রাজশাহীতে এক মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এস নাসির উদ্দিন। আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজশাহী আঞ্চলিক লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেছবি: প্রথম আলো

যেদিন সরকার হুকুমমতো কাজ করাতে চাইবে, সেদিন এই চেয়ারে থাকব না: সিইসি

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যেকোনো ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, যেদিন সরকার হুকুমমতো কাজ করাতে চাইবে, সেদিন এই চেয়ারে তিনি থাকবেন না।

এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘যাঁরা ভোটকেন্দ্র দখল কিংবা বাক্স (ব্যালট) ছিনতাইয়ের জন্য নিয়ত করে বসে আছেন, তাঁদের জন্য দুঃসংবাদ। তাঁদের স্বপ্ন ভঙ্গ হবে। কেন্দ্র দখল বা অস্ত্রবাজি করে এবারের ভোটে জয়ী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

আজ শনিবার রাজশাহীর আঞ্চলিক লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অঞ্চলির নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভার শুরুতে সাংবাদিকদের এ কথা জানান এ এম এম নাসির উদ্দিন। তাঁর ভাষ্য, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুরোদমে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।

দেশের ক্রান্তিলগ্নে দায়িত্ব নিয়েছেন উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘এই নির্বাচনের ওপর দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। আমরা গণতন্ত্রের পথে হাঁটব কি না, দেশ কোন দিকে যাবে, তা এই নির্বাচনের মাধ্যমেই নির্ধারিত হবে। তাই এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। দেশ ও জাতি আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে, ইতিহাস আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা একটি ঐতিহাসিক ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, নির্বাচন কমিশন সেই প্রতিশ্রুতির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে এবং তা বাস্তবায়নে সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করবে।’

নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, ছুটির দিনেও কমিশনের কর্মকর্তারা কাজ করছেন এবং সার্বক্ষণিক প্রস্তুতি চলছে। ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে, সেখানে প্রায় ২১ লাখ মৃত ভোটারকে বাদ দেওয়া হয়েছে এবং প্রায় ৪৪ লাখ নতুন ভোটারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আগামী এক-দুই সপ্তাহের মধ্যেই চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব। পাশাপাশি নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে। এ–সংক্রান্ত শুনানি শেষে দ্রুতই তা চূড়ান্ত করা হবে। নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের বিষয়টিও সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করার আশা করা যাচ্ছে।

নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কঠোর বার্তা দিয়ে সিইসি বলেন, যাঁরা ভাবছেন অস্ত্রবাজি করে নির্বাচনে জিতবেন, তাঁদের সেই ইতিহাস ভুলে যেতে হবে। তাঁরা ঘুঘু দেখেছেন, ফাঁদ দেখেননি। এবার তাঁদের দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে। কোনো কেন্দ্রে বা পুরো আসনে বড় ধরনের অনিয়ম হলে সেই নির্বাচন বাতিল করে দেওয়ার ক্ষমতা কমিশনের রয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে জোরালো অভিযান চালানো হবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীকেও অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

নিরপেক্ষতা নিয়ে কোনো সংশয়ের অবকাশ নেই উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে নই, কোনো প্রার্থীর পক্ষেও নই। আমরা দেশের ১৮ কোটি জনগণ ও পৌনে ১৩ কোটি ভোটারের পক্ষে। আমরা আইন, সংবিধান ও বিধি দ্বারা পরিচালিত হব।’

এক প্রশ্নের জবাবে নিজের দৃঢ় অবস্থানের ব্যক্ত করে সিইসি বলেন, ‘যেদিন কোনো সরকার চাইবে তাদের হুকুমমতো কাজ করি, সেদিন নাসির উদ্দিন এই চেয়ারে থাকবে না—এই গ্যারান্টি আমি দিতে পারি।’

নির্বাচনে অনিয়মের ব্যাপারে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সতর্ক করেছেন সিইসি। তিনি বলেন, ‘অতীতে যাঁরা ভোট জালিয়াতির সঙ্গে স্বপ্রণোদিত হয়ে জড়িত ছিলেন, তাঁদের আসন্ন নির্বাচনে কোনো প্রকার দায়িত্ব দেওয়া হবে না। আপনারা যতটুকু চিন্তা করছেন, আমরা এর চেয়ে বেশি সজাগ আছি।’