বাজার করছেন ক্রেতারাফাইল ছবি

স্মার্ট কেনাকাটা করবেন যেভাবে, খরচ বাঁচাবে ১০টি কৌশল

কেনাকাটার সময় সাশ্রয়ী হতে হয়, আবার ভালো পণ্যটিও কিনতে হয়, নিজের প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিতে হয়, তবেই স্মার্ট কেনাকাটা, যা আপনাকে কেনাকাটায় স্বস্তি দেবে।

স্মার্ট কেনাকাটা মানে শুধু কম দামে জিনিস কেনা নয়; এটি একটি সচেতন, পরিকল্পিত ও কার্যকর পদ্ধতি, যার মাধ্যমে আপনি টাকা, সময় ও সম্পদ—তিনটি জিনিসেরই সাশ্রয় করতে পারেন। বিশেষ করে বর্তমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে প্রতিটি খরচ হয়ে ওঠে গুরুত্বপূর্ণ।

স্মার্ট কেনাকাটার মূল উদ্দেশ্য হলো অপ্রয়োজনীয় খরচ এড়ানো; প্রয়োজনীয় জিনিস সাশ্রয়ী দামে কেনা এবং ভবিষ্যতের খরচ সম্পর্কে সচেতন থাকা।

স্মার্ট কেনাকাটার জন্য কিছু কৌশল আছে। এ সম্পর্কে ১০টি কৌশল দেওয়া হলো—

১. তালিকা তৈরি করুন

বাজারে যাওয়ার আগে যা লাগবে, তা মনে মনে ঠিক করে যাওয়া ঠিক নয়। এতে আপনি বাজারে গিয়ে অনেক অপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনে ফেলতে পারেন, আবার প্রয়োজনীয় জিনিস ভুলেও যেতে পারেন।

তাই মুঠোফোনের নোট অ্যাপ বা কাগজে তালিকা করে নিন। শুধু প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার তালিকায় থাকলে আপনার সময়ও বাঁচবে এবং খরচও কমবে।

২. বাজেট ঠিক করুন

বাজারে যাওয়ার আগে আপনি ঠিক করুন, কত টাকার বাজার করবেন। তা না হলে অযথা অনেক খরচ হয়ে যেতে পারে। তাই সাপ্তাহিক বা মাসিক বাজারের জন্য একটি নির্দিষ্ট খরচ নির্ধারণ করে নিন। যেমন এই সপ্তাহে বাজারের জন্য সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা রাখব।

৩. আগেই দাম যাচাই করুন

আজকাল অনেক পণ্যের দাম অনলাইন শপে সস্তা থাকে। আবার অনেক সময় দোকানে ভালো অফার চলে। তাই আপনার তালিকার যেকোনো পণ্য কেনার আগে বাজারদর জেনে নিন। এখন অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো থেকে ঘরে বসেই দরদাম জেনে নিতে পারে। এ জন্য দারাজ, চালডাল, স্বপ্ন, মীনাক্লিক—এসব অনলাইন শপে ঢুঁ মারতে পারেন।

এতে আপনি কম দামে ভালো জিনিস কিনতে পারবেন।

৪. নিত্যপণ্য বাল্কে কিনুন

চাল, ডাল, তেল, সাবান ইত্যাদি প্রায় প্রতিদিনই লাগে। এগুলো মাসের শুরুতে বেশি পরিমাণে কিনলে দাম অনেক সময় কম পড়ে এবং একাধিকবার দোকানে যেতে হয় না। এতে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হয়।

যেমন অফার বা পাইকারি দরে ২০ কেজি চাল একবারে কিনলে ভালো হয়। আবার পাঁচ কেজি করে কিনলে চারবার দোকানে যেতে হবে। দামও বেশি পড়বে।

৫. অফার ও ডিসকাউন্ট খেয়াল করুন

অনেক সময় সুপারশপ, ই-কমার্স সাইট বা স্থানীয় দোকানে মাসের শুরু বা শেষ, বিভিন্ন উৎসব বা বিশেষ দিনে ছাড় চলে। এসব সময় ছয় মাসের প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে নিতে পারেন (যেমন টিস্যু, সাবান, শ্যাম্পু ইত্যাদি)।

৬. মূল্য প্রতি ইউনিটে হিসাব করুন

৫০০ গ্রাম ওজনের একটি প্যাকেট ৯০ টাকা আর ১ কেজির প্যাকেট ১৬০ টাকা—কোনটি সস্তা? খেয়াল না করলে আপনি বেশি দাম দিয়ে অল্প কিনে ফেলতে পারেন। তাই প্রতি কেজি বা প্রতি লিটার হিসাব করে দেখুন। এতে আপনি ঠকবেন না।

৭. ব্র্যান্ডের প্রতি অন্ধ আনুগত্য নয়

সব নামী ব্র্যান্ডের পণ্যের দাম বেশি, মান ভালো হলেও অনেক সময় স্থানীয় পণ্যেও কম দামে সেই মান পাওয়া যায়। পরীক্ষামূলকভাবে স্থানীয় ব্র্যান্ড ব্যবহার করে দেখুন। যদি মান ঠিক থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে সেটাই কিনুন। এতে সাশ্রয়ী কেনাকাটা হবে।

৮. প্রয়োজন না থাকলে কিনবেন না

বাজারে গিয়ে হঠাৎ কিছু ভালো লাগল বা ‘৫০ শতাংশ ছাড়’ দেখেই কোনো পণ্য কিনে ফেললেন। পরে বুঝলেন, এটা আদৌ দরকার ছিল না। তাই এ পণ্য না কিনলে কী কী সমস্যা হবে—নিজেকে এ প্রশ্ন করুন। এতে অপ্রয়োজনীয় খরচ কমবে।

৯. রিফিলযোগ্য পণ্য ব্যবহার করুন

প্যাকেটজাত হ্যান্ডওয়াশ ও ডিটারজেন্টের পরিবর্তে রিফিল প্যাক কিনলে দাম তুলনামূলকভাবে কম পড়ে। প্যাকেজের বোতল একবার কিনে পরে শুধু রিফিল ব্যবহার করুন। এটি পরিবেশবান্ধব এবং টাকাও বাঁচবে।

১০. রসিদ রাখুন

আপনি প্রতিদিন বা সপ্তাহে কী কী কিনলেন, কত খরচ হলো, এর রসিদ না রাখলে কিছুই মনে থাকবে না।

একটি ছোট খরচ ডায়েরি বা এক্সেল ফাইল ব্যবহার করতে পারেন। মাস শেষে খরচ বিশ্লেষণ করুন। কোন খাতে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে, সেটা বুঝে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।