ডাকসু নির্বাচন উপলক্ষে গতকাল মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ: ১ প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনের কাছ থেকে মনোনয়ন ফরম নিচ্ছে ছাত্রদল, ২ ফরম নিতে এসেছে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ, ৩ মনোনয়ন ফরম নিচ্ছে স্বতন্ত্র প্যানেল, ৪ মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ বাম ছাত্রসংগঠনের, ৫ ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে ফরম সংগ্রহছবি: প্রথম আলো

ছাত্ররাজনীতিতে পরিবর্তন চান শিক্ষার্থীরা

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গণরুম ও ‘গেস্টরুম সংস্কৃতির’ অবসান হয়েছে। এখন আলোচনা হচ্ছে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি কেমন হবে, এর আওতা কতটা থাকবে—এসব বিষয়ে। ক্যাম্পাসের পাশাপাশি আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতির ‘রূপ’ কেমন হবে, এ নিয়েও নানা তর্কবিতর্ক চলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসবে, এমন প্রত্যাশা সাধারণ শিক্ষার্থীদের।

ছাত্ররাজনীতির নামে ক্যাম্পাসে, হলে কারও দখলদারত্ব চলুক—এটি চান না শিক্ষার্থীরা। ছাত্রলীগ (এখন নিষিদ্ধ) যেভাবে ‘গেস্টরুম সংস্কৃতির’ নামে হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন চালাত, জোরপূর্বক মিছিলে যেতে বাধ্য করত—সেই সব দিনে আর কেউ ফেরত যেতে চান না। একইভাবে ক্যাম্পাসে–হলে ‘গুপ্ত রাজনীতিরও’ বিরুদ্ধে তাঁরা। প্রচলিত ও গতানুগতিক ছাত্ররাজনীতির পরিবর্তন চান সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

প্রচলিত ছাত্ররাজনীতির সমালোচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মাসরুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রনেতারা শিক্ষার্থীদের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে শুধুই দলীয় স্বার্থ বাস্তবায়ন করে। ডাকসু হলে সেই জায়গায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছি।’

ডাকসু নির্বাচনের বিষয়ে গতকাল ক্যাম্পাসে গিয়ে বিভিন্ন বিভাগ ও বর্ষের ১৮ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। শিক্ষার্থীদের চাওয়া, ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসুক। ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে এই কাজটি শুরু হতে পারে বলে মনে করেন তাঁরা।

প্রচলিত ছাত্ররাজনীতি দীর্ঘদিন দলীয় আধিপত্য, সহিংসতা ও দখলদারত্বে সীমাবদ্ধ ছিল মনে করেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সুস্মিতা মুন্সি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দলমুক্ত, শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক রাজনীতি শুরু হওয়া দরকার। গণ-অভ্যুত্থানের পর এই সুযোগ এসেছে। এবারের ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতিতে পরিবর্তনের সূচনা হতে পারে।

ছাত্রনেতারা শিক্ষার্থীদের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে শুধুই দলীয় স্বার্থ বাস্তবায়ন করে। ডাকসু হলে সেই জায়গায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মাসরুর

ডাকসু নির্বাচনে চার ‘ফ্যাক্টর’

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে নিজের প্রত্যাশার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী মাকসুদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের প্রার্থীরা যেসব প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, ভোটের পর সেগুলোর আংশিক বাস্তবায়িত হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের চেহারা পরিবর্তন হয়ে যাবে। আবাসনসংকট, প্রশাসনিক ভবনের ভোগান্তি ও শিক্ষার্থী নিপীড়নের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের। তাঁরা চাইলে গবেষণার পরিবেশ তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারবেন, শিক্ষার্থীদের যাতায়াতব্যবস্থাও উন্নত করতে পারবেন। কিন্তু যদি প্রতিশ্রুতি না রাখা হয়, তাহলে ডাকসুর এই নির্বাচন কোনো কাজে আসবে না।’

