প্রতীকী ছবি

জীবনবিমা কোম্পানিতে এফডিআরের মতো টাকা রাখা যায়, কত টাকা রাখতে পারবেন

আপনি এককালীন টাকা রাখার জন্য ব্যাংকের বিকল্প খুঁজছেন? ব্যাংকের বিকল্প হিসেবে আপনি বিমা কোম্পানিতেও টাকা রাখতে পারেন। কারণ, ব্যাংকে যেমন এককালীন স্থায়ী আমানত (এফডিআর) হিসেবে টাকা রাখা যায়, একই ধরনের সুযোগ রয়েছে জীবনবিমা কোম্পানিতে।

যেহেতু বিমা কোম্পানি, তাই একে এফডিআর বলা যায় না। বিমা কোম্পানিগুলো সাধারণভাবে এ ধরনের কর্মসূচির নাম দিয়েছে একক (সিঙ্গেল) প্রিমিয়াম পলিসি। তবে কোম্পানি অনুযায়ী পলিসির নাম ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। ব্যাংকের এফডিআরের সঙ্গে একক প্রিমিয়াম পলিসির পার্থক্য রয়েছে।

একক প্রিমিয়াম পলিসিকে একেক জীবনবিমা কোম্পানি একেক নাম দিয়েছে। কেউ বলছে টার্ম পলিসি, যেগুলো ৫ থেকে ১০ বছর মেয়াদি। আবার কারও রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি (লং টার্ম) পলিসি। এগুলো ১০ থেকে ১৫ বছর, এমনকি ২০ বছর মেয়াদিও রয়েছে।

কোথায় রাখবেন

সাধারণত এককালীন এক লাখ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ যেকোনো পরিমাণ টাকা এ ধরনের পলিসিতে রাখা যায়। কোনো কোনো কোম্পানি এর চেয়ে কম টাকা রাখার সুযোগও দিয়ে থাকে। পলিসির মেয়াদ শেষে ব্যাংকের মতোই পাওয়া যায় এককালীন টাকা। এফডিআর থেকে মাসিক সুদ বা মুনাফা যেমন নেওয়া যায়, আবার মেয়াদ শেষেও সুদসহ পুরো টাকা নেওয়া যায়।

এফডিআরের বিপরীতে ঋণও নেওয়া যায় ব্যাংক থেকে। আর একক প্রিমিয়াম পলিসির ক্ষেত্রে মুনাফাসহ টাকা তো বটেই, ঝুঁকি-সুবিধাও পাওয়া যায়। তিন বছর পর অনেক বিমা কোম্পানি বোনাসও দেয় গ্রাহককে।

গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্সের রয়েছে ‘গার্ডিয়ান সুরক্ষা’ নামে একটি একক বিমা পরিকল্প। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো একাধিক কিস্তিতে প্রিমিয়াম জমা দেওয়ার ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য এটি অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক ও নির্ভরযোগ্য পরিকল্প হিসেবে পরিচিত। এর মেয়াদ মেয়াদ ৫ থেকে ৫২ বছর পর্যন্ত। বিমা অঙ্ক যেকোনো পরিমাণ হতে পারে, তবে ন্যূনতম ৫০ হাজার টাকা। গ্রহীতার বয়স ১৮ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে হতে হবে। কমপক্ষে দুই বছর চালু রাখার পর বিমা গ্রহীতা চাইলে এর দুই বছরের মধ্যে সমর্পণ মূল্য গ্রহণ করতে পারেন। সমর্পণ মূল্যের ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ নেওয়ারও সুযোগ রয়েছে।

বেসরকারি চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্সের ‘চার্টার্ড আল-বারাকাহ একক প্রিমিয়াম প্ল্যান’ একটি একক প্রিমিয়াম পলিসি রয়েছে। এখানে বিমার মেয়াদ যথাক্রমে ৫,৬, ৭,৮, ৯,১০, ১২ ও ১৫ বছরের জন্য পলিসি কেনা যায় এবং সর্বনিম্ন প্রিমিয়াম এক লাখ টাকা। বিমা গ্রাহকের সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর এবং সর্বোচ্চ বয়স ৬০ বছর হতে হবে। মেয়াদ পূর্তিকালীন সর্বোচ্চ বয়স ৭০ বছর। এ পরিকল্পে সর্বনিম্ন প্রিমিয়াম হবে এক লাখ টাকা এবং সর্বোচ্চ পরিমাণ বিমা গ্রাহকের ইচ্ছামাফিক। বিমার শুরুতেই পুরো মেয়াদের জন্য একটি মাত্র প্রিমিয়াম জমা দিতে হবে। আত্মহত্যা (আপত্তি উত্থাপনযোগ্য সময়ের মধ্যে), যুদ্ধ অথবা এইডসের কারণে মৃত্যু হলে এই বিমা কোনো সুরক্ষা দেবে না।

বাংলাদেশে পরিচালিত ভারতীয় একটি জীবনবিমা কোম্পানি হলো লাইফ ইনস্যুরেন্স করপোরেশন বাংলাদেশ। যা সংক্ষেপে ‘এলআইসি বাংলাদেশ’ নামে পরিচিত। এরও একক প্রিমিয়াম পলিসি রয়েছে, যেখানে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একবার প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে হয়। পলিসি চলাকালে গ্রাহক মারা গেলে গ্রাহকের নমিনি সম্পূর্ণ বিমা অঙ্ক, যত বছর পলিসি চলেছে তার পুঞ্জীভূত বোনাস এবং এলআইসি ঘোষণা করে থাকলে চূড়ান্ত অতিরিক্ত বোনাস পাবেন।

মার্কেন্টাইল ইসলামি লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতেও রয়েছে এ রকম একক বিমা পলিসি। পলিসির মেয়াদ শেষে পলিসিধারী মূল বিমার দ্বিগুণ অর্থ পাবেন। যদি পলিসিধারী মেয়াদপূর্তির আগে মৃত্যুবরণ করেন, তবে মনোনীত ব্যক্তিকে এই অর্থ দেওয়া হবে। পলিসির মেয়াদ ৬ বছর থেকে সর্বোচ্চ ১৫ বছর। পলিসির ন্যূনতম মূল বিমার পরিমাণ অবশ্য ১০ হাজার টাকা। পলিসি কেনার জন্য ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর এবং সর্বোচ্চ বয়স ৫৫ বছর।

‘জীবন সঞ্চয়’ নামে একটি পরিকল্প রয়েছে প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্সের। ৩,৫, ৭ ও ১০ বছর মেয়াদে ১ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত এককালীন রাখার সুযোগ রয়েছে এতে। বছর অনুযায়ী মেয়াদ পূর্তিতে ১১৫,১৫০ ও ২০০ শতাংশ পর্যন্ত টাকা পাওয়া যায় এর বিপরীতে। এর প্রিমিয়াম একবারই দিতে হয়। মেয়াদ যত বেশি সময়ের সুবিধা তত বেশি।

প্রগতি লাইফের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জালালুল আজিম বলেন, ৪৫ বছরের বেশি বয়সী কাউকে জীবন সঞ্চয়ের গ্রাহক করা হয় না। পলিসিটির একটি বিশেষ দিক হচ্ছে মেয়াদ পূর্তির আগে কোনো কারণে গ্রাহক মারা গেলে মেয়াদ পূর্তির পর তিনি যে টাকা পেতেন, তা দেওয়া হয় নমিনিকে।