রংপুরের তারাগঞ্জে গণপিটুনির আগে হাত জোড় করে এভাবে বাঁচার আকুতি জানান প্রদীপ লাল (বাঁয়ে)। নিজের পরিচয় বলছিলেন রূপলাল (ডানে)ছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীত

তারাগঞ্জে দুজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আরও একজন গ্রেপ্তার

রংপুরের তারাগঞ্জে দুজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার রাতে উপজেলার সয়ার ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার শাহজালাল (২৯) উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের মন্ডলপাড়া গ্রামের মদন আলীর ছেলে। ওই ঘটনায় ১০ আগস্ট মামলা করার পর এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হলো।

নিহত দুজন হলেন তারাগঞ্জের কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর এলাকার বাসিন্দা রূপলাল দাস (৪০) ও মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়াভাটা গ্রামের প্রদীপ দাস (৩৫)। প্রদীপ দাস সম্পর্কে রূপলাল দাসের ভাগনির স্বামী ছিলেন। রূপলাল দাস জুতা সেলাইয়ের কাজ করতেন। আর প্রদীপ দাস ভ্যান চালাতেন।

থানা–পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ৯ আগস্ট রাতে মিঠাপুকুরের ছড়ান বালুয়া এলাকা থেকে প্রদীপ লাল ও রূপলাল ভ্যান নিয়ে তারাগঞ্জের ঘনিরামপুর গ্রামে রূপলালের বাড়িতে আসছিলেন। ওই দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাট বটতলা মোড়ে পৌঁছালে চোর সন্দেহে এলাকার লোকজন ওই দুজনকে আটক করেন। পরে পিটুনিতে তাঁদের মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় ১০ আগস্ট রূপলালের স্ত্রী ভারতী রানী বাদী হয়ে তারাগঞ্জ থানায় ৭০০ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ওই দিন দিবাগত রাতে ঘটনার সময়ের ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

আগের গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের বালাপুর এলাকার এবাদত হোসেন (২৭), বুড়িরহাট এলাকার আক্তারুল ইসলাম (৪৫), রফিকুল ইসলাম (৩৩) ও রহিমাপুরের মিজানুর রহমান (২২)।

মামলার এজাহারে ভারতী রানী বলেছেন, তাঁর স্বামী রূপলাল এবং জামাই প্রদীপের সঙ্গে থাকা ব্যাগের ভেতরে স্পিড ক্যানের বোতল খুললে মেহেদী হাসানসহ তাৎক্ষণিক কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন উত্তেজিত জনতা স্বামী রূপলাল ও জামাই প্রদীপকে রাত ৯টার দিকে বুড়িরহাট উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে নিয়ে গিয়ে অজ্ঞাতনামা ৫০০ থেকে ৭০০ জন উত্তেজিত জনতা দুজনকে লাঠিসোঁটা, লোহার রড দিয়ে পিটুনি দিতে থাকেন। একপর্যায়ে রূপপাল ও প্রদীপ লাল গুরুতর জখম হলে দুই কান দিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করে। তাঁদের আশঙ্কাজন অবস্থা দেখে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করালে কর্মরত চিকিৎসক রূপলালকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রদীপকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পাঠানো হলে সেখানে ভোরে তিনি মারা যান।

এ বিষয়ে তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমএ ফারুক বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি, ভিডিও বিশ্লেষণ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের দেওয়া তথ্য মিলিয়ে ঘটনাটির সঙ্গে জড়িত শাহজালালকে রাতে তাঁর নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে আজ মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারেও অভিযান চলছে।