ডাকসু নিয়ে এমন প্রত্যাশার কথা বলেছেন অন্য শিক্ষার্থীরাও। তাঁদের একজন ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী রুমাইসা এন রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে রিডিংরুমের সংকট অনেক দিন ধরে। একটা কক্ষ থাকলেও সেখানে চাকরির পড়াশোনা করেন অনেকে। বসার জায়গা পাওয়া যায় না। মেয়েদের হলের আবাসনসংকট অনেক বেশি। অনেকে খাবারের টাকা বাঁচিয়ে বাইরে মেস ভাড়া করে থাকেন। পরিবহনব্যবস্থাও পর্যাপ্ত নয়। ডাকসুতে যাঁরা নির্বাচিত হবেন, তাঁরা যেন এসব সমস্যা গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করবেন, সেই প্রত্যাশা করছি।’

শিক্ষার্থীদের বক্তব্যে এবারের ডাকসু নির্বাচনে চারটি ‘ফ্যাক্টর’ (নির্ধারক বিষয়) উঠে এসেছে। প্রথম ফ্যাক্টর ভোটারদের ৪৭ দশমিক ৫২ শতাংশ ছাত্রী। দ্বিতীয় ফ্যাক্টর—জগন্নাথ হলের ভোট (২ হাজার ২১৯ জন। এই ভোটারদের সবাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের)। তৃতীয় ফ্যাক্টর—জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে কার কী ভূমিকা ছিল। চতুর্থ ফ্যাক্টর—প্রার্থীদের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি।

ছাত্রীদের ভোট যাঁরা বেশি পাবেন, তাঁদের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে বলে মনে করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

২৮টি পদে প্রার্থী ৫৬৫ জন

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ও বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার জন্যও অনেকে মনোনয়নপত্র কিনেছেন। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, গতকাল সোমবার ছিল ডাকসু নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বিতরণের শেষ দিন। কিন্তু রাত নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মনোনয়নপত্র বিতরণের সময় আরও এক দিন বাড়ানোর কথা জানায়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা যাবে। একইভাবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে আগামীকাল বুধবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত।

আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এবার ডাকসুতে ভিপি, জিএসসহ পদ ২৮টি। গত নির্বাচনে (২০১৯ সালে) পদ ছিল ২৫টি। এবার ৩টি পদ বাড়ানো হয়েছে। আর প্রতিটি হল সংসদে নির্বাচন হবে ১৩টি পদে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন হল আছে ১৮টি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ডাকসুর ২৮টি পদের জন্য ৫৬৫ জন মনোনয়নপত্র কিনেছেন। আর ১৮টি হল সংসদের বিভিন্ন পদের জন্য ১ হাজার ২২৬ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। যাচাই-বাছাই শেষে আগামী বৃহস্পতিবার প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে।

শিক্ষার্থীদের বক্তব্যে এবারের ডাকসু নির্বাচনে চারটি ‘ফ্যাক্টর’ (নির্ধারক বিষয়) উঠে এসেছে। প্রথম ফ্যাক্টর ভোটারদের ৪৭ দশমিক ৫২ শতাংশ ছাত্রী। দ্বিতীয় ফ্যাক্টর—জগন্নাথ হলের ভোট (২ হাজার ২১৯ জন। এই ভোটারদের সবাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের)। তৃতীয় ফ্যাক্টর—জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে কার কী ভূমিকা ছিল। চতুর্থ ফ্যাক্টর—প্রার্থীদের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি।

প্যানেল ঘোষণা করল শিবির

মনোনয়নপত্র কিনতে ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের (সিনেট ভবনের তৃতীয় তলায়) সামনে গতকাল দুপুর থেকে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা–কর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। মনোনয়নপত্র সংগ্রহের পর ডাকসুর সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদকসহ (জিএস) বিভিন্ন পদের প্রার্থীরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। দুপুরে দলীয়ভাবে সবার আগে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন ছাত্রশিবিরের প্রার্থীরা। তাঁদের প্যানেলের নাম ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’।

শিবিরের প্যানেলে ভিপি পদে মো. আবু সাদিক কায়েম, জিএস পদে এস এম ফরহাদ ও এজিএস পদে মহিউদ্দিন খান নির্বাচন করবেন। এই প্যানেলে সর্ব মিত্র চাকমা নামের এক শিক্ষার্থী সদস্য পদে নির্বাচন করছেন। এ ছাড়া চারজন নারী শিক্ষার্থীকেও প্যানেলে রেখেছে শিবির।

