রাস্তায় বৈধভাবে মোটরসাইকেল চালাতে হলে কর ও ফি দিতে হয়। সড়ক কর বা ট্যাক্স টোকেন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সময়মতো এই কর নবায়ন না করলে ট্রাফিক পুলিশও জরিমানা করতে পারে। এর সঙ্গে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আর্থিক ক্ষতি থেকে পোষাতে বিমা করাও প্রয়োজন।
একজন মোটরসাইকেল মালিককে সড়কে চলাচলের জন্য ১০ বছরের কর দিতে হয়। তবে একবারে ১০ বছরের কর দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। দুই বছর পর কিস্তির মাধ্যমেও কর পরিশোধ করা যায়।
১০০ সিসির মোটরসাইকেলের জন্য ১০ বছরে সরকারি কোষাগারে কর দিতে হয় ১১ হাজার ৫০০ টাকা। ১০০ সিসির কম মোটরসাইকেলের জন্য এই কর ৫ হাজার ৭৫০ টাকা। তবে এই কর ৫ কিস্তিতে অর্থাৎ দুই বছর পর পর দেওয়া যায়। অর্থাৎ ১০০ সিসির বেশি মোটরসাইকেলের জন্য প্রতি ২ বছরে দিতে হয় ২ হাজার ৩০০ টাকা এবং ১০০ সিসি নিচের মোটরসাইকেলের জন্য দিতে হয় ১ হাজার ১৫০ টাকা। এ ছাড়া ২০২৩ সাল থেকে ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট ফান্ড (এফএএফ) নামে নতুন একটি ফি যোগ হয়েছে। যার জন্য এককালীন ১ হাজার ১৫০ টাকা জমা দিতে হয়।
কারও ১০ বছরের ট্যাক্স টোকেন শেষ হলে তাকে নতুন করে আবেদন করতে হবে। এর জন্য দিতে হবে ২৩ টাকা। সঙ্গে দিতে হবে ১ হাজার ১৫০ টাকার এফএএফ মাশুল। এরপর মোটরসাইকেলটি বিআরটিএ কার্যালয়ে নিয়ে যেতে হবে। পরিদর্শক মোটরসাইকেলটি ব্যবহারের উপযোগী কিনা তা যাচাই করে দেখবেন। সে সময় তিনি পর্যবেক্ষণের পর নতুন টোকেন দেবেন। যা নির্দিষ্ট সময়ের জন্যও (২ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত) হতে পারে।
মোটরসাইকেল নিবন্ধনের সময় প্রথম কিস্তির কর বিআরটিএ ইস্যু করে দেয়। তবে কয়েক বছর পর এটি নবায়ন করতে হয়। আগে কেবল ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা জমা দেওয়ার সুযোগ ছিল। এখন ঘরে বসেই বিকাশ, নগদ বা ভিসা কার্ড ব্যবহার করে ফি পরিশোধ করা যায়।
বিআরটিএর সার্ভিস পোর্টালের তথ্য বলছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় মোট ১৫টি ব্যাংকে করের টাকা জমা দেওয়া যায়। ব্যাংকগুলো হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, আল-আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড, এসবিএসি ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেড, মধুমতি ব্যাংক লিমিটেড, এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড, মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড ও ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড। বিআরটিএর সার্ভিস পোর্টালের গিয়ে সেখানে জেলা ভিত্তিক কোন শাখায় করের টাকা জমা দেওয়া যায় তা জানা যাবে।
বিআরটিএর সার্ভিস পোর্টাল থেকে বিকাশ, নগদ কিংবা ভিসা কার্ডের মাধ্যমে অনলাইনে কর নবায়ন করা যায়। এর জন্য মোবাইল বা কম্পিউটার ব্রাউজারে থেকে (www.bsp.brta.gov.bd) যেতে হবে। নিবন্ধন না করা থাকলে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্মতারিখ, মোবাইল নম্বর ইত্যাদি দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। শেষে ভেহিকল ইনফরমেশন অপশনে গিয়ে বাইকের তথ্য যেমন রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, রোড পারমিট, ট্যাক্স টোকেন দেখা যাবে। ট্যাক্স টোকেনের মেয়াদ শেষ হলে লাল চিহ্নে দেখাবে। এবার ‘রিনিউয়াল’ অপশনে গিয়ে নবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ফি দেখা যাবে। ‘পে’ অপশনে ক্লিক করে মোবাইল নম্বর দিতে হবে। তারপর বিকাশ, নগদ বা কার্ড যেটি সুবিধাজনক মনে হয় সেটি বেছে নিয়ে করের ফি পরিশোধ করা যাবে।
বিকাশ নির্বাচন করলে একটি একবার ব্যবহার যোগ্য পাসওয়ার্ড (ওটিপি) এবং বিকাশ পাসওয়ার্ড দিয়ে পেমেন্ট সম্পন্ন করুন। পরিশোধের সময়ই ডেলিভারির ঠিকানা দিতে হয়। পরবর্তীতে নতুন ট্যাক্স টোকেন সরাসরি আপনার ঠিকানায় কুরিয়ারে পৌঁছে যাবে। সাধারণত বিকাশের মাধ্যমে ট্যাক্স টোকেন ৫-৭ কার্যদিবসের মধ্যে পরিশোধ হয়ে যায়। বিকাশে কর পরিশোধ করতে হলে ৩৪ টাকার ফি দিতে হয়।
রাস্তাঘাটে মোটরসাইকেল নিয়ে চলার সময় যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই আর্থিক ক্ষতি এড়াতে বিমা করা প্রয়োজন। চুরি, দুর্ঘটনা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে আর্থিক সুরক্ষা দেয় এই বিমা।
এর জন্য প্রয়োজন হয় ব্লু বুক, ড্রাইভিং লাইসেন্স, দুইটি পাসপোর্ট সাইজ ছবি, রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও মোটরসাইকেলের কেনার কাগজ। সাধারণত কম খরচের জন্য চালকেরা তৃতীয় ক্যাটাগরির বিমা নেন। এটি এক বছর মেয়াদি এবং খরচ প্রায় ২০০ টাকা। পরবর্তীতে ২২৫ টাকা দিয়ে নবায়ন করা যায়।
বাংলাদেশে মোটরসাইকেলের জন্য দুই ধরনের বিমা আছে। একটি তৃতীয় পক্ষ বিমা। অপরটি হলো কম্প্রেহেন্সিভ বা সমন্বিত বিমা। মোটরসাইকেলের জন্য আইন অনুযায়ী বিমা বাধ্যতামূলক। আপনার মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় অন্য কারও ক্ষতি বা আহত হওয়ার ঘটনা ঘটলে তার ক্ষতিপূরণ দেয় বিমা। তবে এতে মোটরসাইকেলের ক্ষতি বা চিকিৎসা ব্যয় কভার হয় না। তবে কম্প্রেহেন্সিভ বিমা মোটরসাইকেল চুরি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও নিজের ক্ষতি থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। ‘কম্প্রেহেন্সিভ মটো ইনস্যুরেন্স’ করতে খরচ হয় ১০ হাজার টাকা। যা সব বিমা কোম্পানির ক্ষেত্রেই এক। তৃতীয় পক্ষ বিমা করতে খরচ হয় ২৩০ টাকা। বিমার টাকা, ক্ষতিপূরণের টাকা এই সব জিনিস বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে থাকে। দেশে প্রভাতি ইনস্যুরেন্স, সেনা ইনস্যুরেন্স ও গ্রিন ডেলটা ইনস্যুরেন্সসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইনস্যুরেন্স করা যায়।
সূত্র: বিআরটিএ, বাইকস গাইড, বাইক বিডি