প্রকাশ: ৮ আগস্ট, ২০২৫

যশোরের অভয়নগরে অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে শতকোটি টাকায় নির্মিত ভৈরব সেতু। রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকি না থাকায় চুরি হচ্ছে মালামাল। সেতুতে বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে ১৬ মাস ধরে। এতে বেড়েছে চুরি-ছিনতাইসহ ছোট-বড় দুর্ঘটনা। জনবল সংকট ও বরাদ্দ না থাকায় রক্ষণাবেক্ষণসহ তদারকি করতে পারছে না উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় (এলজিইডি)। বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ হলে তবেই সেতুর দায়িত্ব নিতে পারে নওয়াপাড়া পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ভাঙ্গাগেট মশরহাটী গ্রামের সঙ্গে শ্রীধরপুর ইউনিয়নের দেয়াপাড়া গ্রামকে যুক্ত করেছে সেতুটি। ১৬টি পিলারবিশিষ্ট ৭০২.৫৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। সেতুর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রয়েছে ৬০টি সড়ক বাতি। উপজেলার শ্রীধরপুর, বাঘুটিয়া, শুভরাড়া ও সিদ্ধিপাশা ইউনিয়নের সঙ্গে প্রেমবাগ, সুন্দলী, চলিশিয়া ও পায়রা ইউনিয়নসহ নওয়াপাড়া পৌর এলাকার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই সেতু। তাই নির্মাণের পর থেকে রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকি করা হলেও গত এক বছর ধরে অযত্ন-অবহেলায় সেতুর নিরাপত্তা ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে। সরজমিন দেখা যায়, সেতুর সড়ক বাতির সবকটি বন্ধ রয়েছে। অসংখ্য বাতি ও সেতুর গুরুত্বপূর্ণ স্থানের যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে গেছে। কিছু কিছু স্থানে বৈদ্যুতিক তার কেটে ফেলা হয়েছে। নেই কোনো নিরাপত্তাকর্মী। অন্ধকারে টর্চ জ্বালিয়ে চলাচল করছেন পথচারীরা। শ্রীধরপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোল্যা মাসুদ রানা বলেন, এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন শত শত যানবাহন চলাচল করে। অথচ সেতু বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন প্রায় দেড় বছর। অন্ধকারের সুযোগ কাজে লাগিয়ে অপরাধীচক্র এখন সক্রিয়। শতকোটি টাকার সেতুতে নেই কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সেতুটি এখন অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুর নিরাপত্তা ও সড়কের বাতি সচল করার আহ্বান জানান তিনি।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. নাজমুল হুদা বলেন, জনবল সংকট ও বরাদ্দ না থাকায় ভৈরব সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকি বন্ধ রয়েছে। প্রায় তিন লাখ টাকা বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের কারণে পল্লী বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বরাবর নতুন বরাদ্দের আবেদন করা হয়েছে। তদারকি ও হস্তান্তরের বিষয়ে নওয়াপাড়া পৌর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা চলছে। যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ নওয়াপাড়ার জোনাল অফিসের এজিএম (কম.) মেহেদুল ইসলাম মেহেদী বলেন, ২০২৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত মোট ১৬ মাসে ভৈরব সেতুর বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ২ লাখ ৮২ হাজার ৬৯৪ টাকা। তবে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়নি, মিটার পুড়ে যাওয়ায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে নওয়াপাড়া পৌরসভার সচিব মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, সেতুর বিষয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে কথা চলছে। বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ হলে তবেই পৌর কর্তৃপক্ষ ভৈরব সেতুর দায়িত্ব নিতে পারে।
আরও পড়ুন