১৮০ টাকার জন্য পরীক্ষা দিতে দিলেন না প্রধান শিক্ষক
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পুনটে অবস্থিত মঞ্জুর আইডিয়াল স্কুলে পরীক্ষার ফি দিতে না পারায় দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে পরীক্ষার কক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (১৮ আগস্ট) সকালে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী শিশু শিক্ষার্থী সুরাইয়া মনি (৮) উপজেলার জালাইগাড়ী গ্রামের দিনমজুর সাইফুল ইসলামের মেয়ে।
স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে, স্কুলটিতে জাতীয় পতাকার স্ট্যান্ড থাকলেও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়নি। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রচণ্ড গরমে টিনশেড কক্ষে ক্লাস নিতে হয়, কখনো আবার খোলা মাঠে গাছের নিচে ক্লাস করানো হয়। এ ছাড়া, কোচিং করানো নিষিদ্ধ থাকলেও স্কুলে আলাদাভাবে কোচিং করানো হচ্ছে।
চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী নাহিদা আক্তার বলেন, এ স্কুলে পড়তে মাসে ৩০০ টাকা বেতন দিতে হয়, কোচিং ফি ৩০০ টাকা। আর পরীক্ষার সময় পরীক্ষার ফি দিতে হয় ১৮০ টাকা।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাকিব হাসান বলে, সুরাইয়া মনি ক্লাসের মূল্যায়ন পরীক্ষায় বসতে এলে প্রধান শিক্ষক তাকে ফিরিয়ে দেন। তখন সে স্কুলের মাঠে দাঁড়িয়ে কাঁদতে থাকে।
ভুক্তভোগী ছাত্রী সুরাইয়া মনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানায়, ‘হেড স্যার আমাকে বলেন, তোর বাবা টাকা দিতে পারে না, তোর পরীক্ষা দিতে হবে না। বাড়ি যা। এরপর আমাকে ঘাড় ধরে বের করে দেন। আমার সহপাঠীরা সবাই পরীক্ষা দিলেও আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলাম।
শিক্ষার্থীর বাবা সাইফুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা গরিব মানুষ। দিনমজুরি করে সংসার চালাই। প্রতি মাসেই বেতন দিই, হয়তো দেরি হয়। কিন্তু বকেয়া ছিল না। শুধু পরীক্ষার ফি ১৮০ টাকা বাকি ছিল। আজ দিতে আসতেই দেখি আমার মেয়েকে কক্ষ থেকে বের করে বাহিরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। বাচ্চার কান্না আমি সহ্য করতে পারিনি। এ দৃশ্য দেখার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষিকা এমিলি ইয়াসমিন রিনা সাংবাদিকদের প্রশ্নে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
কালাই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) রাশেদুল ইসলাম বলেন, কিন্ডারগার্টেন স্কুল আমাদের অধীনে নয়। এগুলো ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। শুধু সরকারি বই আমরা বিতরণ করি।
কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামিমা আক্তার জাহান বলেন, শিক্ষার্থীর বাবা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।