সুরা বুরুজে যে বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের কথা তুলে ধরা হয়েছে
সুরা বুরুজের শুরুতে ইসলাম পূর্ব যুগের একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। যেখানে কিছু ঈমানদার ব্যক্তি ঈমানের পরীক্ষা দিয়েছিলেন এবং ঈমানের পরীক্ষা দিতে গিয়ে তারা ধৈর্য ও আল্লাহর ওপর বিশ্বাসের সবোর্চ্চ মাত্রা দেখিয়েছিলেন।
মহানবী (সা.)-এর বর্ণনা থেকে হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ মুসলিম শরিফে ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে এভাবে—
ইসলাম পূর্ব যুগে কোনো এক রাজার রাজ দরবারে বিশেষ এক বিশেষ যাদুকর ছিল। সেই যাদুকরের সাহায্যে রাজা তার সব কাজ করাতো। যাদুকর মরে যাওয়ার পরও যাদুবিদ্যা চালু রাখার জন্য বৃদ্ধ বয়সে যাদুকর রাজার কাছে একজন মেধাবী তরুণ ছেলে চাইলো।
রাজা একটি তরুণ মেধাবী ছেলে নির্বাচন করে যাদুকরের কাছে পাঠালো। তরুণ ছেলেটি নিয়মিত যাদুকরের কাছে যাওয়া-আসা করতো। তার যাতায়াতের পথে একটি আশ্রম ছিল। সেখানে একজন আবেদ (ইবাদতকারী) বসবাস করতেন। তিনি ঈসা (আ.)-এর ধর্মের অনুসারী ছিলেন।
যাতায়াতের পথে তরুণ ছেলেটি মাঝেমাঝে সেই ইবাদতকারীর কাছে যেতেন এবং তার কথা শুনতেন। সেই আবেদের কথা তার ভালো লাগতো, আকর্ষণ করতো। একদিন সে যথারীতি সেই পথে যাচ্ছিল। হঠাৎ দেখল একটি হিংস্র পশু পথ বন্ধ করে রেখেছে। লোকজন চলাচল করতে পারছে না।
আরও পড়ুন
তরুণ ছেলেটি একটি পাথর তুলে নিল এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়অ করল, হে আল্লাহ! তোমার কাছে যদি যাদুকর অপেক্ষা সেই ইবাদতকারীর কথা বেশি পছন্দ হয়, তবে এই পাথরের মাধ্যমে হিংস্র পশুর মৃত্যু ঘটাও। এই বলে যেই না সে পাথরটি ছুড়ে মারল, সঙ্গে সঙ্গে পশুটি মারা গেল। রাস্তা যানজটমুক্ত হলো।
এ ঘটনার পর মানুষের অন্তরে তরুণটির প্রতি ভক্তি-বিশ্বাস জন্মাল। তারা মনে করল তার বিশেষ কোন বিদ্যা জানা আছে, যার বলে এটা করতে পেরেছে।
একদিন এক অন্ধ ব্যক্তি তাকে তার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করলো। তরুণটি বলল, রোগ-বালাই আল্লাহ তায়ালাই দেন এবং ভালোও তিনিই করেন। কাজেই তুমি যদি ওয়াদা কর আল্লাহ তায়ালার প্রতি ঈমান আনবে ও তাকে এক বলে বিশ্বাস করবে, তবে আমি তোমার জন্য তার কাছে দোয়া করব। লোকটি শর্ত মেনে নিল।
লোকটি তার কথা মত ঈমান আনল। সেই তরুণ আল্লাহ তায়ালার কাছে তার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেওয়ার দোয়া করলো।
রাজার কাছে এ খবর পৌঁছালে তিনি ভীষণ ক্ষিপ্ত হলো। তার নির্দেশে সেই অন্ধ, ইবাদতকারী ও তরুণকে বন্দী করা হলো। রাজা তাদেরকে তাওহীদ ও ঈমান ছাড়ার জন্য চাপ দিল। কিন্তু তারা তা গ্রাহ্য করল না। ফলে রাজার নির্দেশে অন্ধ ও ইবাদতকারীকে শূলে চড়ানো হলো। আর তরুণটিকে কোনো উঁচু পাহাড়ের চুড়া থেকে নিচে ফেলে হত্যার নির্দেশ দেওয়া হলো।
রাজার বাহিনী তরুণকে নিয়ে পাহাড় চূড়ায় গেলো। তখন ছেলেটি আল্লাহর কাছে জীবন বাঁচানোর জন্য দোয়া করলো। এ সময় পাহাড়ে প্রচণ্ড কম্পন শুরু হল এবং রাজার কর্মচারীদের মৃত্যু ঘটল, ছেলেটি আল্লাহর অনুগ্রহে রক্ষা পেলো।
রাজা দ্বিতীয়বার তাকে সাগরে ডুবিয়ে মারার নির্দেশ দিলো। তাকে সমুদ্র পাড়ে নিয়ে যাওয়ার পরও সেখানেও আল্লাহর অনুগ্রহে সে বেঁচে গেলো এবং রাজ-কর্মচারীরা ডুবে মরল। এবারও ছেলেটি নিরাপদে ফিরে এলো।
রাজা যখন কোনভাবেই তাকে মারতে পারলো না, তখন ছেলেটি রাজাকে বলল, আপনি যদি আমাকে মারতে চান তাহলে আমার পরামর্শ মত কাজ করুন। আপনি এক উম্মুক্ত ময়দানে জনসাধারণকে সমবেত হতে বলুন এবং তাদের সামনে আমাকে শূলে চড়ান। তারপর ধনুকে তীর যোজনা করুন ও ‘এই বালকটির প্রতিপালক আল্লাহর নামে’ এই বলে আমার প্রতি নিক্ষেপ করুন।
রাজা তাই করল। তীর ছেলেটির কান ও মাথার মাঝখানে বিদ্ধ হল এবং সে শহীদ হলো। এ দৃশ্য উপস্থিত দর্শকদের অন্তরে প্রবল নাড়া দিল। তখনই তাদের অনেকে আল্লাহ তায়ালার ওপর ঈমান আনল। এ ঘটনায় রাজা আরও বেশি ক্ষিপ্ত হল।
সবাইকে শাস্তি দেওয়ার জন্য সড়কের পাশে গর্ত খুড়ে সেখানে আগুন জ্বালালো এবং ঘোষণা দিল, যারা ঈমান পরিত্যাগ করবে না তাদেরকে আগুনের এ গর্তে নিক্ষেপ করা হবে। কিন্তু মুমিনগণ একটুও পিছপা হল না। ফলে তাদেরকে সেই অগ্নিকুণ্ডে ফেলে জ্যান্ত পুঁড়ে ফেলা হলো।