আল্লাহর প্রিয় হওয়ার আমল তাহাজ্জুদ

আল্লাহর প্রিয় হওয়ার আমল তাহাজ্জুদ

তাহাজ্জুদ নামাজ অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল। আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর নফল নামাজসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফজিলতপূর্ণ আমল তাহাজ্জুদের নামাজ। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, রমজানের পর রোজা রাখার উত্তম সময় মুহাররম মাস আর ফরজ নামাজের পর উত্তম নামাজ রাতের নামাজ। (সহিহ মুসলিম)

হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আপনারা কিয়ামুল লাইলের প্রতি যত্নবান হোন। কারণ এই নামাজ আপনাদের পূর্ববর্তী নেক ব্যক্তিদের অভ্যাস এবং রবের নৈকট্য লাভের বিশেষ মাধ্যম, পাপরাশী মোচনকারী এবং গোনাহ থেকে বাধা প্রদানকারী। (সুনানে তিরমিজি)

আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কখনও তাহাজ্জুদ ছাড়েননি। ছুটে গেলে কাজা করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, নবিজি রাতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এত বেশি নামায পড়তেন যে, তার পা ফুলে যেতো। নবিজির (সা.) কষ্ট দেখে আয়েশা (রা.) একদিন বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এত কষ্ট করছেন, অথচ আপনার পূর্বাপর সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে! আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার কি শোকর আদায়কারী বান্দা হওয়া উচিত নয়? (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, আয়েশা (রা.) আবদুল্লাহ ইবনে কাইসকে (রা.) বলেছেন, হে আবদুল্লাহ! কিয়ামুল লাইল কখনো ছেড়ো না! নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ নামাজ কখনো ছাড়েননি। কখনো অসুস্থতা বা দুর্বলতা বোধ করলে বসে আদায় করতেন। (সুনানে আবু দাউদ)

রাসুল (সা.) নিজে তাহাজ্জুদ আদায়ের পাশাপাশি পরিবার-পরিজনদেরও তাহাজ্জুদ আদায় করতে উৎসাহ দিতেন। সাহাবিদেরও উৎসাহ দিয়েছেন স্বামী ও স্ত্রী যে আগে জেগে উঠবে সে যেন তাহাজ্জুদের জন্য অপরজনকে জাগিয়ে দেয়। আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ সেই পুরুষের ওপর রহম করুন যে রাতে উঠে নামাজ পড়ে এবং তার স্ত্রীকেও জাগায়, তারপর সেও নামাজ পড়ে। স্ত্রী না উঠতে চাইলে তার চেহারায় পানি ছিটিয়ে দেয়। আল্লাহ ওই নারীর ওপর রহম করুন, যে রাতে উঠে নামাজ পড়ে এবং তার স্বামীকেও জাগায়, আর সেও নামাজ পড়ে। স্বামী না উঠতে চাইলে সে তার চেহারায় পানি ছিটিয়ে দেয়। (সুনানে ইবনে মাজা, মুসনাদে আহমদ)

সাহাবি ও তাবেঈরা নিজেরা গুরুত্বের সাথে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন। পরিবার-পরিজনদেরও তাহাজ্জুদের জন্য জাগাতেন। আবু উসমান নাহদি বলেন, আমি সাত দিন আবু হোরায়রার (রা.) বাড়িতে মেহমান ছিলাম। তিনি, তার স্ত্রী ও তার খাদেম তিন ভাগে ভাগ করে রাতে ইবাদত করতেন। একজন নামাজ শেষ করে আরেকজনকে জাগিয়ে দিতেন। (সহিহ বুখারি)

আবু আব্দুর রহমান ইবনে যুবাইদ ইবনে হারেস বলেন, আমার বাবা যুবাইদ ইবনে হারেস (রহ.) রাত তিন ভাগে ভাগ করতেন। এক ভাগে নামাজ পড়ার দায়িত্ব থাকতো তার ওপর, এক ভাগে আমার ওপর, এক ভাগে আমার ভাইয়ের ওপর। তিনি রাতের এক তৃতীয়াংশ সময় নামাজ পড়ে আমাকে ডাকতেন, যদি দেখতেন আমি উঠতে অলসতা করছি, তিনি বলতেন, ঘুমাও, তোমার অংশে আমি নামাজ পড়বো। তারপর কিছুক্ষণ নামাজ পড়ার পর আমার ভাইকে ডাকতেন, সেও যদি উঠতে অলসতা করতো, তাহলে তিনি বলতেন, ঘুমাও, তোমার অংশেও আমি নামাজ পড়বো। এভাবে সকাল পর্যন্ত তিনি নামাজে দাঁড়িয়ে থাকতেন। (সিফাতুস-সাফওয়া)