রাজশাহীর বাঘায় পদ্মার মধ্য চকরাজাপুর চরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন সোবহান মন্ডলের পরিবার। পদ্মা থেকে প্রায় কোয়াটার কিলোমিটার দূরে জমি ভাড়া নিয়ে সোবহান মন্ডল গত বছর বাড়ি করেছিলেন। পদ্মার ভাঙনে ভাঙতে ভাঙতে এবার বাড়িটির ধারে এসেছে। যে কোনো সময় বাড়িটি পদ্মা গর্ভে চলে যাবে।
তীর থেকে দূরে কোনো জায়গা না পাওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ৬ সদস্যের পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন ওই ঘরেই।
জানা গেছে, ৫০ বছর আগে বর্তমান বাড়ি থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিম দিকে প্রথম বাড়ি করেন সোবহান মন্ডল। সেখানে কয়েক বছর বসবাস করার পর ভাঙনে চলে যায়। পরে সেখান থেকে তিন কিলোমিটার পূর্ব দিকে জমি কিনে বাড়ি করে সেখানেও ভাঙন থেকে রক্ষা পাননি। ওই জায়গা থেকে আবারও ৪ কিলোমিটার পূর্ব দিকে জমি কিনে বাড়ি করেন। তাতেও ভাঙনে তাদের সমস্ত বাড়িঘর পদ্মায় বিলিন হয়ে যায়। সর্বশেষ ২০২৩ সালের শেষের দিকে কোয়াটার কিলোমিটার পূর্বে চকরাজাপুর হাইস্কুলের দক্ষিণে ৫ কাঠা জমি বছরে ৫ হাজার টাকা চুক্তিতে ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। বর্তমানে পদ্মার ভাঙন বাড়ির কাছে চলে এসেছে। যে কোনো সময় পদ্মা গর্ভে চলে যাবে ভাড়া জায়গায় করা বাড়িটি। এরপরও জমি না পাওয়ার কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে পরিবারটি।
এ বিষয়ে সোবহান মন্ডলের স্ত্রী হাসেনা বেগম বলেন, আমার স্বামী দীর্ঘদিন থেকে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে ঘরে পড়ে আছেন। কেউ কোনো সহযোগিতা করে না। ছেলে হাসিনুর রহমান পদ্মায় মাছ ধরে যা পায়, তা বিক্রি করে সংসার চলে।
হাসিনুর রহমানের স্ত্রী ও তিনটি সন্তান রয়েছে। বড় ছেলে মানিক মন্ডল চকরাজাপুর হাইস্কুলে দশম শ্রেণিতে, মেয়ে জেসমিন খাতুন নবম শ্রেণিতে এবং নাসরিন খাতুন একই স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে।
হাসিনুর রহমানের স্ত্রী জয়গন বেগম বলেন, একজনের আয় দিয়ে সংসার চালানো খুব কষ্ট হয়। নদীতে সব সময় মাছ পাওয়া যায় না। অসুস্থ শ্বশুর ও বৃদ্ধ শাশুড়ি এবং তিন সন্তানের লেখাপড়া করানো; একজনের আয় দিয়ে এসব চালালে হিমশিম খেতে হয়। টাকার অভাবে শ্বশুরের চিকিৎসা করাতে পারছি না। এদিকে নদীর ভাঙন বাড়ির কাছে চলে এসেছে। রাতে ঘরে ঘুমিয়ে শান্তি পাই না। যে কোনো সময়ে পদ্মা গর্ভে চলে যাবে। ধারির নিচে ৫০ ফিট গভীর।
সোবহান মন্ডলের মতো ঝুঁকিতে আছেন জয়নাল হোসেন, আজিজুর রহমান, সাইম হোসেন, নয়ন আলী, শহিদুল ইসলাম, মাহাবুল হোসেনের পরিবার।
এ বিষয়ে চকরাজাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বলেন, শুধু সোবহান মন্ডল বা সাইম হোসেন, নয়ন আলী, শহিদুল ইসলাম, মাহাবুল হোসেনের পরিবার ঝুঁকিতে বসবাস করছেন। পদ্মার পানি কমে যাওয়ার পর নতুন করে আবারও পানি বাড়তে শুরু করেছে। এ পানি অনেকের উঠানে উঠেছে। তারা খুব কষ্টে ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাম্মী আক্তার বলেন, পদ্মায় আবার নতুনভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তা অবগত হয়েছি।