মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক
প্রকাশ: ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আট বছরে শ্রমিকনেতা ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছিল, সেগুলোর প্রায় সবই প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে অভিযুক্ত, অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিসহ মোট ৪৭ হাজার ৭২৮ জন মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। সরকারের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।
এসব মামলায় অনেক শ্রমিক কারাগারে গেছেন। অনেকে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। সেই সঙ্গে অনেকে মানসিকভাবেও ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, যদিও এ বিষয়টি আমাদের দেশে তেমন একটা বিবেচনা করা হয় না। সেই সঙ্গে আমি বলব, যাঁরা এসব মামলার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক। সরকারের মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে সরকার ক্ষতিপূরণ দিক, মালিকপক্ষের মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাঁরা ক্ষতিপূরণ দিক, এটা আমাদের দাবি।
সেই সঙ্গে শ্রমিকেরা অধিকারের দাবিতে কথা বললেই যেন পাইকারি হারে তাঁদের নামে মামলা দেওয়া না যায়, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করা হোক। ৫০ জনের নামে আর ৫ হাজার জন অজ্ঞাতনামা আসামি—এসব মামলা যেন হতে না পারে, সে জন্য সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অধিকারের কথা বললে কেউ অপরাধী হয়ে যান না।
এ মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টি ইতিবাচক হলেও একই সময় নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে কারখানা বন্ধ ও ছাঁটাইয়ের জেরে শ্রমিকেরা আন্দোলন করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে একজন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। এ ঘটনা সরকারের দ্বিচারিতা।
এদিকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শ্রমিকদের জীবনে অনেক উত্থান–পতন দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে অনেক কারখানা বন্ধ হয়েছে। ফলে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়েছেন। কাজ হারিয়ে তাঁরা বেকার হয়ে গেছেন। অনেকে সবজির ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা হয়ে গেছেন। নারীরা বাসাবাড়িতে কাজ নিয়েছেন। অনেকে আবার শূন্য হাতে গ্রামে ফিরে গেছেন।
শ্রমিকদের এই জীবন কাম্য নয়; কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের যে কার্যক্রম, তাতে মনে হচ্ছে, তারা সংবিধান সংশোধন ও নির্বাচন ছাড়া কিছু ভাবছে না। দেশে যেন আর কোনো সমস্যা নেই। এই যে শ্রমিকেরা বেকার হয়ে পড়েছেন, তাঁদের জন্য কিছুই যেন করণীয় নেই। অথচ দেশের প্রায় সাড়ে সাত কোটি মানুষ শ্রমজীবী।
দুঃখজনক বিষয় হলো, সরকার নিজে থেকে কিছু করে না। কেবল চাপে পড়লেই তারা উদ্যোগ নেয়—কখনো শ্রমিক আন্দোলনের চাপে, আবার কখনো আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার চাপে। এই যে শ্রমিকেরা কাজ হারালেন, তাঁদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তার কথা আমরা বলেছি। কিন্তু এসব বিষয়ে উদ্যোগ নেই।
অন্যদিকে এই শ্রমিকেরা তো সরকারের চাকরি করেননি, তাঁরা করেছেন মালিকের চাকরি। ফলে মালিকপক্ষের কোনো দায় থাকবে না, তা হতে পারে না। কিছু বললেই বলা হয়, টিসিবির কার্যক্রম আছে। কিন্তু টিসিবির ট্রাকের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে শ্রমিকেরা কেন স্বল্প দামের পণ্য কিনবেন—এটা তাঁদের জন্য অবমাননাকর। টিসিবির লাইনে দাঁড়াতে হলে কেন মালিকেরা চাকরি করবেন তাঁরা।
দেশের তৈরি পোশাক খাতের মালিকদের সব সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, তাঁরা সরকারের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা পাচ্ছেন, কিন্তু শ্রমিকদের জন্য বাঁচার মতো মজুরি দিতে তাঁদের কত যুক্তি! ভাবখানা এমন—শ্রমিকেরা যেন পাঁচ বছর পরপর তাঁদের কাছে ভিক্ষা চাচ্ছেন।
পরিশেষে বলব, শ্রমিক–মালিক–সরকার—এই ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগের মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করতে হবে। শ্রমিকদের বাদ দিয়ে ভাবলে চলবে না।
কল্পনা আক্তার: সভাপতি, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার ফেডারেশনের (বিজিআইডব্লিউএফ)