রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আগের মত রাজনীতি করলে চলবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, তারেক রহমান চাচ্ছেন দেশের মানুষের হৃদয় স্পর্শ করতে।
বুধবার বিকালে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১৮তম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে ‘উন্মুক্ত আলোচনা সভা ও জাগরণের গান’ অনুষ্ঠানে আমির খসরু এসব কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাস এবং আমরা বিএনপি পরিবার-এর সহযোগিতায় এই অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, রাজনীতি বিশ্লেষক, গণমাধ্যম বক্তিত্ব, গুণী সাংস্কৃতিক কর্মীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ।
আমির খসরু বলেন, এখন নতুন নতুন চিন্তা করতে হবে। মানুষের প্রত্যাশা বুঝতে হবে, মনের ভিতরে কি আছে বুঝতে হবে। সমস্ত মানুষকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে না জড়ালে আমরা যে আশা করছি, বাংলাদেশকে যেখানে নিয়ে যাব- সেখানে যাওয়া সম্ভব হবে না। আমাদের সকলকে এগুলো ধারণ করতে হবে, বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় স্পর্শ করতে হবে।
যুগান্তরের সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ তারেক রহমানকে কী পরিমাণ নির্যাতন করা হয়েছিল, স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জীবনের অর্ধযুগ কেটেছে হাসিনার কারাগারে। তাকে স্লো পয়জনিং করা হয়েছে। তাকে মেরে ফেলার এহেন চেষ্টা নাই যা করা হয়নি। তারেক রহমানের একটা মাত্র আদরের ভাই আরাফাত রহমান কোকো, তাকে বিনা চিকিৎসায় মেরে ফেরা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে। শহীদ জিয়া স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বাড়ি বুলডোজার দিয়ে ঘুরিয়ে দিয়েছে হাসিনা। এর চাইতে নির্যাতিত আর কে হয়েছে?
তিনি তরুণদের উদ্দেশ্যে করে বলেন, হে তরুণ, তারেক রহমানকে পড়ো। তারেক রহমান তোমাদেরই আত্মার আত্মীয়, তোমাদেরই নেতা। বিপ্লবের সঙ্গে তারেক রহমানের সম্পর্ক আত্মার। তোমাদের সঙ্গে তারেক রহমানের সম্পর্ক হৃদয়ের। তার রাজনৈতিক দর্শনটা কি? ৩১ দফার মধ্যে বাংলাদেশের সমস্ত সমস্যার সমাধান দেওয়া আছে। আজকে যারা সংস্কার সংস্কার করছেন, তারা তো ভালো করে পড়লেই হয়ে যায়। সংস্কার হলো একটা চলমান প্রক্রিয়া, চলতেই থাকবে।
তিনি আরও বলেন, তারেক রহমানের দল বিএনপি যখন নির্বাচনের কথা বলেছিল, সবাই বলেছে বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে। বিএনপি বলেছিল একটা নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক জনগণের দ্বারা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে যদি একটা সরকার সুপ্রতিষ্ঠিত না হয় তাহলে দেশ চলবে না। জনগণের প্রতিনিধি থাকতে হবে তো ক্ষমতায়। জনগণের প্রতিনিধিরা এসে পার্লামেন্টে বসবেন, তারা ঠিক করবেন বাংলাদেশ কোথায় যাবে, না যাবে। আজকে এখন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস কী বলছেন? বলছেন যারা নির্বাচনের বিকল্প ভাবছে তারা দেশের সর্বনাশ করে দেবে। তাহলে তারেক রহমানের রাজনীতি কতটা দুরদর্শী। ৫ আগস্টের সাতদিনের মধ্যে তিনি বলেছিলেন নির্বাচন দেন, নইলে বিপদে পড়বেন। আজ ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক বছর পর বলছেন নির্বাচন ছাড়া কোন বিকল্প নেই। তাহলে তারেক রহমানের রাজনীতি ফিরে ফিরে জয়লাভ করছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ‘আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করেছেন নয় বছর। এরপর ১৭ বছর কত ত্যাগ, কত শ্রম, মিথ্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেল খেটেছেন। তারেক রহমান বিদেশে বসে আমাদেরকে মনোবল দিয়েছেন, সাহস দিয়েছেন। আমি তারেক রহমানকে অথবা ম্যাডাম খালেদা জিয়াকে কাছ থেকে এত বেশি দেখেছি, দেখছি, কখনো আমরা হতাশ হলেও উনারা হতাশ হননি। এটাই ছিল আমাদের আন্দোলনের ৫ আগস্টের যে রেজাল্ট তার একটা বড় অংশ।’
আমরা বিএনপি পরিবার-এর আহ্বায়ক সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একটি প্রতিষ্ঠান। শেখ হাসিনার রোষানলকে উপেক্ষা করে তারেক রহমান বাংলাদেশের মানুষকে তথা বিএনপি নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে ধরে রেখেছিলেন। তিনি দূরদেশে থেকেও আমাদের ঐক্য যেভাবে ধরে রেখেছিলেন এটিও তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মতোই। তারেক রহমান এবার ফিরবেন নতুন রূপে। ফিরবেন নতুন বাংলাদেশ গড়তে। আমাদের সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে।