গণ–অভ্যুত্থানের আগে সাদিক ও ফরহাদ ছাত্রলীগের (এখন নিষিদ্ধ) রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন এমন আলোচনা আছে। তবে এ বিষয়টি তাঁরা বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন।

ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম গতকাল দুপুরে সিনেট ভবনে দলীয় প্যানেল ঘোষণার পর সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচনে জয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে ডাকসুতে যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার এবং ছাত্রদের কল্যাণে যে উদ্যোগ নেওয়া দরকার, ছাত্রশিবির সেটা করবে।’

শিবির প্যানেল ঘোষণা করার পর একই জায়গায় প্যানেল ঘোষণা করে ছাত্র অধিকার পরিষদ। তারা নিজেদের প্যানেলের নাম দিয়েছে ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ, ভোট ফর চেঞ্জ’। এই প্যানেল থেকে ভিপি পদে বিন ইয়ামিন মোল্লা, জিএস পদে সাবিনা ইয়াসমিন ও এজিএস পদে রাকিবুল ইসলাম নির্বাচন করবেন।

নির্বাচনে জয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে ডাকসুতে যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার এবং ছাত্রদের কল্যাণে যে উদ্যোগ নেওয়া দরকার, ছাত্রশিবির সেটা করবে।’
ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম

গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের প্যানেল

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব মাহিন সরকার ‘ডিইউ ফার্স্ট’ নামে স্বতন্ত্র প্যানেল ঘোষণা করেছেন। তিনি জিএস পদে নির্বাচন করবেন। তাঁর প্যানেলে ভিপি পদে নির্বাচন করবেন ‘স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্রসংসদের’ নেতা জামালুদ্দীন মুহাম্মাদ খালিদ। জামালুদ্দীন একসময় ইসলামী ছাত্র আন্দোলন করতেন। ১০ মাস আগে তিনি নতুন এই ছাত্রসংগঠন গড়ে তোলেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মাহিন সরকার নতুন প্যানেল দেওয়ার বিষয়টি গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের একাংশের উদ্যোগে গঠিত। এই সংগঠনের একাধিক নেতা প্রথম আলোকে জানান, তাঁরা মাহিন সরকারকে সঙ্গে নিয়েই প্যানেল করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পদ নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় তিনি পৃথক প্যানেল ঘোষণা করেছেন। এদিকে গতকাল রাত ১১টার দিকে মাহিন সরকারকে দল থেকে বহিষ্কারের কথা জানায় এনসিপি।

গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের প্যানেলে ভিপি পদে আবদুল কাদের, জিএস পদে আবু বাকের মজুমদার ও এজিএস পদে আশরেফা খাতুন নির্বাচন করবেন। তাঁরা প্যানেলের নাম দিয়েছেন ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’।

এই প্যানেলের জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুন্দর–গণতান্ত্রিক নির্বাচন আমরা পাব বলে আশা করছি। জুলাই অভ্যুত্থানে আমরা জীবন বাজি রেখেছি। তাই শিক্ষার্থীরা মূল্যবান ভোট দিয়ে আমাদের নির্বাচিত করবেন বলে আশা করছি।’

দল বেঁধে গান গাইতে গাইতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে সিনেট ভবনে যান বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতারা। তাঁদের প্যানেলের সম্ভাব্য নাম ‘ফোর্স ফর রেজিস্ট্যান্স’।

ছাত্রদল প্যানেল ঘোষণা করবে আজ

গতকাল বিকেলে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন ছাত্রদলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা ভিপি পদের জন্য মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তিনজনের নাম জানা গেছে। তাঁরা হলেন মমিনুল ইসলাম (জিসান), আবিদুল ইসলাম খান ও বি এম কাউসার। জিএস পদে মনোনয়নপত্র কিনেছেন শেখ তানভীর বারী হামিম, মেহেদী হাসানসহ কয়েকজন। এই প্যানেল থেকে এজিএস পদে তানভীর আল হাদী মায়েদ নির্বাচন করতে পারেন।

