অনুষ্ঠানে কোরআন তিলাওয়াতের আদব

অনুষ্ঠানে কোরআন তিলাওয়াতের আদব

কোনো কল্যাণকর ও জায়েজ অনুষ্ঠান, দ্বীনি মাহফিল কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু করা জায়েজ ও বরকতপূর্ণ কাজ। সাহাবায়ে কেরাম অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তিলাওয়াত করতে বলে বর্ণিত রয়েছে।

আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবিরা যখন কোনো বৈঠকে বসতেন, তখন অন্যান্য কথাবার্তা শুরু করার আগে তাদের কেউ কোনো সুরা তিলাওয়াত করতেন বা কাউকে নির্দেশ দেওয়া হতো কোরআনের কোনো সুরা পাঠ করার জন্য। (মুসতাদরাকে হাকেম: ৩২২)

খতিব বাগদাদি (রহ.) তার লিখিত ‘আল-জামে লিআখলাকির রাবি ওয়া আদাবিস সামে’ গ্রন্থে হাদিসের মজলিসের আদব বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, হাদিসের মজলিসের শুরুতে কুরআন তিলাওয়াত করা উচিত। মুহাম্মাদ ইবনে আহমদ থেকে বর্ণিত আবু নাজরা (রা.) বলেছেন, আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবিরা কোনো মজলিসে একত্রিত হলে ফিকহের বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করতেন এবং কোরআনের কোনো সুরা তিলাওয়াত করতেন। (আল-জামে লিআখলাকির রাবি ওয়া আদাবিস সামে ২/৬৪)

তবে অনুষ্ঠানে কোরআন তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে কোরআনের আদবের দিকে লক্ষ রাখা জরুরি যেন কোরআন তিলাওয়াত সওয়াবের কারণ হওয়ার বদলে কোরআনের সাথে বেয়াদবি ও গুনাহের কারণ না হয়। অনুষ্ঠানে কোরআন তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো মনে রাখবেন:

১. অনুষ্ঠানে মাইক পরীক্ষার জন্য কোরআন তিলাওয়াত করা যাবে না। এটা কোরআনের আদব পরিপন্থী কাজ।

২. অনুষ্ঠানে শ্রোতারা এলোমেলো থাকলে সবাইকে জমা করার উদ্দেশ্যে কোরআন তিলাওয়াত করা যাবে না। এটাও আদব পরিপন্থী কাজ।

৩. অনুষ্ঠানে শ্রোতারা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকলে এবং মনোযোগ দিয়ে শোনার মতো অবস্থায় না থাকলে কোরআন তিলাওয়াত করা যাবে না। কোরআন তিলাওয়াত করতে হয় মনোযোগ দিয়ে আদবের সাথে, কোথাও কোরআন তিলাওয়াত হলে তাও চুপ থেকে আদবের সাথে মনেযোগ দিয়ে শুনতে হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, যখন কোরআত পড়া হয়, তখন চুপ থেকে মনোযোগ দিয়ে শোনো, হয়তো তোমাদের দয়া করা হবে। (সুরা আরাফ: ২০৪)

৪. যে অনুষ্ঠানে গান-বাদ্য ও অন্যান্য শরিয়ত বিরোধী কাজ হয়েছে বা হবে, ওই অনুষ্ঠানে কোরআন তিলাওয়াত করা যাবে না।

কোরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিলকৃত গ্রন্থ। সৃষ্টির উপর স্রষ্টার মর্যাদা যেমন, পৃথিবীর সব কথা, বক্তব্য ও গ্রন্থের ওপর কোরআনের মর্যাদাও তেমন। আল্লাহ তাআলা কোরআন সম্পর্কে বলেছেন, নিশ্চয় এটি মহিমান্বিত কোরআন, যা আছে সুরক্ষিত কিতাবে, পূত-পবিত্র (ফেরেশতা) ছাড়া (শয়তানেরা) তা স্পর্শ করতে পারে না, তা সৃষ্টিকুলের রবের কাছ থেকে নাজিলকৃত। (সুরা ওয়াকিয়া: ৭৭-৮০)

তাই মুমিনমাত্রই কোরআনের মহত্ত্ব ও সম্মান অন্তরে থাকা উচিত এবং কোনোভাবে যেন আল্লাহর কালাম কোরআনের অসম্মান না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত।