সংস্কার ছাড়া ব্যাংক একীভূতকরণে অর্থ ঢালা নিষ্ফল হবে
প্রকাশ: ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বাংলাদেশ ব্যাংক শরিয়াভিত্তিক পাঁচটি ব্যাংক—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন, সোশ্যাল ইসলামী ও এক্সিম—একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে। উদ্দেশ্য হলো দুর্বল হয়ে পড়া ইসলামি ব্যাংকিং খাতকে স্থিতিশীল করা। দীর্ঘদিনের অনিয়মিত ঋণ, তদারকব্যবস্থার ব্যর্থতা ও তারল্য–সংকটের কারণে খাতটির প্রতি আমানতকারীদের আস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। বিশেষ করে এস আলম গ্রুপকে ঘিরে বিতর্ক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।
ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ ২০২৫ অনুযায়ী এই একীভূতকরণে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে, যা সরকার ও ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স ট্রাস্ট ফান্ড থেকে আসবে। নতুন ব্যাংকের সম্পদ দাঁড়াবে প্রায় ২ দশমিক ২০ ট্রিলিয়ন টাকা, যা সোনালী ব্যাংকের চেয়েও বড়। প্রাথমিকভাবে এটি রাষ্ট্রায়ত্ত ‘ব্রিজ ব্যাংক’ হিসেবে পরিচালিত হবে, পরে বেসরকারি মালিকানায় দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
আমানতকারীদের জন্য নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি থাকলেও হারানো আস্থা ফিরে পেতে সময় লাগবে। কর্মচারীদের চাকরি ঝুঁকিতে না থাকলেও শাখা পুনর্গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে। পুরোনো বোর্ড ভেঙে নতুন বোর্ড গঠনের মাধ্যমে তদারকব্যবস্থায় পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
তবে সংশয় রয়ে গেছে। দুর্বল ব্যবস্থাপনায় জর্জরিত ব্যাংকে বিপুল সরকারি অর্থ ঢাললে দণ্ডহীনতার সংস্কৃতি আরও প্রাতিষ্ঠানিক হয়ে যেতে পারে। যদি নতুন বোর্ড রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক প্রভাবমুক্ত না হয়, তবে প্রকৃত সংস্কারের পরিবর্তে প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণই জোরদার হবে। একই সঙ্গে সংকুচিত বাজেটে এত অর্থ বরাদ্দ জনসেবার অন্যান্য খাতে চাপ সৃষ্টি করবে।
সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো আস্থা ফিরিয়ে আনা। কেবল মূলধন নয়; দরকার সংস্কার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে সাহসী, কিন্তু সাফল্যের জন্য দরকার অতীত থেকে স্পষ্ট বিচ্ছিন্নতা ও প্রকৃত সংস্কার। অন্যথায় এই একীভূতকরণও ব্যর্থ উদ্যোগে পরিণত হতে পারে। সংস্কার ছাড়া ব্যাংক একীভূতকরণে অর্থ ঢালা নিষ্ফল হবে।
আনিস এ খান , সাবেক চেয়ারম্যান, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)