‘দেশে যদি নির্বাচিত সরকার না থাকে, তাহলে জবাবদিহি ও গণতন্ত্র থাকে না। আর যদি গণতন্ত্র না থাকে, তাহলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। বর্তমান সরকার সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনলেও অর্থনীতিতে সংস্কারের চাকা ঘুরেনি।’
বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে লেকশোর হোটেলে বিএনপির উদ্যোগে এক সেমিনারে এই মত দেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা।
‘সংকট থেকে স্থিতিশীলতা : অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ভিত্তি গণতন্ত্র’ শীর্ষক এই সেমিনারে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, ব্রিটেনসহ ১০ দেশের রাষ্ট্রদূত এবং বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, আগামী নির্বাচনে যদি জনগণ বিএনপিকে ভোট দেয়, আশা করি তারা একটি শক্তিশালী নীতি করবে।
পলিসি এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, রাজস্ব, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা শৃঙ্খল ভেঙে পড়েছে। যা ঠিক করতে গেলে প্রথমত আÍবিশ্বাস ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। বিনিয়োগকারী, গ্লোবাল কমিউনিটি, গ্লোবাল ইকোনমিক পার্টনার এবং তাদের যারা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যে ডিল করবে, সেই পলিসির আন্ডারে তারা কাজ করবে। এ ক্ষেত্রে সাধারণত নির্বাচিত সরকারের আমলে যেভাবে কনফিডেন্স (আস্থা) হয়, অনির্বাচিত বা অন্তর্বর্তী আমলে সেভাবে হয় না।
তিনি বলেন, অন্তর্র্বর্তী সরকার কিছু ভালো কাজ করেছে। ম্যাক্রোতে কিছু স্থিতিশীলতা তৈরি এবং সেন্ট্রাল ব্যাংককে স্বাধীনতা ফেরত দিয়েছে। সংস্কারের ইচ্ছা ব্যক্ত করেছে। আমরা দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে শুনেছি তাদের কনসার্ন এবং আমরা দেখছি সরকারের পক্ষ থেকে আউটরিচ খুব কম। সরকার তাদের এনগেজ করছে কম। এর ফলে আত্মবিশ্বাস আবার আঘাতপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য সংস্কার এবং পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সংস্কার বহু বছর বকেয়া হয়ে আছে। ১ বছরে সেই রিফর্মের চাকা আসলে ঘুরেনি। জনগণের ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত সরকার আসার আগে সংস্কারের যে শক্তি প্রয়োজন হয়, আত্মবিশ্বাস প্রয়োজন হয়; সেটা পাওয়া যাবে না। সুতরাং সেই দিক থেকেও আমাদের যে ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশন; নির্বাচনের মাধ্যমে সেটা খুব ত্বরান্বিত হওয়া প্রয়োজন।
এই অর্থনীতিবিদের মতে, জনগণের ম্যান্ডেটসহ নির্বাচিত সরকার সেই গণতন্ত্র, এর সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওতপ্রোত সম্পর্ক আছে। আটলান্টিক কাউন্সিল, হেরিটেজ ফাউন্ডেশন সবকটির প্রতিবেদন দেখাচ্ছে যে গণতান্ত্রিক পরিবেশের সঙ্গে একটা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জড়িত। ৫ বছরের সমৃদ্ধি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ইনডেক্স যদি দেখেন, আর এই বছরেরটা দেখেন, দেখবেন এর পরিবর্তন হয়েছে। এই পরিবর্তনকে সুসংহত করতে গেলে আমাদের গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে হবে। সেখানে নির্বাচিত সরকার ও নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ।
তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-এর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ১৫ বছরে আমরা দেখেছি, গণতন্ত্র না থাকলে জবাবদিহি থাকে না। জবাবদিহি না থাকলে বিনিয়োগ হবে না। লুটপাট হবে এবং লুটপাটের সংস্কৃতি চালু হবে। সুতরাং দেশের মানুষের স্বার্থে এবং সত্যিকারের যদি জবাবদিহিমূলক সরকার আমরা চাই, তাহলে অবশ্যই গণতন্ত্র লাগবে। গণতন্ত্র না থাকলে যে সমস্যাগুলো হয়, সেটা আমরা ১৫ বছরে দেখেছি।
তিনি বলেন, বিজিএমইএ থেকে আমরাও চাই না বাংলাদেশ শুধু একটি পণ্যের ওপর নির্ভরশীল থাকুক। পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ যেমন লাগবে, সঙ্গে বাজার বৈচিত্র্যকরণও লাগবে। সেটা করতে হলে আশা করব, আগামী দিনে একটা ভালো নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে যদি জনগণ বিএনপিকে ভোট দেয়, আশা করি তারা একটি শক্তিশালী নীতি করবে। কেউ বিনিয়োগ করতে আসার পর নীতিতে যদি ভিন্নচিত্র পাওয়া যায়, তাহলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। আশা করি, ভবিষ্যতে যারা দেশ পরিচালনায় আসবেন, এ বিষয়গুলো অনুসরণ করবেন। এটা যদি অনুসরণ করা হয়, অবশ্যই দেশে বিনিয়োগ আসবে।
বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপকমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা ঋণ নিয়েছি এবং টাকা ছাপিয়েছি। আমাদের ঋণভিত্তিক অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দেশে ব্যবসায়ীরা অনেক নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছেন। অনেক বেশি নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় অর্থনীতি ঠিকঠাক কাজ করে না। নির্বাচিত হলে বিএনপির সবচেয়ে বড় কাজ হবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়ালের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ ড. রাশেদ তিতুমীর, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসিরউদ্দিন আহমেদ অসীম, আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, স্পেশাল অ্যাসিস্ট্যান্ট টু দ্য চেয়ারপারসন’স ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটি অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল, প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন প্রমুখ।