মানব জাতির কাছে যে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন আল্লাহ তায়ালা

মানব জাতির কাছে যে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন আল্লাহ তায়ালা

আল্লাহ তায়ালা পুরো পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। তিনি সব কিছুর রব ও প্রতিপালক। তিনি ছাড়া এসবের সৃষ্টিকারী আর কেউ নেই। আদম সন্তান অর্থাৎ মানুষের কাছে রব হওয়ার এই প্রতিশ্রুতি ও স্বীকারোক্তি আল্লাহ তায়ালা নিয়েছেন আরও আগে, সৃষ্টির সূচনালগ্নে। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে—

وَ اِذۡ اَخَذَ رَبُّكَ مِنۡۢ بَنِیۡۤ اٰدَمَ مِنۡ ظُهُوۡرِهِمۡ ذُرِّیَّتَهُمۡ وَ اَشۡهَدَهُمۡ عَلٰۤی اَنۡفُسِهِمۡ ۚ اَلَسۡتُ بِرَبِّكُمۡ ؕ قَالُوۡا بَلٰی ۚۛ شَهِدۡنَا ۚۛ اَنۡ تَقُوۡلُوۡا یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ اِنَّا كُنَّا عَنۡ هٰذَا غٰفِلِیۡنَ

স্মরণ কর, যখন তোমার প্রতিপালক আদম সন্তানদের পিঠ থেকে তাদের বংশধরদের বের করলেন আর তাদেরকেই সাক্ষী বানিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই?’ তারা বলল, ‘হ্যাঁ; এ ব্যাপারে আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি।’ (এটা এজন্য করা হয়েছিল) যাতে তোমরা কিয়ামাতের দিন না বল যে, ‘এ সম্পর্কে আমরা একেবারেই বে-খবর ছিলাম’। (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৭২)

এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা আদম সন্তানের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি নেওয়ার ব্যাপারটি পৃথিবীবাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন যে, তিনি বনী আদমের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাদের বংশধরদের বের করেছেন এবং তাদেরকে তাদের নিজেদের উপর এ মর্মে সাক্ষী বানিয়েছেন যে, আল্লাহ তাদের প্রভু ও মালিক। তিনি ছাড়া আর কোনো সত্য মাবুদ নেই। আর তারা নিজেরাই এ বিষয়ের সাক্ষী দিয়েছে।

ইমাম আহমাদ বিন হান্বাল (রহ.), ইবনে আববাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুল (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা আরাফা দিবসে আদমের পৃষ্ঠদেশ থেকে তার বংশধরকে বের করে অঙ্গীকার নিয়েছেন। তিনি তার পিঠ থেকে তার প্রত্যেক সন্তানকে বের করেছেন। তারপর তার সামনে ছড়িয়ে দিয়েছেন ও তাদের সাথে আল্লাহ তায়ালা সামনা সামনি হয়ে কথা বলেছেন।

আরও পড়ুন

ওমর (রা.) এর কাছে কেউ কেউ এই আয়াতের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রাসুল (সা.)-এর কাছে এ আয়াতটির মর্ম জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তার কাছে যে উত্তর আমি শুনেছি তা হল এই—

আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেন। তারপর নিজের হাত যখন তার পিঠে বুলিয়ে দিলেন, তখন তার ঔরসে যত সৎমানুষ ছিল তারা সব বেরিয়ে এল। তখন তিনি বললেন, এদেরকে আমি জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেছি এবং এরা জান্নাতেরই কাজ করবে।

পুনরায় দ্বিতীয়বার তার পিঠে হাত বুলালেন। তখন যত পাপী-তাপী মানুষ তার ঔরসে জন্মাবার ছিল, তাদেরকে বের করে আনলেন এবং বললেন, এদেরকে আমি জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি এবং এরা জাহান্নামে যাবার মতই কাজ করবে।

সাহাবীদের মধ্যে একজন নিবেদন করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, প্রথমেই যখন জান্নাতী ও জাহান্নামী সাব্যস্ত করে দেয়া হয়েছে, তখন আর আমল করানো হয় কি উদ্দেশ্যে?

রাসুল (সা.) বললেন, যখন আল্লাহ তায়ালা কাউকে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেন, তখন সে জান্নাত বাসের কাজই করতে শুরু করে। এমনকি তার মৃত্যুও এমন কাজের ভেতরেই হয়, যা জান্নাতবাসীদের কাজ। আর আল্লাহ যখন কাউকে জাহান্নামের জন্য তৈরি করেন, তখন সে জাহান্নামের কাজই করতে আরম্ভ করে। এমনকি তার মৃত্যুও এমন কোন কাজের মাধ্যমেই হয়, যা জাহান্নামের কাজ। (মুয়াত্তা মালেক, ২/৮৯৮, মুসনাদে আহমাদ, ১/৪৪, আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭০৩)

অর্থাৎ মানুষ যখন জানে না যে, সে কোন শ্রেণীভুক্ত, তখন তার পক্ষে নিজের সামর্থ্য, শক্তি ও ইচ্ছাকে এমন কাজেই ব্যয় করা উচিত যা জান্নাতবাসীদের কাজ, আর এমন আশাই পোষণ করা কর্তব্য যে, সেও তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে।