Advertisement

কক্সবাজারে সড়ক অবরোধে ভোগান্তি

প্রথম আলো

প্রকাশ: ১৮ আগস্ট, ২০২৫

চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ। আজ দুপুরে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের উখিয়া কোর্টবাজার পেট্রলপাম্প এলাকায়ছবি: প্রথম আলো
চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ। আজ দুপুরে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের উখিয়া কোর্টবাজার পেট্রলপাম্প এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের লার্নিং সেন্টারে (শিক্ষাকেন্দ্র) চাকরি হারানো শিক্ষকেরা আবারও আন্দোলনে নেমেছেন। চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে আজ সোমবার সকাল সাতটা থেকে উখিয়ার কোর্টবাজার স্টেশন এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা। এতে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে কয়েক হাজার যানবাহন আটকা পড়ে। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট তৈরি হয়। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সড়ক অবরোধ অব্যাহত রাখা হবে বলে জানান আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা।

সকাল আটটার দিকে শতাধিক শিক্ষক কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের উখিয়ার কোর্টবাজার স্টেশনে জড়ো হন এবং তাঁরা সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে যোগ দেন আরও কিছু শিক্ষক। এ সময় সড়কের দুই পাশে কয়েক শ পণ্যবাহী ট্রাক, যাত্রীবাহী বাস-মাইক্রো এবং হাজারো অটোরিকশা, পিকআপ-ভ্যান আটকা পড়ে। যানজটে আটকে থাকা যাত্রীর প্রচণ্ড গরমে ভোগান্তিতে পড়েন। সড়ক অবরোধের কারণে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলোকে কর্মরত দেশি-বিদেশি এনজিও সংস্থার গাড়িও ক্যাম্পে ঢুকতে পারছে না।

যানজটে আটকে পড়া একটি কাভার্ড ভ্যানের চালক মো. ইদ্রিস (৪৫) বলেন, ‘দেড় ঘণ্টা ধরে যানজটে আটকা পড়েছি। গাড়িতে পচনশীল মালামাল আছে। আন্দোলন করলে খোলা মাঠে করত, সড়ক অবরোধ করলে জনদুর্ভোগ বাড়ে। আরও কতক্ষণ আটকে থাকতে হবে, তা জানি না।’

কক্সবাজার থেকে বাসে টেকনাফ যাচ্ছিলেন কামরুল হাসান। তিনি বলেন, ‘পাঁচ কিলোমিটার সড়কে হাজারো গাড়ি আটকে আছে। প্রচণ্ড গরমে কতক্ষণ গাড়িতে বসে থাকা যায়। তিন কিলোমিটার পায়ে হেঁটে এখন বিকল্প ব্যবস্থায় টেকনাফ যাওয়ার চেষ্টা করছি।’

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া রোকসানা আক্তার নামের একজন শিক্ষক বলেন, ‘তহবিল–সংকটের অজুহাতে আমাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তাতে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা, সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। চাকরিতে পুনর্বহালের আশ্বাস দিয়ে বন্ধ থাকা শিক্ষাকেন্দ্রগুলো পুনরায় চালু করা হয়েছিল। এখন আমাদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। তাই দাবি আদায়ে মাঠে নেমেছি, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মাঠ থেকে যাব।’

কোর্টবাজার স্টেশনে পেট্রলপাম্প এলাকায় শিক্ষকদের আন্দোলন চলছিল। সেখানে বক্তব্য দেন শিক্ষকদের প্রতিনিধি সাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা সকাল থেকে দাবি আদায়ের আন্দোলন করছি। স্থানীয় শিক্ষকদের স্বপদে বহাল না করে ক্যাম্পে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে দেওয়া হবে না। আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৪ লাখের বেশি। আশ্রয়শিবিরে থাকা প্রায় চার হাজার শিক্ষাকেন্দ্রগুলোতে আড়াই লাখের বেশি রোহিঙ্গা শিশু-কিশোরকে পাঠদান করা হয়। সেখানে ছাঁটাইয়ের মুখে পড়া বাংলাদেশি শিক্ষকেরা বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। তাঁদের আন্দোলনের মুখে গত ৪ জুন আশ্রয়শিবিরে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হলেও জেলা প্রশাসনের আশ্বাসে ৩ জুলাই পুনরায় শুরু হয়। তখন চাকরিচ্যুত ব্যক্তিদের পুনর্বহালের জন্য এক মাস সময় বেঁধে দিয়েছিলেন আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা। তবে নির্ধারিত সময়ে পুনর্বহাল না হওয়ায় পুনরায় তাঁরা আন্দোলন শুরু করেছেন।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রথম আলোকে বলেন, তহবিল-সংকটের কারণে আশ্রয়শিবিরের ১ হাজার ১৭৯ জন স্থানীয় (বাংলাদেশি) শিক্ষকের চাকরির চুক্তি শেষ হয়। কিন্তু শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে আশ্রয়শিবিরের সব শিক্ষাকেন্দ্র অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর ৩ জুলাই শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করে বন্ধ থাকা শিক্ষাকেন্দ্রগুলো চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এক মাসের মধ্যে ইউনিসেফ তহবিল সংগ্রহ করতে পারলে শিক্ষকদের চাকরিতে পুনর্বহালের চেষ্টা চালানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। ১ মাস ১৭ দিন অতিবাহিত হলেও তহবিল সংগ্রহ হয়নি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন আরও বলেন, চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়া শিক্ষকদের বিষয়টি সরকার এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাধ্যমে আশ্রয়শিবিরে ১৫০টি শিক্ষাকেন্দ্র চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেখানে চাকরি হারানো শিক্ষকদের মধ্য থেকে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে চাকরি দেওয়া হবে। ৭ আগস্ট আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। এরপরও রাস্তা বন্ধ করে জনদুর্ভোগ বাড়ানোর কোনো কারণ দেখছি না। শান্তিপূর্ণভাবে দাবি তুলে ধরা যেত।

আজ দুপুর একটায় শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সড়ক অবরোধ করলে জনদুর্ভোগ বাড়বে, শান্তিপূর্ণ উপায়েও আন্দোলন করা যায়। ইউনিসেফের তহবিল-সংকট রয়েছে। এটা শুধু ইউনিসেফের নয়, যুক্তরাষ্ট্র ফান্ড বন্ধ করার পর সব ক্ষেত্রে তহবিল–সংকট চলছে। ইউনিসেফ চেষ্টা করছে আন্দোলনরত শিক্ষকদের জন্য কিছু করতে। কিন্তু তহবিল সংগ্রহ করতে না পারলে কী করার আছে।

Lading . . .