Advertisement

গাড়ি কেনার পর যা করবেন, যা করবেন না

প্রথম আলো

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট, ২০২৫

গাড়ি কেনার পর তাতে কী কী সংযোজন করবেন, তা জানা দরকারএআই ছবি
গাড়ি কেনার পর তাতে কী কী সংযোজন করবেন, তা জানা দরকারএআই ছবি

ব্যক্তিগত গাড়ি এখন শখের বশেই কিনছেন না, প্রয়োজন ও তাগিদের জন্যই নতুন গাড়ি কিনছেন শহরবাসী। প্রথমবার গাড়ি কেনার পর অনেকেই দ্বিধায় থাকেন গাড়ি নিয়ে। গাড়ির নানা অনুষঙ্গ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পণ্য ব্যবহার করবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকে।

ঢাকার বাংলামোটরের বেশ কিছু গাড়ির পার্টস ও সরঞ্জাম বিক্রি এবং সার্ভিসিংয়ের দোকান গড়ে উঠেছে। সেখানে কথা হয় গাড়ি নিয়ে ইউটিউব চ্যানেল মেহেদি কার শোর পরিবহনবিশেষজ্ঞ মো. মেহেদি হাসানের সঙ্গে। তিনি জানান, এখন মানুষ ব্র্যান্ডের নতুন গাড়ি, যা জিরো মাইলেজ গাড়ি হিসেবে পরিচিত গাড়ি কিনছেন। এ ছাড়া রিকন্ডিশন ও পুরোনো দুই ধরনেরই গাড়ি কিনছেন। ব্র্যান্ড নিউ গাড়ির ক্ষেত্রে সবকিছুই নতুন থাকে, সরাসরি জাপান বা চীনের ফ্যাক্টরি থেকে বাংলাদেশে আমদানি করা হয়। আর শোরুম থেকে কেনার সময় প্রথমেই গাড়ির অকশন পেপারসহ অন্যান্য আইনগত কাগজপত্র পরীক্ষা করে নিতে হবে। এতে অনলাইন থেকে ট্রু রিপোর্টের মাধ্যমে বিস্তারিত তথ্যসহ গাড়ির চেসিস নম্বর, মাইলেজ ও গ্রেড সম্পর্কে ধারণা পাবেন। এরপর গাড়ির ইঞ্জিন, গিয়ার অয়েল, টায়ার থেকে বিভিন্ন তথ্য জানার জন্য ডায়ালাইসিস করতে হবে। মোবিল ফিল্টার, এয়ার ফিল্টার, গিয়ার অয়েল–এসব পরিবর্তন করতে হবে কেনার সময়। যেসব গাড়ির সংযোজন বাংলাদেশেই হচ্ছে সেগুলোর ক্ষেত্রেই সবকিছু নতুনই থাকে।

গাড়ির সঠিক যত্ন নিশ্চিত করতে বেশ কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে। নিয়মিত সার্ভিসিং করানোর চেষ্টা করুন। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী গাড়ি সার্ভিসিং করান। মো. মেহেদি হাসান বলেন, নতুন বা পুরোনো গাড়ির ক্ষেত্রে প্রথমেই চেসিস, ইঞ্জিন, গিয়ারবক্স পরীক্ষা করে নিতে হবে। নিজে না বুঝলে পরিচিত কারও সহায়তা নিন। প্রয়োজনে ডায়ালাইসিস সেন্টারের সহায়তা নিন। ঢাকার বাংলামোটরে অবস্থিত শামীম মোটরসের স্বত্বাধিকারী শামীম আলম বলেন, নতুন বা পুরোনো যে গাড়ি কেনেন না কেন, নিজের প্রয়োজনে কিছু জিনিস গাড়িতে যুক্ত করা ভালো। আমাদের দেশের রাস্তাঘাট আসলে গাড়ি ভালো থাকতে দেয় না। ধুলাবালু এড়াতে গাড়িতে ম্যাট ব্যবহার করবেন। গাড়িতে কার্পেটিং করে নিন। সিট কভার না থাকলে দ্রুত লাগিয়ে নেবেন। সিট কভার পছন্দ করার সময় শহরের ধুলাবালু ও ময়লার বিষয়টি খেয়াল রাখুন। ময়লা দেখা যায় না বা আটকায় না এমন সিট কভার ব্যবহার করুন। ভালো ফ্লোর ম্যাট গাড়ির ভেতর ব্যবহার করুন। নতুবা ময়লা, ধুলাবালু আর কাদা পানির কারণে গাড়ির ভেতরে গুমোট পরিবেশ তৈরি হতে পারে। গাড়ির জন্য কার্পেট ফ্লোর ম্যাট, রাবার ফ্লোর ম্যাট, থ্রিডি ফ্লোর ম্যাটসহ বিভিন্ন ধরনের ফ্লোর ম্যাট পাওয়া যায় বাজারে। গাড়িতে বাম্পার না লাগালে শখের গাড়ির সামনে পেছনে আঘাত লাগার আশঙ্কা অনেক বেশি। গাড়ির নিরাপত্তার জন্য বাম্পার লাগাতে পারেন। অনেকে গাড়ি কেনার পরে স্টিয়ারিং কভার ব্যবহার করেন। চামড়া ও সিনথেটিকের নানা ধরনের স্টিয়ারিং কভার ব্যবহার করতে পারেন। গাড়ির ভেতরের পরিবেশকে দারুণ ও মনোমুগ্ধকর করতে গাড়িতে নিয়মিত পারফিউম ব্যবহার করুন। ড্যাশবোর্ডে বা এসি ভেন্টে রাখা যায়, এমন ছোট বোতলের পারফিউম এখন বেশ জনপ্রিয়।

