অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে গ্রেফতার হয়েছিলেন ভারতীয় নাগরিক রামদেব মাহাতো (৬০)। পরে আদালতে সাজা হয়েছিল ৬ মাস। সাজা শেষে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারা কর্তৃপক্ষ তাকে দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু মামলার নথিপত্রে রামদেবের ভারতের যে ঠিকানা লেখা ছিল, তা খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই ৬ মাসের সাজা শেষেও ৬ বছর ৩ মাস কেটে যায়। রামদেবের বাড়ি ফেরা হচ্ছিল না।
অবশেষে বাংলাদেশি সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী শামসুল হুদার প্রচেষ্টায় দেশে ফিরেছেন রামদেব। সামাজিক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে শামসুল হুদা দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দী বিদেশীদের দেশে ফেরাতে কাজ করে আসছেন। এ পর্যন্ত তিনি বিদেশী ৮০ বন্দীর বিষয়ে কাজ শুরু করে ৫২ জনকে দেশে ফেরাতে সক্ষম হয়েছেন। এছাড়া ভারতে পাচার হওয়ার পর দেশটির কারাগারে থাকা কিছু নারীকেও তিনি দেশে ফিরিয়ে এনেছেন। এমন কার্যক্রমের জন্য তিনি ইতোমধ্যে ‘বাংলাদেশের বজরঙ্গি ভাইজান’ নামে পরিচিতি পেয়েছেন।
রামদেব মাহাতো ভারতের বিহার রাজ্যের পশ্চিম চাঁমপাড়ান জেলার গুদ্রা নামক গ্রামের বাসিন্দা। বাংলাদেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করার কারণে ২০১৮ সালের ৩০ নভেম্বর তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে গ্রেফতার হন। পরে আদালত তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন। সাজার মেয়াদ শেষ হয় ২০১৯ সালের ২৯ মে। ৬ বছর ৩ মাস ১৬ দিন বাড়তি জেল খাটার পর সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরেছেন।
তাকে নিতে এসেছিলেন ছেলে সুনীল মাহাতো এবং গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান লাল বাচ্চা যাদব। ছিলেন বিএসএফ সদস্যরাও। এ পারে ছিলেন পুলিশ, বিজিবি ও কারারক্ষীরা। সকালেই তাকে জেলা কারাগার থেকে বের করে সীমান্তে নেওয়া হয়। সকাল থেকেই সঙ্গে ছিলেন ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ শামসুল হুদা। রামদেবকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করতে পেরে তিনি খুশি।
রামদেবের ঠিকানা খুঁজে বের করার গল্পটা শোনালেন শামসুল হুদা। জানালেন, গ্রেফতারের সময় রামদেব হিন্দি ভাষায় তার নাম-ঠিকানা বলেছিলেন। এ পারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য সেটি লেখার সময় হিন্দি ঠিকঠাক বুঝতে পারেননি। তিনি লিখেছিলেন ভুল করে। ফলে সাজার মেয়াদ শেষে কারা কর্তৃপক্ষ যখন তাকে ফেরানোর উদ্যোগ নেয়, তখন ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায়নি। গত বছরের ২৩ অক্টোবর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলার জাকির হোসেন বিষয়টি তাকে অবহিত করেন। এরপর তিনি ঠিকানা খুঁজতে থাকেন।
শামসুল হুদা জানান, নথিপত্রে যেসব স্থানের নাম ছিল সেগুলোর কাছাকাছি জায়গার নাম তিনি তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে পৌঁছে যান বিহারের গুদ্রা গ্রামে। যোগাযোগ করেন গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান লাল বাচ্চা যাদবের কাছে। তার কাছে রামদেবের ছবি পাঠান। এভাবেই গত বছরের ২০ নভেম্বর রামদেবের পরিবারকে খুঁজে পাওয়া যায়।
এরপর ২৩ নভেম্বর বিষয়টি বাংলাদেশে ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাসে রামদেবের প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্টসহ ইমেইল পাঠানো হয়। রামদেব মাহাতোর জাতীয় পরিচয় ও নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাই শেষে ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাস পরে একটি ছাড়পত্র বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাগজ আদান-প্রদানের পর তাকে প্রত্যার্পণের অনুমতি মেলে। সব প্রক্রিয়া শেষে সোমবার রামদেবকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারাগার থেকে বের করে দেশে পাঠানো হয়।
শামসুল হুদা জানান, গত কয়েক মাস আগে কারা অধিদপ্তর থেকে ১৪০ জন ভারতীয় নাগরিকের একটি তালিকা তিনি পেয়েছেন। এগুলোরও অধিকাংশেরই কোনো রকম ঠিকানা দেওয়া নেই। সেটি নিয়ে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে ওই তালিকা থেকে বেশ কয়েকজনের পরিবারকেও খুঁজে পেয়েছেন। তাদেরও দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।