উত্তম চরিত্র একজন মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। উত্তম চরিত্র ও ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি সমাজের সর্বশ্রেণীর কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেন। চরিত্রবান মানুষকে সবাই বিশ্বাস করেন এবং ভালোবাসেন। উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে যে মর্যাদা ও ভালোবাসা লাভ করা যায় তা অন্য কিছুর মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব নয়। টাকা-পয়সা ধন-সম্পদের মাধ্যমেও এই মর্যাদা লাভ করা যায় না।
সৎ ও চরিত্রবান ব্যক্তিকে সবাই মন থেকে ভালোবাসেন। চরিত্রবান হওয়ার জন্য নিজের দৃষ্টি ও লজ্জাস্থানের হেফাজত গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ কোনো কিছু দেখার মাধ্যমে তার প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে ও অন্তরে লালসা তৈরি হয়। ধাপে ধাপে লালসার পরিণতি লজ্জাস্থানের অসৎ কাজের মাধ্যমে শেষ হয়। যা তাকে সমাজে অপরাধী ও ঘৃণিত হিসেবে চিহ্নিত করে। আল্লাহ তায়ালার দরবারেও সে অপরাধীর খাতায় নাম লেখায়।
একজন মানুষের চরিত্র পূতঃপবিত্র রাখতে কোরআনে দৃষ্টি ও লজ্জাস্থান হেফাজতের কথা বলা হয়েছে। ব্যক্তি এতে সফল হতে পারবে সে পবিত্র জীবন লাভ করবে। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে—
قُلۡ لِّلۡمُؤۡمِنِیۡنَ یَغُضُّوۡا مِنۡ اَبۡصَارِهِمۡ وَ یَحۡفَظُوۡا فُرُوۡجَهُمۡ ؕ ذٰلِكَ اَزۡكٰی لَهُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰهَ خَبِیۡرٌۢ بِمَا یَصۡنَعُوۡنَ
মুমিন পুরুষদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে; এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে সম্পর্কে খুব ভালভাবেই অবগত। (সুরা নুর, আয়াত : ৩০)
অর্থাৎ, দৃষ্টিকে সংযত রাখতে হবে এবং লজ্জাস্থানকে হেফাজত করতে হবে। লজ্জাস্থান সংযত বা হেফাজত রাখার অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক। নিচে তার কিছু উদাহরণ পেশ করা হলো—
কুপ্রবৃত্তি চরিতাৰ্থ করার যত পন্থা আছে, সবগুলো থেকে লজ্জাস্থানকে সংযত রাখা। এতে ব্যভিচার, পুংমৈথুন এবং হস্তমৈথুন ইত্যাদি সব অবৈধ কৰ্ম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আয়াতের উদ্দেশ্য অবৈধ ও হারাম পন্থায় কাম প্রবৃত্তি চরিতার্থ করা এবং তার সমস্ত ভূমিকাকে নিষিদ্ধ করা।
আরও পড়ুন
আর কাম-প্রবৃত্তির প্রথম ও প্রারম্ভিক কারণ হচ্ছে- দৃষ্টিপাত করা ও দেখা এবং সর্বশেষ পরিণতি হচ্ছে ব্যভিচার। এ দু'টিকে স্পষ্টত হারাম করে দেয়া হয়েছে। এতদুভয়ের অন্তর্বর্তী হারাম ভূমিকাসমূহ- যেমন কথাবার্তা শোনা, স্পর্শ করা ইত্যাদি প্রসঙ্গক্রমে এগুলোর অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে।
নিজের সতরকে অন্যের সামনে উন্মুক্ত করা থেকে বিরত থাকাও যৌনাঙ্গ সংযত করার অন্তর্ভুক্ত। পুরুষের জন্য সতর তথা লজ্জাস্থানের নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত । শরীরের এ অংশ স্ত্রী ছাড়া আর কারোর সামনে ইচ্ছাকৃতভাবে খোলা হারাম।
একটি হাদিসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : নিজের স্ত্রী ও ক্রীতদাসী ছাড়া বাকি সবার থেকে নিজের সতরের হেফাজত করো। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, আর যখন আমরা একাকী থাকি? তিনি জবাব দেন : এ অবস্থায় আল্লাহ থেকে লজ্জা করা উচিত, তিনিই এর হকদার। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪০১৭)
অন্য এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা রাস্তায় বসা থেকে বেঁচে থাক। লোকেরা বলল : আমরা এ ধরণের বসা থেকে বঁচতে পারি না; কারণ, সেখানে বসে আমরা কথাবার্তা বলে থাকি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : যদি বসা ছাড়া তোমার কোনো উপায় না থাকে তবে পথের হক আদায় করবে। তারা বলল : পথের দাবী কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : দৃষ্টি নত রাখা, কষ্টদায়ক বিষয় দূর করা, সালামের জবাব দেয়া, সৎকাজের আদেশ করা, অসৎকাজ থেকে নিষেধ করা। (বুখারি, হাদিস : ২৪৬৫, মুসলিম, হাদিস : ২১২১)