ছবি: রয়টার্স

নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে কী বলে ইসলাম

বিশ্বব্যাপী নারীদের প্রতি সহিংসতা একটি গভীর সামাজিক সমস্যা, যা বিভিন্ন রূপে প্রকাশ পায়। জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, প্রায় ৭৩৬ মিলিয়ন নারী তাঁদের জীবনে অন্তত একবার সহিংসতার শিকার হন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ সহিংসতা বর্তমান বা প্রাক্তন স্বামী বা সঙ্গীর দ্বারা সংঘটিত হয়।

এ সহিংসতা শারীরিক, মানসিক বা যৌনতা-সংক্রান্ত হতে পারে এবং এটি সব জাতি, ধর্ম ও সামাজিক স্তরে দেখা যায়। এ পরিসংখ্যানগুলো দেখায় যে সহিংসতা বিশ্বব্যাপী একটি মহামারীর রূপ নিয়েছে। ইসলাম নারীদের প্রতি সহিংসতাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করে এবং ইসলাম এ সমস্যার সমাধানে একটি স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে, যা দয়া, ভালোবাসা ও শান্তির ওপর ভিত্তি করে।

প্রায় ৭৩৬ মিলিয়ন নারী তাঁদের জীবনে অন্তত একবার সহিংসতার শিকার হন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ সহিংসতা বর্তমান বা প্রাক্তন স্বামী বা সঙ্গীর দ্বারা সংঘটিত হয়।

বিবাহ ইসলামে একটি পবিত্র প্রতিষ্ঠান, যা শান্তি, সুরক্ষা ও ভালোবাসার ওপর ভিত্তি করে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘ইসলামে বিবাহের চেয়ে আল্লাহর কাছে প্রিয় কোনো প্রতিষ্ঠান নেই।’ কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি হলো এ যে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সঙ্গী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও এবং তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা রুম, আয়াত: ২১)

এই আয়াত থেকে স্পষ্ট যে বিবাহে শান্তি ও ভালোবাসা থাকা উচিত, সহিংসতা নয়। সহিংসতা বিবাহের মূলনীতির সম্পূর্ণ বিপরীত।

কোরআনের আরেকটি আয়াতে বলা হয়েছে, ‘মুমিন পুরুষ ও নারীরা একে অপরের সাহায্যকারী। তারা ভালোর নির্দেশ দেয় এবং মন্দ থেকে নিষেধ করে, নামাজ কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে। তাদের ওপর আল্লাহ রহমত বর্ষণ করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ৭১)

তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সঙ্গী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও এবং তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।
সুরা রুম, আয়াত: ২১

এখানে পুরুষ ও নারীর মধ্যে সহায়তা ও দায়িত্বের সম্পর্ক তুলে ধরা হয়েছে, যা সহিংসতার জায়গা দেয় না। আরেকটি আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সৎকর্ম, আত্মীয়দের প্রতি দানের নির্দেশ দেন এবং অশ্লীলতা, অন্যায় ও সীমালঙ্ঘন থেকে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।’ (সুরা নাহল, আয়াত: ৯০)

এ আয়াত সহিংসতা ও অন্যায়কে নিষিদ্ধ করে।

সুরা নিসায় (আয়াত: ১৯) বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নারীদের প্রতি দয়াশীল হও, এমনকি তোমরা তাদের অপছন্দ করলেও। সম্ভব যে তোমরা যা অপছন্দ করো, আল্লাহ তাতে তোমাদের জন্য অসীম কল্যাণ রেখেছেন।’ এটি দেখায় যে নারীদের প্রতি দয়া করা বাধ্যতামূলক।

নবীজি (সা.)-এর হাদিসগুলো নারীদের প্রতি সহিংসতা নিষিদ্ধ করে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, ‘নবীজি (সা.) কখনো কোনো খাদেম বা নারীকে প্রহার করেননি।’ (সহিহ বুখারি হাদিস: ৬,৮৫৮)

এটি দেখায় যে রাসুল (সা.) কোনো পরিস্থিতিতেই নারীদের প্রতি সহিংসতা করেননি।

আরেকটি হাদিসে বলা হয়েছে, ‘তোমরা যখন খাও, তাদের খাওয়াও; তোমরা যখন পোশাক পরো, তাদের পোশাক দাও; তাদের মুখমণ্ডলকে অপমান করো না এবং তাদের মেরো না।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২১৪৪)

এ হাদিস স্পষ্টভাবে নারীদের প্রতি শারীরিক বা মানসিক সহিংসতা নিষিদ্ধ করে।

কোরআনে বিবাহের বর্ণনা করে বলা হয়েছে, ‘তারা তোমাদের পোশাক এবং তোমরা তাদের পোশাক।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৭)

এটি দেখায় যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সুরক্ষা ও শান্তির সম্পর্ক থাকা উচিত, সহিংসতা নয়।

তোমরা যখন খাও, তাদের খাওয়াও; তোমরা যখন পোশাক পরো, তাদের পোশাক দাও; তাদের মুখমণ্ডলকে অপমান করো না এবং তাদের মেরো না।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২১৪৪

জাহেলিয়া যুগে নারীদের প্রতি চরম সহিংসতা ছিল, যেমন কন্যাসন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়া। ইসলাম এ সহিংসতা নিষিদ্ধ করে নারীদের সম্মান প্রতিষ্ঠা করে। কোরআনে বলা হয়েছে, পুরুষ ও নারী সমানভাবে সৃষ্টি। ‘হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রভুর ভয় করো, যিনি তোমাদের একটি আত্মা থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে তার সঙ্গী সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ১)

ইসলামে নারীদের নিয়ন্ত্রণ বা অধীনতার জন্য কোনো সহিংসতা অনুমোদিত নয়, এমনকি যদি সাংস্কৃতিক রীতিও তা সমর্থন করে, তবু নয়। ইসলাম নারীদের প্রতি দয়া, ভালোবাসা ও শান্তির ওপর জোর দেয়। কোরআন ও হাদিসে বারবার দয়া, ভালোবাসা ও শান্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিবাহকে শান্তি ও সুরক্ষার প্রতিষ্ঠান হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যেখানে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা একে অপরকে খারাপ নামে ডেকো না এবং অপমান করো না।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত: ১১)

সহিংসতা যেকোনো রূপেই হোক না কেন, তা ইসলামের শিক্ষার বিরুদ্ধে। আমরা যদি কোরআন ও হাদিসের শিক্ষা অনুসরণ করি, তাহলে সমাজে নারীদের প্রতি সহিংসতা দূর হবে ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।