রাজশাহীর গুদামে গুদামে পচা চাল, সরবরাহকারীদের নামের তালিকা উধাও

রাজশাহীর গুদামে গুদামে পচা চাল, সরবরাহকারীদের নামের তালিকা উধাও

রাজশাহীর দুই উপজেলার পাঁচ গুদামের পচা চাল অপসারণ শুরু হয়েছে মঙ্গলবার থেকে। এরই মধ্যে পাঁচ গুদামের ৯৫৪ বস্তা পচা চাল অপসারণ করা হয়েছে। তবে সরবরাহকারীদের নামের তালিকা উধাও হয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বুধবারও গুদামগুলো থেকে পচা চাল অপসারণের কার্যক্রম অব্যাহত ছিল।

জেলা খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পবা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. নুরুন্নবী পচা চাল অপসারণের কার্যক্রম তদারক করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গুদামগুলোতে যে পরিমাণ পচা চাল মজুত রয়েছে তা যাচাই-বাছাই করে অপসারণ করতে এক মাসেরও বেশি সময় লেগে যাবে। অপসারণ করা পচা চালগুলো খাদ্য বিভাগের পরিত্যক্ত কোনো গুদামে স্থানান্তর করা হচ্ছে বলে খাদ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এদিকে পাঁচ গুদামে হাজার হাজার বস্তা পচা চাল কাদের মাধ্যমে খাদ্য গুদামগুলোতে ঢুকেছে তাদের খুঁজে বের করতে খাদ্য বিভাগ রহস্যজনকভাবে নীরব রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি চাল সরবরাহ সংক্রান্ত রেজিস্টার ও পরিদর্শন বহি গুদামগুলো থেকে উধাও হয়ে গেছে। এ কারণে জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি এসব নথিপত্র খুঁজে পাচ্ছেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুল ইসলাম জানান, গুদামে চাল সরবরাহের রেজিস্টার ও এসব চালের মান যাচাই বাছাই সংক্রান্ত পরিদর্শন বহিগুলো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে কারা বা কাদের মাধ্যমে এসব পচা চাল গুদামে ঢুকেছে তাদের নাম ঠিকানা কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া এসব চাল গুদামে গ্রহণের সময় খাদ্য বিভাগের কারা চালের ফিজিক্যাল ও গুণগতমান যাচাই করেছেন সেই পরিদর্শন বহিও পাওয়া যায়নি। এ কারণে সরবরাহকারীদের বিষয়ে কোনো তথ্য জানা যায়নি।

খাদ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, গত ২৬ আগস্ট জেলার দুর্গাপুর খাদ্যগুদামে ১৩২ বস্তা এবং ৪ সেপ্টেম্বর বাগমারার ভবানীগঞ্জের চার খাদ্য গুদামে শত শত বস্তা পচা চাল পাওয়া যায়। পরে এসব খাদ্য গুদামে সিলগালা করেন স্থানীয় প্রশাসন। এসব পচা চাল যাচাই-বাছাই করে অপসারণের অনুমতি দেওয়া হলেও এখনো প্রশাসন খাদ্য বিভাগের কাছে গুদামগুলো হস্তান্তর করেনি।

বাগমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুল ইসলাম আরও জানান, পচা চাল যাচাই-বাছাই করে অপসারণে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। কারণ পচা চালের পরিমাণ অনেক।

উল্লেখ্য, বাগমারার ভবানীগঞ্জের চার গুদামে ২ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন মজুত চালের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগই খাওয়ার অনুপযোগী ও পচা চাল বলে জানা গেছে। এই বিপুল পরিমাণ পচা চাল গত জুন ও জুলাই মাসে গুদামগুলিতে ঢুকানো হয়।

খাদ্য বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিভিন্ন চালকল মালিকের কাগজপত্রে এসব পচা চাল গুদামে ঢুকায় স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতা। যারা আগে কোনোদিন ধান চালের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল না। পরিত্যক্ত এসব চাল তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে ২০ থেকে ২৫ টাকা করে কিনে সরকারি গুদামগুলোতে ৪৯ টাকা কেজি দরে গুদামে সরবরাহ করেন। গুদাম কর্মকর্তাদের হাত করে তারা বিপুল পরিমাণ টাকাও উত্তোলন করে নিয়েছেন।

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আফিয়া আকতার জানান, জেলার কয়েকটি গুদামে বিপুল পরিমাণ পচা চাল পাওয়ার বিষয়টি খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তরকে অবহিত করা হয়েছে। পচা চাল গুদামে মজুত ও উপকারভোগীর জন্য সরবরাহের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ও পৃথকভাবে তদন্ত করছে। বিপুল পরিমাণ পচা চাল সরবরাহ ও মজুতের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।

তিনি আরও জানান, জেলার সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতাধীন বিভিন্ন প্রকল্পের উপকারভোগীদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ ও বিক্রয় কার্যক্রম বিকল্প উপায়ে অব্যাহত রাখা হয়েছে।

এদিকে জানা গেছে, বিপুল পরিমাণ পচা চাল মজুত ও সরবরাহের সঙ্গে জড়িতদের অন্যতম ভবানীগঞ্জ গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাচ্চু মিয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও দুর্গাপুর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি জেলা খাদ্য বিভাগ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. ওমর ফারুক বুধবার জানান, খাদ্য বিভাগের পৃথক একটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তারাই পচা চালগুলো গুদামে আলাদা করে রাখছে। সিলগালা করা খাদ্য গুদামগুলো বৃহস্পতিবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এসব পচা চাল কারা কিভাবে সরবরাহ করেছে তা তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রকাশ করা হবে।