হিন্দুপল্লিতে হামলার এক সপ্তাহ পর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় আলদাদপুর নতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েছবি: প্রথম আলো

দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় হিন্দুপল্লিতে হামলার ঘটনার এক সপ্তাহ পরও সেখানকার দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি।

আজ রোববার দুপুরে গিয়ে জানা যায়, আলদাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৮৭ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৯৩ জন বিদ্যালয়ে এসেছে। আর আলদাদপুর দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে ৩০২ শিক্ষার্থীর মধ্যে এসেছে মাত্র ১৩।

আলদাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আলদাদপুর দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের আশপাশেই গত ২৬ ও ২৭ জুলাই দুই দফায় হিন্দুপল্লিতে হামলার ঘটনা ঘটে। গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রশাসনের হিসাবে এ ঘটনায় ১৫টি বসতঘর ভাঙচুর করা হয়েছে।

আজ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের দেখা যায়। স্কুলের ভেতরেও পুলিশ অবস্থান করছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কালী রঞ্জন রায় বলেন, বিদ্যালয়ের ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী সনাতন ধর্মাবলম্বী। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবস্থান করায় গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত ছিল। আজ থেকে শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের বিদ্যালয়ে আনা হচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘটনার পর অনেক শিক্ষার্থী পরিবারসহ আত্মীয়স্বজনের বাড়ি চলে যায়। তাদের কেউ কেউ এখনো ফেরেনি।

বেলা একটার দিকে আলদাদপুর দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষগুলোতে কোনো শিক্ষার্থীকে দেখা গেল না। প্রধান শিক্ষক খগেন্দ্র নাথ মোহন্তও বিদ্যালয়ে নেই।

সহকারী প্রধান শিক্ষক নিখিল চন্দ্র রায়, জয়ন্ত কুমার রায়সহ চারজন সহকারী শিক্ষকদের রুমে বসে ছিলেন। জয়ন্ত কুমার বলেন, হামলার ঘটনার এক সপ্তাহ পর ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নগণ্য। তিনি ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাজিরা বই হিসাব করে জানান, বিদ্যালয়ে এসেছে মাত্র ১৩ জন। তারাও প্রথম ক্লাসের পর বাড়ি চলে গেছে। হামলার আগে ২৩ জুলাই এই বিদ্যালয়ে ১৪৯ জন শিক্ষার্থী উপস্থিতি ছিল।

কথা হয় সহকারী শিক্ষক নিখিল চন্দ্রের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের মনের ভয় কাটছে না। মানসিক শান্তি না আসা পর্যন্ত অভিভাবকেরা শিক্ষার্থীদের পাঠাতে চাচ্ছেন না।

প্রধান শিক্ষক খগেন্দ্র নাথ মোহন্ত মুঠোফোনে বলেন, তাঁরা শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ফেরাতে অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।

গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়াতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

গঙ্গাচড়ার হিন্দুপল্লিতে হামলার ঘটনায় হামলাকারীদের উসকানি দেওয়ার অভিযোগে হাবিবুর রহমান নামের এক সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি রংপুর থেকে প্রকাশিত দৈনিক যুগের আলো পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক।

গঙ্গাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আল এমরান প্রথম আলোকে বলেন, হাবিবুর রহমানকে সেনাবাহিনী আটক করে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। আলদাদপুরের ভাঙচুরের ঘটনার তাঁর সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তিনি আরও জানান, হাবিবুরকে আলদাদপুরের হামলার ঘটনায় এক ভুক্তভোগীর করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।