আল্লাহ তায়ালা আদম (আ.) বা মানব জাতিকে পৃথিবীতে তার প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেছেন। পৃথিবীতে মানব জাতির এই প্রতিনিধিত্বের পরম্পরা শুরু হয়েছে হজরত আদম (আ.)-এর মাধ্যমে।
আল্লাহ তায়ালা যখন আদম (আ.)- এর মাধ্যমে মানব জাতির সূচনা করতে চাইলেন তখন ফেরেশতারা আল্লাহর এই কাজে বিস্ময় প্রকাশ করেছিল এবং তারা আপত্তি জানিয়ে বলেছিল। আপনি মানুষ সৃষ্টি করছেন কেন? তারাও তো জিন জাতির মতো সৃষ্টিতে অশান্তি সৃষ্টি করবে, খুন খারাবি করবে। আমরাই তো আপনার ইবাদত করছি এবং আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি।
ফেরেশতাদের এই কথা শুনে আল্লাহ বলেছিলেন, আমি যা জানি তোমরা তা জানো না। এরপর আল্লাহ তায়ালা আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করে তাকে সিজদা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন ফেরেশতাদের।
আরও পড়ুন
তারা কোনো আপত্তি ছাড়াই আল্লাহর সেই নির্দেশ মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু শয়তান সেই নির্দেশ না মেনে অভিশপপ্ত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টির প্রথম মানব আদম (আ.)-কে পাঁচটি বিশেষ শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলেন, যা জিন, ফেরেশতা, শয়তান এবং অন্য কোনো মানুষের মাঝে নেই।
আল্লাহর পক্ষ থেকে আদিপিতা (আ.)-কে দেওয়া পাঁচটি শ্রেষ্ঠত্ব হলো—
১.আল্লাহ আদম (আ.)-কে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে—
আল্লাহ বললেন, ‘হে ইবলিশ, আমার দু’হাতে আমি যাকে সৃষ্টি করেছি তার প্রতি সিজদাবনত হতে কিসে তোমাকে বাধা দিল? তুমি কি অহঙ্কার করলে, না তুমি অধিকতর উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন?’ (সুরা সোয়াদ, আয়াত : ৭৫)
২. আল্লাহ তায়ালা নিজে আদম (আ.)-এর মধ্যে রূহ ফুঁকে দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে—
‘যখন আমি তাকে সুষম করব এবং তার মধ্যে আমার রূহ সঞ্চার করব, তখন তোমরা তার উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হয়ে যাও’। (সুরা সোয়াদ, আয়াত :
৩. আল্লাহ তায়ালা আদম (আ.)-কে সব বস্তুর নাম শিক্ষা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে—
আর তিনি আদমকে যাবতীয় নাম শিক্ষাদিলেন, তারপর সেগুলো ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করে বললেন, ‘এগুলোর নাম আমাকে বলে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও। (সুরা বাকারা, আয়াত : ৩১)
৪. তাকে সিজদা করার জন্য আল্লাহ ফেরেশতাদের নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে—
আর যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম, ‘তোমরা আদমকে সিজদা কর’। তখন তারা সিজদা করল, ইবলিশ ছাড়া। সে অস্বীকার করল এবং অহঙ্কার করল। আর সে হল কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত। (সুরা বাকারা, আয়াত : ৩৪)
৫. আদম (আ.) একাই মাত্র মাটি থেকে সৃষ্ট। বাকি অন্য সবাই পিতা-মাতার মাধ্যমে সৃষ্ট। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে—
যিনি তার প্রতিটি সৃষ্টিকে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন এবং কাদা মাটি থেকে মানুষ সৃষ্টির সূচনা করেছেন। তারপর তিনি তার বংশধর সৃষ্টি করেছেন তুচ্ছ পানির নির্যাস থেকে। তারপর তিনি তাকে সুঠাম করেছেন এবং তাতে নিজের রূহ থেকে ফুঁকে দিয়েছেন। আর তিনি তোমাদের জন্য কান, চোখ ও অন্তরসমূহ সৃষ্টি করেছেন। তোমরা খুব সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সুরা আস-সাজদাহ, আয়াত : ৭-৯)