মো. মেহেদি হাসান বলেন, নতুন বা পুরোনো গাড়ি কেনার পর ডায়ালাইসিস করে পুরো গাড়ির সার্বিক অবস্থা জেনে নিন। গাড়ির স্পার্ক প্লাগ, ইঞ্জিন অয়েল, ইঞ্জিনের অবস্থা, সামগ্রিক অবস্থা জেনে নিন। গাড়ি কেনার পর প্রয়োজন হলে হেডলাইট বাল্ব পরিবর্তন করে নিতে পারেন। এখন অনেকেই এলইডি বাল্ব লাগাচ্ছেন গাড়িতে। অনেকেই গাড়ির দরজার হ্যান্ডেল পরিবর্তন করেন। নতুন বা পুরোনো গাড়ি কেনার পর নিরাপত্তার জন্য জিপিআরএস সিস্টেম নির্ভরযোগ্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে লাগিয়ে নিতে পারেন। এখন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরে বিভিন্ন গাড়ি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সার্ভিস সেন্টার আছে। এসব সেন্টার থেকে বিভিন্ন সেবা নিতে পারেন। নির্দিষ্ট মাইলেজ পর ইঞ্জিন তেল পরিবর্তন করুন। নিয়মিত ব্রেক ও টায়ারের অবস্থা পরীক্ষা করতে হবে প্রথম থেকে। ভেহিকেল ট্র্যাকিং সিস্টেম ব্যবহার করলে গাড়ির অবস্থান নির্ণয় ও চুরি প্রতিরোধে সহায়ক। ড্যাশ ক্যাম ও জিপিএস নেভিগেশন ব্যবহার করুন নিজের নিরাপত্তার জন্য। হাইব্রিড গাড়ি কিনে থাকলে নিয়মিত ছয়-সাত মাস পরপর সার্ভিসিং করুন। নতুবা ধুলার কারণে ব্যাটারি ও ব্রেকে সমস্যা হতে পারে।

অনেকেই গাড়ি কেনার পর বাড়তি বা অনেক সময় অবৈধ অ্যাকসেসরিজ সংযোজন করেন। অতিরিক্ত হর্ন, উজ্জ্বল আলো বা অবৈধ ফিটিংস ব্যবহার করা যাবে না। টুটল মোটরসের সেলসম্যান ইসমাইল হোসেন বলেন, অনেকে গাড়ির জানালায় কালো গ্লাস বা কালো পেপার লাগাতে পছন্দ করেন। বাড়তি কালো গ্লাস ব্যবহার করলে ৩ থেকে ১০ হাজার টাকার মামলা হতে পারে। সরকারি নিয়ম অনুসারে আপনি ব্যবহার করতে পারবেন না। অবৈধ ফিটিংসের মধ্যে উচ্চ শব্দের জন্য বাড়তি হলার ব্যবহার করা যাবে না। পুলিশের গাড়ির মতো লাইট ও হর্ন ব্যবহার করা যাবে না। গাড়ির সাইজ অনুসারে টায়ার ব্যবহার করতে হবে। ১৪ ইঞ্চির গাড়িতে ১৬ ইঞ্চির চাকা ব্যবহার করা যাবে না। বৃষ্টি বা জলাবদ্ধতার সময় ইঞ্জিনে পানি যেন প্রবেশ না করে, তা খেয়াল রাখুন। গাড়ির রেগুলেটরে পানি আছে কি না, তা দেখে নিতে হবে নিয়মিত।

Lading . . .