রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ভবনছবি: প্রথম আলো

পাঁচ প্যানেলে বিভক্ত সাবেক ৯ সমন্বয়ক

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সবশেষ গঠিত ১৭ জনের সমন্বয়ক কমিটি ছিল। জুলাই আন্দোলন থেকে এই সমন্বয়কেরা ক্যাম্পাসে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। আসন্ন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট প্রতিনিধি নির্বাচনে এই সমন্বয়কেরা কে কোন পদে নির্বাচন করবেন, তা ছিল আলোচিত বিষয়।

ক্যাম্পাসের অনেকের ধারণা ছিল, এই সমন্বয়কদের উদ্যোগে একক কোনো প্যানেল আসতে পারে। তবে সমন্বয়কদের কয়েকজনের রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ পাওয়ায় এবং নিজেদের মধ্যে ‘বনিবনা’ না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত সে ধারণা একরকম ভেস্তে যায়।

রাকসু নির্বাচন ২৫ সেপ্টেম্বর। সাবেক ১৭ সমন্বয়কের মধ্যে ১০ জন প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে ৯ জন রাকসুতে ও ১ জন হল সংসদে নির্বাচন করছেন। ১০ জনের মধ্যে ১ জন স্বতন্ত্রভাবে, আর বাকি ৯ জনই পাঁচটি প্যানেলে যুক্ত হয়ে নির্বাচন করছেন। নির্বাচন করতে যাওয়া ১০ সাবেক সমন্বয়কের মধ্যে ১ জন নারী রয়েছেন।

১৭ সমন্বয়কের মধ্যে ছাত্রত্ব নেই বলে নির্বাচন করতে পারছেন না ৫ জন। আর ছাত্রত্ব থাকা সত্ত্বেও নির্বাচন করছেন না দুজন, এই দুজনই নারী শিক্ষার্থী। তাঁদের ভাষ্য, জুলাই আন্দোলনের পর থেকে সাইবার বুলিংয়ের শিকার তাঁরা।

রাকসু নির্বাচন উপলক্ষে এ পর্যন্ত নয়টি প্যানেল আত্মপ্রকাশ করেছে। এর মধ্যে পাঁচটি প্যানেলে সাবেক সমন্বয়কেরা রয়েছেন। ৭ সেপ্টেম্বর থেকে বিভিন্ন প্যানেলের ঘোষণা আসতে থাকে। ওই দিন দুপুরে ছাত্রদল আর বিকেলে ছাত্রশিবির প্যানেল ঘোষণা করে। ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে প্রার্থী হন সাবেক সমন্বয়ক ফজলে রাব্বি মো. ফাহিম রেজা।

৮ সেপ্টেম্বর ঘোষিত হয় আরেকটি প্যানেল ‘রাকসু ফর রেডিক্যাল চেঞ্জ’। এখানে সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী মারুফ ভিপি প্রার্থী হয়েছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি। ৯ সেপ্টেম্বর আত্মপ্রকাশ ঘটা ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’ প্যানেল থেকে ভিপি পদে লড়বেন সাবেক সমন্বয়ক ফুয়াদ রাতুল। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক।

তিনজন সাবেক সমন্বয়কের উদ্যোগে ১০ সেপ্টেম্বর ঘোষিত হয় ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেল। এই প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী হয়েছেন মেহেদী সজীব, জিএস পদে সালাউদ্দিন আম্মার ও সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে আকিল বিন তালেব।

গতকাল ১১ সেপ্টেম্বর ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’ নামে আরেকটি প্যানেলের আত্মপ্রকাশ হয়। এতে সাবেক দুই সমন্বয়ক রয়েছেন। ভিপি প্রার্থী হয়েছেন সাবেক সমন্বয়ক তাসিন খান। তাঁকে রাকসুর ইতিহাসে প্রথম নারী ভিপি প্রার্থী বলে দাবি করছেন বিশ্ববিদ্যালয়–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ প্যানেল থেকে এজিএস পদপ্রার্থী মাহাইর ইসলাম।

এদিকে মো. আতাউল্লাহ নামে সাবেক সমন্বয়ক পরিবেশ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন। তিনি এখন পর্যন্ত কোনো প্যানেলে যুক্ত হননি। আরেক সাবেক সমন্বয়ক নুরুল ইসলাম (শহিদ) নবাব আব্দুল লতিফ হল সংসদে ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘নবাবীয়ান ঐক্যজোট’ প্যানেল থেকে জিএস পদে নির্বাচন করছেন।

ছাত্রত্ব না থাকায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী হাসান (মুন্না), গোলাম কিবরিয়া মো. মিশকাত চৌধুরী, মাসুদ রানা, মো. নওসাজ্জামান, তানভীর আহমেদ রিদম।

সমন্বয়কদের মধ্যে কেন এই বিভাজন? সেই প্রশ্নের জবাবে ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেল থেকে রাকসুর ভিপি প্রার্থী সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, ‘ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের নিয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কমিটি হয়েছে। তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের কমিটি হয়নি। শেষ পর্যন্ত চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু একত্র করা যায়নি। তবে সবার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ভালো করার মনোভাব আছে।’

সমন্বয়কদের পৃথক প্যানেলের বিষয়ে তাসিন খান বলেন, ‘আমরা আলাদা প্যানেল দিয়েছি মানে এই না আমাদের মতাদর্শে অমিল রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে আমরা এখনো একত্রে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করব।’

ছাত্রশিবিরের প্যানেলে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে সাবেক সমন্বয়ক ফজলে রাব্বি মো. ফাহিম রেজা বলেন, ‘স্বতন্ত্রভাবে জিএস পদে নির্বাচনের আকাঙ্ক্ষা ছিল। পরে ইসলামী ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে ইনক্লুসিভ প্যানেল করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে আমি ছাত্রশিবিরের প্যানেলে নির্বাচন করার সম্মতি দিই।’

নির্বাচনে অংশ না নেওয়া সাবেক দুই নারী সমন্বয়কদের একজন ফৌজিয়া নৌরিন। তিনি প্রথম আলো কে বলেন, ‘আমি এত বেশি সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়েছি যে নিজের মধ্যে মানসিক শক্তি ধরে রাখতে পারিনি। এখন নির্বাচনে অংশ নিলে আবার এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। প্রশাসন এ ক্ষেত্রে পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ জন্য নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি না।’

রাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ইচ্ছা ছিল সাবেক সমন্বয়ক অহনা মৃত্তিকার। নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নারী শিক্ষার্থীরা মিছিলের সামনের সারিতে ছিল। কিন্তু আন্দোলনের পর আর নারী শিক্ষার্থীদের কেউ পাশে রাখেনি বা মনে রাখেনি। সেই সঙ্গে নারী শিক্ষার্থীদের নানাভাবে সাইবার বুলিং করা শুরু হলো। নির্বাচনের পরিবেশ না থাকা ও সাইবার বুলিংয়ের শঙ্কায় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি না।’