ভিপি পদে মনোনয়নপত্র নেওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবিদুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ডাকসুতে নির্বাচিত হলে আমরা নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিয়ে আসার সর্বাত্মক চেষ্টা করব।’

দল বেঁধে গান গাইতে গাইতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে সিনেট ভবনে যান বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতারা। তাঁদের প্যানেলের সম্ভাব্য নাম ‘ফোর্স ফর রেজিস্ট্যান্স’। এই প্যানেলে ভিপি পদে প্রার্থী শেখ তাসনিম আফরোজ (ইমি)। তিনি ২০১৯ সালের নির্বাচনে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে শামসুন নাহার হলে স্বতন্ত্র প্যানেল দিয়েছিলেন। সেই প্যানেল থেকে তিনি হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।

বামপন্থীদের প্যানেলে ১১ ছাত্রী

বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর প্যানেল থেকে জিএস পদে প্রার্থী হয়েছেন ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু। এজিএস পদে নির্বাচন করবেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ (জুবেল)।

ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বিপ্লবী ছাত্র–যুব আন্দোলন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক ছাত্র মঞ্চের নেতাদের উদ্যোগে গঠিত এই প্যানেলের পূর্ণাঙ্গ তালিকা আজ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে। তাদের প্যানেলে ১১ জন ছাত্রী রয়েছেন। এর পাশাপাশি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর দুজন ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন একজন শিক্ষার্থী থাকবেন।

জিএস প্রার্থী মেঘমল্লার বসু সাংবাদিকদের বলেন, ‘একাত্তর ও চব্বিশের গণহত্যাকারীদের ঘৃণা করে যারা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণের লড়াইয়ে অংশীজন হতে চায়, তাদের নিয়ে আমরা প্যানেল করছি।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক উমামা ফাতেমার নেতৃত্বাধীন প্যানেলের নাম ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’। উমামা ভিপি পদে নির্বাচন করবেন। তাঁর প্যানেলে জিএস ও এজিএস পদের জন্য আলোচনায় আছেন আল সাদী ভূঁইয়া ও মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহি। তাঁরা দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) নেতা। সাদী ডুজার সদ্য সাবেক সভাপতি আর মাহি বর্তমান কমিটির সভাপতি। দুজনই বর্তমানে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় (বাসস) কর্মরত।

একাত্তর ও চব্বিশের গণহত্যাকারীদের ঘৃণা করে যারা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণের লড়াইয়ে অংশীজন হতে চায়, তাদের নিয়ে আমরা প্যানেল করছি।
জিএস প্রার্থী মেঘমল্লার বসু

ছাত্র ফেডারেশনের প্যানেলে ভিপি ও জিএস পদ ফাঁকা রাখা হয়েছে। এই প্যানেল থেকে এজিএস পদে প্রার্থী হচ্ছেন আরমানুল হক। ক্যাম্পাসে আলোচনা আছে, ভিপি ও জিএস পদে ছাত্র ফেডারেশন উমামা ফাতেমার প্যানেলকে সমর্থন দিতে পারে।

ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র এবার আবাসিক হলের বাইরে থাকছে। প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী, মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন। এর মধ্যে ছাত্র ভোটার ২০ হাজার ৮৭৩ জন, ছাত্রী ভোটার ১৮ হাজার ৯০২ জন।

‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিতের দাবি

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল সংসদে ‘মব’ সৃষ্টি করে নেতা–কর্মীদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ছাত্রদল। আবাসিক হলগুলোতে সব সংগঠনের জন্য সমান সুযোগ নেই বলেও অভিযোগ করেছেন সংগঠনটির নেতারা। গতকাল সন্ধ্যায় মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলনে করে এ অভিযোগ করেন তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনের আগে ডাকসু ও হল সংসদের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ছাত্রদলের নেতারা। সেটি সংবাদ সম্মেলনে পড়ে শোনান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের (সবার সমান সুযোগ) অভাব স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান।