নিহত শাওন রেজার বাড়ি সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ডিডি শাহবাজপুর গ্রামে নিকটাত্মীয় ও প্রতিবেশীরা এসেছেনছবি: প্রথম আলো

সিরাজগঞ্জে ‘র‍্যাবের ভয়ে’ নদীতে ঝাঁপ দিয়ে তরুণের মৃত্যু, র‍্যাব সদস্যকে পুলিশে সোপর্দ

সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলায় র‍্যাব সদস্যদের দেখে ভয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পানিতে ডুবে মারা গেছেন শাওন রেজা (২৪) নামের এক তরুণের। এ ঘটনার পর ক্ষুব্ধ জনতা র‍্যাবের একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং এক র‍্যাব সদস্যকে ধরে থানায় সোপর্দ করে। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় উপজেলার ডিডি শাহবাজপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত শাওন রেজা ওই গ্রামের নুরুল হক ও শিরিন খাতুন দম্পতির ছেলে। তিনি স্ত্রী ও ১৮ মাস বয়সী এক ছেলেশিশু রেখে গেছেন।

আজ সোমবার সকালে ডিডি শাহবাজপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, শাওনের বাড়িতে ভিড় করেছেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। ঘরে চলছে স্ত্রী ও মায়ের আহাজারি। তখনো লাশ বাড়িতে পৌঁছায়নি, সবাই নিস্তব্ধ হয়ে অপেক্ষা করছিলেন।

থানা-পুলিশ, র‍্যাব-১২ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল সন্ধ্যায় দুটি মোটরসাইকেলে চার র‍্যাব সদস্য সাদা পোশাকে গ্রামে প্রবেশ করেন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল মাদক উদ্ধার অভিযান। সেখানে গিয়ে তাঁরা নাজমুল হাসান (২৪) নামের এক তরুণকে ধরে মারধর করতে থাকেন। এ দৃশ্য দেখে ভয় পেয়ে পাশের দোকানে বসে থাকা শাওন রেজা ফুলজোড় নদীতে ঝাঁপ দেন। তিনি পানিতে ভেসে হাত নেড়ে চিৎকার করছিলেন।

শাওনের বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘ছেলে চিৎকার করে “বাঁচাও, বাঁচাও বলছিল”। আমি নদীতে নামতে চাইলে চারজন র‍্যাব সদস্য আমাকে আটকে দেন। পরে জোর করেই আমি নদীতে নামি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর অচেতন অবস্থায় ছেলেকে উদ্ধার করি। তখনই গ্রামের লোকজনকে বলি, এই লোকগুলোই আমার ছেলে হত্যা করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে নদীতে নামতে না দেওয়ায় ছেলেকে বাঁচানো যায়নি। পরে গ্রামবাসী একজনকে ধরে থানায় দেয়, বাকি তিনজন পালিয়ে যায়।’

শাওনকে দ্রুত কামারখন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মমিন উদ্দিন বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে পানিতে তলিয়ে যাওয়া অবস্থায় আনা হয় শাওনকে। তবে হাসপাতালে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়।

শাওনের মৃত্যুর পর গ্রামে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ জনতা র‍্যাবের একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে একজন র‍্যাব সদস্যকে ধরে থানায় সোপর্দ করে।

কামারখন্দ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল লতিফ বলেন, লাশ উদ্ধার করে রাতেই ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। শাওনের বাবা বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা করেছেন। তাঁর নামে তিন বছর আগের একটি মাদক মামলা আছে। গ্রামবাসী যে র‍্যাব সদস্যকে থানায় দিয়েছেন, তাঁকে পরে র‍্যাব সদর দপ্তরে নেওয়া হয়।

নিহত শাওনের বাবা নুরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ‘পুলিশ রাতে আমাকে কাগজে স্বাক্ষর করতে দিয়েছে, কিন্তু কী লেখা ছিল তা জানি না। আমি বলেছি, আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। এর ন্যায়বিচার চাই।’

এ সম্পর্কে র‍্যাব-১২ এর উপ–অধিনায়ক মেজর আহসান হাবিব আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, রোববার কামারখন্দে র‍্যাবের কোনো অভিযান ছিল না। গোয়েন্দা ইউনিটের কয়েকজন মাঠকর্মী মাদকসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য গিয়েছিলেন। তাঁদের দেখে ভয়ে ওই তরুণ নদীতে ঝাঁপ দিয়ে ডুবে মারা যান। এ সময় গ্রামবাসী মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে একজন সদস্যকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।