আবেগতাড়িত হয়ে আতিকুর রহমান রুমন বলেন, তারেক রহমানকে আমি দেখেছি অনেক কাছ থেকে। তারেক রহমান সত্যি একজন ভালো মানুষ। তার বিরুদ্ধে যে মামলাটি দেওয়া হয়েছিল, এই মামলাটি নিয়ে আমি এবং আমার এক সহকর্মী দিনের পর দিন কোর্ট-কাচারিতে ঘুরেছি। অনেক দলিলপত্র আমার পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে। সংবাদপত্রের লোক হয়ে বলতে বাধ্য হচ্ছি, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে এই বাংলাদেশেই কিছু সংবাদপত্র ২০ লাখ টাকাকে ২০ হাজার কোটি টাকা বানিয়ে অপপ্রচার চালিয়েছে। আমরা যখন নথিপত্র দেখেছি সেখানে লেখা ছিল অনলি ২০ লাখ টাকা। আমাদের সরকারপক্ষের আইনজীবীরা মাঝে মধ্যেই শয়তানি করে বলতো ২০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু নথিপত্রে ছিল ২০ লাখ টাকা। তারপরও সেটা যখন প্রমাণিত না হয় যখন ওই জাজ তারেক রহমানের পক্ষে রায় দেন। সেই জাজকে ছয় ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করার জন্য ওই পুলিশ বাহিনী লেলিয়ে দিয়েছিল শেখ হাসিনা। সেই জাজ পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল।
তিনি বলেন, তারেক রহমানকে শুধু অপবাদ দিয়ে ক্ষান্ত হয়নি। আমাদের প্রিয় নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকেও একটি অপবাদ দেওয়া হয়েছে। সে অপবাদটি ছিল একটি চ্যারিটেবল ট্রাস্টের টাকা দুর্নীতি। কিন্তু সেই টাকাটা আসলে দুর্নীতি হয়নি। সে টাকা ব্যাংকে ছিল এবং কিছু টাকা দিয়ে বগুড়ার গাবতলীতে জায়গা কেনা হয়েছিল। যে জায়গার মূল্য এখন কয়েক কোটি টাকা। যে টাকার জন্য তাকে জেল খাটতে হয়েছিল আজও ব্যাংকে গিয়ে প্রমাণ নিতে পারেন। অথচ কুৎসা রটিয়ে তার জীবনটা প্রায় শেষ করে দেওয়া হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার সময় কাটে বাসায় বসে। আজ তো তার বাসায় বসে থাকার কথা ছিল না। তিনি আমাদের মাঝে আসতেন, মুক্ত মঞ্চে আপনাদের সাথে আলাপ করতেন, সুখ-দুঃখের কথা বলতেন-শুনতেন। কেন আমাদের মা আজকে বাসায় বসে আছেন, তার তো তেমন বয়স হয়নি। তাকে স্লো পয়জনিং করা হয়েছে। যে নেত্রী হেঁটে হেঁটে জেলখানায় গেছেন, সেই নেত্রী কেন হুইল চেয়ারে বের হবেন। মানুষের দোয়া আরা ভালবাসায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখন সুস্থ আছেন।
আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে এবং সংগীত পরিচালক ও গীতিকার ইথুন বাবুর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন- বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, কোষাধ্যক্ষ এম. রশিদুজ্জামান মিল্লাত, আইনজীবী ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উন্মুক্ত আলোচনা সভায় আরও অংশ নেন- বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব আব্দুল আজিজ, যুক্তরাজ্য বিএনপি’র উপদেষ্টা ব্যারিস্টার তারেক বিন আজিজ, বিশিষ্ট সমাজ ও রাজনীতি বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর আবদুল্লাহ আল মামুন, বিশিষ্ট পেশাজীবি নেতা রফিকুল ইসলাম এবং জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান প্রমুখ।
আমরা বিএনপি পরিবার-এর সদস্য সচিব কৃষিবিদ মোকছেদুল মোমিন মিথুন, জাতীয় প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য জাহিদুল ইসলাম রনি ও সাংস্কৃতিককর্মী তানিয়া আফরিন’র যৌথ পরিচালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন- ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর সদস্য মাসুদ রানা লিটন, মুস্তাকিম বিল্লাহ, শাকিল আহমেদ, ফরহাদ আলী সজীব, রুবেল আমিন, শাহাদত হোসেন, ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি জামিল হোসেন, বর্তমান সহ-সভাপতি হাবিবুল বাশার, যুগ্ম-সম্পাদক হাসানুর রহমান, জাহিদ শাকিল, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুল হাসান কাজল, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম-সম্পাদক মিনার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান মহান, ঢাকা কলেজ নেতা আব্দুল্লাহ আল মিসবাহ। এছাড়াও ছিলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. মনোয়ার কাদির বিটু, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. নুর মহল আক্তার বানু, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়-এ্যাবের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম সুলতান, কৃষিবিদ নেতা আসাদুজ্জামান কিটোন, জাসাসের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুর মিয়া, কৃষিবিদ মোহাইমেন পলাশ, কৃষিবিদ মাহবুবুল আলম, কৃষিবিদ এমদাদুল হক দুলু, কৃষিবিদ শফিক, কৃষিবিদ মৃদুল, কৃষিবিদ রিশাদ, কৃষিবিদ মেসবাউল আলম, কৃষিবিদ মারুফ মেলিন, কৃষিবিদ শাহরিয়ার, কৃষিবিদ রোমান, এ্যাব-এর ঢাকা মহানগর দক্ষিণেন সাধারণ সম্পাদক কে এফ আই সবুর, অগ্রণী ব্যাংক জিয়া পরিষদের সভাপতি মো. সুজাউদ্দৌলা, সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল্লাহ ও কৃষিবিদ নাহিয়ান হোসেন প্রমুখ।