সাফল্য উদ্যাপনের অনুষ্ঠানে ভালো মানুষ হওয়ার প্রত্যয় শিক্ষার্থীদের
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সকালের স্নিগ্ধতা ফিকে হয়ে যায়। প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। তবে প্রখর তাপও দমাতে পারেনি রাজশাহীর কৃতী শিক্ষার্থীদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। নেচে-গেয়ে, ছবি তোলার মধ্য দিয়ে তারা মেতে ওঠে সাফল্যের স্বীকৃতি উদ্যাপনে। দুপুর পর্যন্ত চলা এ সংবর্ধনা শেষে প্রত্যেকের চোখেমুখে ছিল ভালো মানুষ হওয়ার প্রত্যয়।
‘স্বপ্ন দেখো জীবন গড়ো’ স্লোগানে র পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যতিক্রমী এ সংবর্ধনার আয়োজন করে প্রথম আলো। রাজশাহী মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসব।
রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলা থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া তিন হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অনুষ্ঠানে অংশ নিতে নিবন্ধন করে। প্রবেশপথের বুথ থেকে কার্ড, নাশতা ও ক্রেস্ট সংগ্রহ করে তারা উৎসব প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে। মঞ্চের অনুষ্ঠান সকাল ১০টায় শুরু হলেও তার অনেক আগেই মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকেরাও যোগ দেন আনন্দযজ্ঞে। এত বড় মাঠ দেখে শিক্ষার্থীরা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে।
রাজশাহী বন্ধুসভার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদিকা সোনালী ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. নাহিদ হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী, মাউশির রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আলমাছ উদ্দিন। প্রথম আলো সম্পাদকের পাঠানো শুভেচ্ছা চিঠি পাঠ করে শোনান প্রথম আলোর রাজশাহী প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম। বক্তারা কৃতী শিক্ষার্থীদের মিথ্যা, মুখস্থবিদ্যা এবং মাদককে ‘না’ বলার অঙ্গীকার করান।
অনুষ্ঠানের প্রতিটি ক্ষণ ছিল নাচগানে ভরপুর। ফাঁকে ফাঁকে চলে মনোজ্ঞ আলোচনা। শিখোর পক্ষে শিশির ও জাভেদ তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা বলে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করেন। মঞ্চ থেকে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে কিছু প্রশ্ন করা হয় এবং হাত তুলে শিক্ষার্থীরা তার উত্তর দেয়। সঠিক উত্তরদাতাদের মঞ্চে ডেকে পুরস্কৃত করা হয়।
অনুষ্ঠানে থিম সংয়ের সঙ্গে মনোমুগ্ধকর নৃত্য পরিবেশন করে কৃতী শিক্ষার্থী অর্পিতা ভৌমিক, শ্রেয়া বসাক, তৃষা দত্ত, অর্পিতা রায় ও পূজা চৌধুরী। এরপর মঞ্চে উঠে আসে কৃতী শিক্ষার্থী সুপ্রভা সরকার চারু, যার কণ্ঠে ধ্বনিত হয় ‘ধন ধান্য পুষ্প ভরা’ গানটি। বন্ধুসভার সদস্য আবদুল হাকিম গেয়ে ওঠেন ‘বন্ধে মায়া লাগাইছে পিরিতি শিখাইছে’। ‘মরার বাঁশি বাজে তালে তালে’ গানে নৃত্য পরিবেশন করে অর্পিতা ভৌমিক ও শ্রেয়া বসাক। অতুল মুখোপাধ্যায়ের ‘আমি বাংলার গান গাই’ গানের সঙ্গে ভায়োলিন বাজিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয় শিক্ষার্থী ঔড়ব আজাদ।
আয়োজনের মধ্যেই মঞ্চে এসে কৃতী শিক্ষার্থীদের পক্ষে বক্তব্য দেয় সৌগত দাস। সে শিখো ও প্রথম আলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে ভবিষ্যতে আরও ভালো করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে। পাশাপাশি আগামী দিনেও শিখো ও প্রথম আলোকে পাশে থাকার আহ্বান জানায়।
অনুষ্ঠানে মাউশির কর্মকর্তা আলমাছ উদ্দিন বলেন, ‘শিক্ষা ছাড়াও আমাদের দেশে অনেক মনীষীর জন্ম হয়েছে। কিন্তু আমরা যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে মনীষীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে অন্তত খানিকটা মনুষ্যত্ববোধসম্পন্ন মানুষ হতে না পারি, সেই লজ্জা রাখার জায়গা আমাদের থাকবে না।’ তিনি কৃতী শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান।
একপর্যায়ে মঞ্চে হাজির হন নূর মোহাম্মদ নামের একজন কৃষক। সঞ্চালক জানান, তিনি কেবলই ধানখেত থেকে উঠে এসেছেন। মাত্র দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও তিনি অসংখ্য ধানের নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন। গত বছর তিনি বিজ্ঞানীদের সম্মেলনে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়েছিলেন। এ কথা শুনে শিক্ষার্থীরা করতালি দিয়ে তাঁকে সম্মান জানায়।
মঞ্চে আসেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী জাহিদ অন্তু। তাঁর মনোমুগ্ধকর গানে শিক্ষার্থীরা নেচে-গেয়ে সুর মেলায়। অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজিত অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের হাতে বই তুলে দেওয়া হয়। পুরস্কার পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে জুবায়ের আহমেদ, আদনাফ শাহরিয়ার আদিল, আবদুল আলিম, নাফিজ আল হাসান, তাসফিক আহমেদ, আরিফুল ইসলাম, সাব্বির ইসলাম, চিন্ময় সরকার, আমির হামজা ও তাহিয়া তাবাসসুম উল্লেখযোগ্য।
আয়োজনটি পাওয়ার্ড বাই কনকা-গ্রি এবং সহযোগিতায় থাকছে কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি, কোয়ালিটি গ্রুপ, আকিজ টেলিকম লিমিটেড, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, আম্বার আইটি লিমিটেড, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।