ভিয়েতনামে ইসলামের আগমন যেভাবে

ভিয়েতনামে ইসলামের আগমন যেভাবে

উনিশ শতকে কাপড়, মসলা ও মুদ্রা নিয়ে নিয়মিত ব্যবসায়িক কাজে ভিয়েতনামের হ্যানয়ে যেতেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। এই ব্যবসায়ীদের অনেকেই ছিলেন মুসলিম। ভিয়েতনামে অবস্থানকালে ইবাদত পালন ও নামাজের জন্য মসজিদের প্রয়োজন দেখা দেয় তাদের।

ব্যবসায়ীরা মসজিদ নির্মাণের জন্য তারা সম্মিলিতভাবে অর্থসংগ্রহ করেন। এরপর হাউ তুক কমিউনের ফু তু ও ভিন ত্রু গ্রামের কাছে, থো জুং জেলায় একটি মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৮৫ সালে কাজ শুরু হয়ে ১৮৯০ সালে মসজিদটির নির্মাণ সম্পন্ন হয়। স্থানীয়রা একে ডাকতেন ‘চুয়া তে দেন’—বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায় ‘কালো বিদেশিদের ইবাদতের স্থান’। মূলত দক্ষিণ এশীয় মুসলিম ব্যবসায়ীদের প্রতি ইঙ্গিত করে এই নামকরণ করা হয়।

বর্তমানে এই ঐতিহাসিক স্থাপনা ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে হ্যানয়ের হোয়ান কিয়েম জেলার ১২ হ্যাং লুওক স্ট্রিটে।

১৯৫০-এর দশকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের কারণে অধিকাংশ ভারতীয় মুসলিম ফিরে যান নিজ দেশে। ফলে মসজিদটি দীর্ঘ সময় বন্ধ ছিল।

১৯৯০-এর দশকে ভিয়েতনাম অর্থনৈতিক সংস্কার ও বিশ্বমুখী হওয়ার সময় নতুন করে মুসলিম প্রবাসীদের আগমন ঘটে। পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, ইরান, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার কূটনীতিক ও প্রবাসীরা হ্যানয়ে বসবাস শুরু করেন। কার্যকর কোনো মসজিদ না থাকায় শুক্রবার জুমার নামাজসাধারণত অনুষ্ঠিত হতো ইন্দোনেশিয়ান দূতাবাসে।

এই সময় মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের কর্মী খালিদ হঠাৎ পুরনো মসজিদটি আবিষ্কার করেন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে তিনি ইরান দূতাবাসের সহায়তায় এর সংস্কারকাজ শুরু করেন। তার উদ্যোগেই মসজিদ আবারও প্রাণ ফিরে পায়।

মসজিদের নামকরণে অনেকে ‘মসজিদ খালিদ’ প্রস্তাব করলেও বিনয়ের কারণে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। এর পরিবর্তে তিনি নাম দেন ‘আন-নূর’—‘আলো’, য নবজাগরণ ও পথপ্রদর্শনের প্রতীক বুঝায়।

আরও পড়ুন

২০০০ সালের শুরুর দিকে হ্যানয়ের মুসলিম সমাজের প্রায় ৯০ শতাংশই ছিলেন বিদেশি প্রবাসী ও কূটনীতিক। এ সময় ইমামের দায়িত্ব পালন করতেন আফগান শিক্ষকরা। আফগানিস্তানে সংঘাত তীব্র হওয়ায় তারা চলে গেলে ২০১১ সাল থেকে দক্ষিণ ভিয়েতনামের ‘চাম মুসলিমরা’ এ দায়িত্ব পালন করছেন।

বর্তমানে স্থানীয় ভিয়েতনামী মুসলিমদের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। কেউ বিবাহ সূত্রে ইসলাম গ্রহণ করেছেন, আবার কেউ ব্যক্তিগতভাবে ইসলামকে জীবনধারা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।

সংখ্যায় ছোট হলেও হ্যানয়ের মুসলিম সম্প্রদায় ধর্মীয় অনুশীলনে অনড় থেকে সমাজ ও নগর জীবনে সক্রিয় অবদান রাখছেন।

তাদের নীরব ও দৃঢ় উপস্থিতি মনে করিয়ে দেয়—হ্যানয় এমন এক সহনশীল নগরী, যেখানে ধর্ম, জাতি ও সংস্কৃতি মিলেমিশে সহাবস্থানের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত গড়ে তুলেছে।

সূত্র : দ্য হালাল টাইমস