দুই জামাই মোশাররফ করিম ও শামীম হাসান সরকার
শামীম হাসান সরকার তখন সবে অভিনয় শুরু করেছেন। সে সময় বেশির ভাগ অভিনেতাই অন্যের অভিনয় দেখে শেখার চেষ্টা করতেন। তাঁর পছন্দের অভিনেতা ছিলেন মোশাররফ করিম। নাটকে গল্পের চেয়ে মোশাররফ করিমের অভিনয়ের দিকেই মনোযোগ থাকত বেশি। মনোযোগ দিয়ে দেখতেন মোশাররফের অভিনয়ের জাদু। মোশাররফ করিমের অভিনয়ই তাঁকে অভিনয়ে আসতে অনুপ্রাণিত করে।
একসময় শামীমও পর্দায় নিয়মিত হন, আর এখন তো তিনি ব্যস্ত শিল্পী। কিন্তু এক যুগেও সহশিল্পী হিসেবে সেভাবে কখনো মোশাররফ করিমকে পাননি, একসঙ্গে মন ভরে অভিনয়ের ইচ্ছাটা অপূর্ণ থেকে যায়। ছয় বছর আগে একটি নাটকে তাঁরা প্রথম অভিনয় করেন, কিন্তু মোশাররফ করিমের সঙ্গে শামীমের খুব বেশি দৃশ্য ছিল না। গল্পটিও ছিল সিরিয়াস ঘরানার। কমেডি ধারার কোনো গল্পে একসঙ্গে অভিনয়ের অপেক্ষায় ছিলেন শামীম। অর্ধযুগ পর অবসান হলো অপেক্ষার।
‘জামাই টক্কর’ নামে একটি নাটকে মোশাররফ ও শামীমকে একসঙ্গে দেখা যাবে। এক পরিবারের দুই জামাইকে ঘিরে গল্প। এই দুই জামাই-ই হয়েছেন মোশাররফ করিম ও শামীম হাসান সরকার। কমেডির মোড়কে গল্পটি সমাজের অর্থনৈতিক বৈষম্যকে তুলে ধরেছে।
কাছ থেকে মোশাররফ করিমকে পেয়ে শামীম এবার আপ্লুত। এই অভিনেতা বললেন, ‘ভাইয়ার নামও শামীম, যে কারণে বাড়তি ভালোবাসা পেয়েছি। ভাইয়া শুটিং সেটে এসেই বললেন, “তুমিও তো শামীম। আমরা দুজনই শামীম।” ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলেই বলি, এবারও শুটিংয়ের সময়ে বলেছি, তিনি পছন্দের অভিনেতা, আমার অনুপ্রেরণা। যাঁর অভিব্যক্তি, সংলাপ বলা, নানান পরিস্থিতিতে সাবলীল অভিনয় আমাকে প্রতিনিয়ত শেখায়। তাঁর সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ বিশাল প্রাপ্তি। আমার কথা শুনে ভাই হাসলেন।’
এখানে কেউ কাউকে শেখায় না
শামীম হাসান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘মোশাররফ করিম ভাইয়ের সঙ্গে দাঁড়িয়ে অভিনয় করব, এটা আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল। মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেছি, মোশাররফ করিম একজনই।’ এমনটা কেন মনে হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি তো এখন নিজেই বহু নাটকের লিড কাস্টিং করি। কিন্তু শুটিংয়ে গিয়ে কারও কাছ থেকে তেমন কিছু শিখতে পারি না। এটা তো চর্চার মধ্য দিয়ে শেখা যায়। সেই জায়গায় নতুন কোনো শিক্ষা অর্জিত হচ্ছিল না। এমনকি অনেক চেষ্টাও করেছি। দেখেছি, শেখানোর মতো মানুষের সংখ্যা কম। সেখানে মোশাররফ করিম ভাইকে পাওয়াটা সৌভাগ্যের বিষয়।’
শুটিংয়ে একসঙ্গে জমে ওঠে আড্ডা। শামীম জানান, মোশাররফ করিম নিজেই এ সময় অতীতের নানা প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। যেসব নাটকে সবাই মিলেমিশে অভিনয় করতেন। প্রবীণদের কাছ থেকে তাঁর মতো নবীনেরা অনেক কিছু শিখতেন। সেই চর্চা এখন নেই বললেই চলে। এ নিয়ে মন খারাপও করেন সময়ের আলোচিত তারকা মোশাররফ।
শামীম বলেন, ‘আমরা যে কাজ করছি, এখানে কাকে দেখে শিখব। কারই–বা দায় আছে শেখানোর। এখানে কেউ কাউকে শেখায় না। সেখানে মোশাররফ করিম ভাই প্রতিমুহূর্তে শিখিয়েছেন, সাজেশন দিয়েছেন। তিনি অনেক বড় শিক্ষক। এভাবে ধরে ধরে কেউ বলে না, “এটা এভাবে, এটা ওভাবে করো।” এখানেই তিনি আলাদা। পরে ভাইকে বলেছি, মাসে একটা হলেও আপনার সঙ্গে কাজ করতে চাই। এটাও বলেছি, ডাকবেন ভাই, ডাকলেই চলে আসব।’
শামীম মনে করেন, অভিনয় কখনো জোর করে বা চাপিয়ে দিয়ে হয় না। এটা ভালোবাসা থেকে আসে। এটাকে উপভোগ করতে হয়। ‘আমি এবারই অন্য রকম এক আনন্দে শুটিং উপভোগ করলাম। মোশাররফ ভাইয়ের সঙ্গে প্রচুর হেসেছি। হাসতে হাসতে কাট বলতে হয়েছে। খুশি নিয়ে কাজটি শেষ করেছি। তা ছাড়া মোশাররফ ভাই এমন একজন অভিনেতা, যিনি সহ-অভিনেতাদের অভিনয়ের সুযোগ তৈরি করে দেন। তিনি চান সবাই ভালো করুক। এই সুযোগ অনেক অভিনেতা দেয় না। শুধু নিজের চিন্তা করে। সেখানে ব্যতিক্রম মোশাররফ ভাই।’
‘জামাই টক্কর’ পরিচালনা করেছেন সোহেল হাসান। শিগগিরই এটি ইউটিউবে প্রচারিত হবে।