বহুল প্রত্যাশিত তিস্তা সেতু (মাওলানা হামিদ ভাসানী সেতু) আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) উদ্বোধনের জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এই সেতু গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর খেয়াঘাটকে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারি উপজেলার চিলমারি খেয়াঘাটের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সেতুটি উদ্বোধন করবেন বলে সোমবার (১৮ আগস্ট) সন্ধ্যায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে তিস্তা নদীর ওপর একটি সেতুর দাবি জানিয়ে আসছিলেন, যাতে দুই জেলার মধ্যে যাতায়াত সহজ হয়। জনগণের সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয় এবং ২০১২ সালে নির্মাণকাজ শুরু হয়। যদিও ২০২৩ সালের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল, তবে এখন সবকিছু সম্পন্ন হয়েছে।
১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ এই সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৮৮৫ কোটি টাকা। সেতুটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে।
চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন সেতুটি নির্মাণ করেছে।
এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে হরিপুর ব্রিজ পয়েন্ট থেকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শহর পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এবং সাদুল্লাপুর উপজেলার ধাপেরহাট থেকে হরিপুর ব্রিজ পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।
মোট ব্যয়ের মধ্যে মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২৭৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, সড়ক নির্মাণে ১০ কোটি ২৫ লাখ, নদী ব্যবস্থাপনায় ৮ কোটি ৫৫ লাখ এবং ভূমি অধিগ্রহণে ৬ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলে এলজিইডি কর্মকর্তা জানান।
সেতুটিতে রয়েছে ৩০টি পিলার- যার মধ্যে ২৮টি নদীর মধ্যে এবং ২টি তীরের পাশে অবস্থিত। প্রায় সোয়া ৩ কিলোমিটার নদী ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা হয়েছে এবং সেতুর দুই পাশে মোট ৫৭ দশমিক ৩ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে, যার মধ্যে চিলমারি থেকে মাটিকাটা পর্যন্ত ৭ দশমিক ৩ কিলোমিটার এবং ধাপেরহাট থেকে হরিপুর পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার।
সেতুটি চালু হলে গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের মধ্যে ভ্রমণের দূরত্ব প্রায় ১৩৫ কিলোমিটার কমে যাবে, ফলে চলাচল ও বাণিজ্য অনেক সহজ হবে।
এছাড়াও কুড়িগ্রামের রাজীবপুর, চিলমারি ও রৌমারী উপজেলার কৃষক এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও আশেপাশের এলাকার কৃষকরা তাদের কৃষিপণ্য সময়মতো বড় শহরগুলোতে পাঠাতে পারবেন।
প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী বলেন, ‘এটি উত্তরাঞ্চলের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ধরনের সহায়তা করবে।’
তিনি আরও জানান, এটি দেশের ইতিহাসে এলজিইডি কর্তৃক নির্মিত সবচেয়ে বড় সেতু।