেক বেশি দক্ষ, এ কথা মাথায় রাখতে হবে। তাদের কাছে প্রদর্শনবাদের চেয়ে আন্তরিকতা যে অনেক বেশি মূল্যবান, সেটা বুঝতে হবে।

বিশাল দেহ নয়, স্মার্টনেস এখনকার রাজনীতিতে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর কারো কথায়, চলনে বা আচরণে সামান্য অহংকার বা কর্তৃত্বপ্রবণতা প্রকাশ পেলেই মানুষের মন তার ওপর বিষিয়ে উঠতে শুরু করবে। অনাড়ম্বরতা একালে একটা বড় বিষয়। আর দুর্নীতির ছোঁয়ামুক্ত থাকাও খুব জরুরি। মনে রাখতে হবে প্রচার একটা বড় সামাজিক বিজ্ঞান। এর সঙ্গে জনমনস্তত্ত্ব জড়িত। অগ্রহনযোগ্য অতি প্রচার রাজনীতিতে মহাক্ষতিকর হয়ে ওঠে।