নেতা নির্বাচনে যেসব গুণ দেখতে বলেছেন নবীজি

নেতা নির্বাচনে যেসব গুণ দেখতে বলেছেন নবীজি

আমাদের সুশৃঙ্খলভাবে বসবাস ও দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, প্রতিষ্ঠান কিংবা রাষ্ট্র—সবখানেই নেতা নির্বাচন করা জরুরি।

একজন নেতা তার অধীনস্থদের সুচারুরূপে পরিচালনা করবেন, তাদের সুখ-সমৃদ্ধির জন্য কাজ করবেন। ইসলামে নেতৃত্ব নির্বাচন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

নেতৃত্বের গুরুত্ব বোঝাতে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যখন তিনজন ব্যক্তি কোনো সফরে বের হবে, তখন তারা যেন তাদের একজনকে আমির (নেতা) বানিয়ে নেয়।” (আবু দাঊদ, হাদিস: ২৬০৯)

একজন নেতা একটি জাতি বা সমাজকে পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি যদি সৎ ও সদাচারী হন, তবে সমাজ শান্তিপূর্ণ হবে, উন্নয়নের পথ সুগম হবে। আর যদি নেতা অসৎ হন, তবে সমাজে নেমে আসবে বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি।

বর্তমান সময়ে নেতা বা জনপ্রতিনিধি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। তাই ভোটারদের সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। অযোগ্য কাউকে নেতৃত্বে বসালে তার মাধ্যমে সমাজে যে অরাজকতা সৃষ্টি হবে, তার জন্য ভোটার বা যিনি নির্বাচিত করেছেন, তাকে আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে।

নেতা নির্বাচনের আগে আমাদের অবশ্যই দেখতে হবে, প্রার্থীটি চরিত্রবান কি না। হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, নবী (সা.) অশ্লীল ভাষী ও অসদাচরণকারী ছিলেন না। তিনি বলতেন, “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে নৈতিকতায় সর্বোত্তম।” (বুখারি, হাদিস: ৩৫৫৯)

যাকে নেতা নির্বাচিত করব, তার সত্যবাদিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া জরুরি। কারণ একজন জনপ্রতিনিধির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণ হলো তাকওয়াবান ও সত্যবাদী হওয়া।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, “তিন ধরনের ব্যক্তির সঙ্গে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা কথা বলবেন না, তাদের গুনাহ থেকে পবিত্র করবেন না, এবং তাদের দিকে তাকাবেনও না। তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। (তাদের একজন হলেন) মিথ্যাবাদী শাসক।” (মুসলিম, হাদিস: ১৯৬)

নেতা হতে হবে জনদরদী—যিনি সব সময় অধীনস্থদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেন, তাদের সুখ-দুঃখে পাশে থাকেন এবং তাদের সঙ্গে কখনো প্রতারণা করেন না। এমন ব্যক্তিকেই জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচন করা উচিত।

রাসুল (সা.) বলেন, “যে আমিরের ওপর মুসলিমদের শাসনক্ষমতা অর্পিত হয়, অথচ সে তাদের কল্যাণে আন্তরিক না হয়, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করতে দেবেন না।” (মুসলিম, হাদিস: ৪৬২৫)

তার মধ্যে ন্যায়পরায়ণতা থাকতে হবে। হাদিসে এসেছে, মহানবী (সা.) বলেন, “সাত শ্রেণির লোক কিয়ামতের দিন আল্লাহর ছায়ায় স্থান পাবে, যেদিন অন্য কোনো ছায়া থাকবে না। তাদের একজন হলেন ন্যায়পরায়ণ শাসক।” (বুখারি, হাদিস: ৬৮০৬)

নেতাকে জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাবান হতে হবে। শিক্ষা ছাড়া জনগণের প্রতিনিধিত্ব, অধিকার অনুধাবন এবং তা রক্ষা করা সম্ভব নয়। হজরত ইউসুফ (আ.) মিসরের রাজাকে বলেন, “আমাকে দেশের ধনভাণ্ডারের ওপর কর্তৃত্ব দিন; আমি বিশ্বস্ত রক্ষক ও সুবিজ্ঞ।” (সুরা ইউসুফ: ৫৫)

একজন সচেতন ভোটার হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো যোগ্যতা যাচাই করে নেতা নির্বাচন করা। না হলে তা হবে আমানতের খেয়ানত, যার জন্য পরকালে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, আল হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, তা’মিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা, টঙ্গী।