Advertisement

কক্সবাজার ইস্যুতে শোকজের জবাব দিলেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

নয়াদিগন্ত

প্রকাশ: ৭ আগস্ট, ২০২৫

এনসিপি’র মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী |ইন্টারনেট
এনসিপি’র মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী |ইন্টারনেট

কক্সবাজার যাওয়ার কারণে সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে এনসিপি যে শোকজ নোটিশ পাঠিয়েছে এবার তার জবাব দিয়েছেন তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা নাগাদ নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় দলের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের কাছে পাঠানো শোকজের ব্যাখ্যা পোস্ট করেন তিনি।

সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘ঘুরতে যাওয়া অপরাধ নয়। কারণ ইতিহাস কেবল মিটিংয়ে নয়, অনেক সময় নির্জন চিন্তার ঘরে বা সাগরের পাড়েও জন্ম নেয়।’

এর আগে তিনি আরো লেখেন, গত ৫ আগস্ট তার কোনো পূর্বনির্ধারিত রাষ্ট্রীয় বা সাংগঠনিক কর্মসূচি ছিল না এবং দল থেকেও তাকে এ সংক্রান্ত কোনো দায়িত্ব বা কর্মপরিকল্পনা জানানো হয়নি।

এরপর তিনি বলেন যে গত ৪ আগস্ট রাতে ‘দলের মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ তার কোচিং অফিসের সহকর্মীর ফোন ব্যবহার করে আমাকে জানায় যে সে তার স্কুল বন্ধুদের সাথে দুই দিনের জন্য ঘুরতে যাবে। আমি তাকে আহ্বায়ক (নাহিদ ইসলাম) মহোদয়কে অবহিত করতে বলি এবং সে জানায় যে বিষয়টি জানাবে এবং আমাকেও জানাতে বলে, যেহেতু তার নিজস্ব ফোন পদযাত্রায় চুরি হয়ে গিয়েছিল।’

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর দাবি, ওই রাতেই তিনি নাহিদ ইসলামের সাথে দেখা করে বিষয়টি জানান।

তিনি লেখেন, একই রাতে আমি সদস্য সচিব (আখতার হোসেন) মহোদয়ের সাথে ফোনে যোগাযোগ করি এবং জানতে পারি যে রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রামে দল থেকে তিনজন প্রতিনিধি যাচ্ছেন এবং সেখানে আমার কোনো কাজ নাই। কোনো দায়িত্বে না থাকায় এবং ব্যক্তিগত প্রয়োজন ও মানসিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আমি ঘুরতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।’

তার সফরসঙ্গী হিসেবে সস্ত্রীক এনসিপি’র মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা ও যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহও যুক্ত হন।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী তার ঘুরতে যাওয়ার কারণ হিসেবে জানান, ‘এই ঘোরার লক্ষ্য ছিল রাজনীতির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নিয়ে একান্তে চিন্তা-ভাবনা করা। সাগরের পাড়ে বসে আমি গভীরভাবে ভাবতে চেয়েছি গণঅভ্যুত্থান, নাগরিক কমিটি, নাগরিক পার্টির কাঠামো, ভবিষ্যৎ গণপরিষদ এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধানের রূপরেখা নিয়ে।’

এই পদক্ষেপকে তিনি কোনো অপরাধ মনে করেন না, বরং ঘুরতে যাওয়াটা একজন রাজনৈতিক কর্মীর জন্য একটি ‘দায়িত্বশীল মানসিক চর্চা’ উল্লেখ করে ওই ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার পৌঁছানোর পর হঠাৎ গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে আমরা নাকি সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সাথে দেখা করতে এসেছি। আমি তাৎক্ষণিকভাবে গণমাধ্যমকে জানাই যে এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার।’

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী লেখেন, হোটেল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করে জানায়, সেখানে পিটার হাস নামে কেউ নেই। পরবর্তীতে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, তিনি তখন ওয়াশিংটনে অবস্থান করছিলেন। এই গুজব একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র এবং আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপচেষ্টা। অতীতেও আমি এই হোটেলে থেকেছি এবং কখনো কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হয়নি।

তিনি যোগ করেন, অতীতেও আমি বেশ কয়েকবার ঘুরতে গিয়েছি। কিন্তু ঘুরতে এলে দলের বিধিমালা লঙ্ঘন হয়, এমন কোনো বার্তা আমাকে কখনো দল থেকে দেয়া হয়নি।

সামগ্রিক পরিস্থিতির আলোকে তিনি মনে করেন, ‘শোকজ নোটিশটি বাস্তবভিত্তিক নয়।’

শোকজের ব্যাখ্যায় নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী লেখেন, ‘আমার সফর ছিল স্বচ্ছ, সাংগঠনিক নীতিমালাবিরোধী নয় এবং একান্ত ব্যক্তিগত চিন্তা-ভাবনার সুযোগ মাত্র। তবুও দলীয় শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এবং রাজনৈতিক শালীনতা বজায় রেখে আমি এই লিখিত জবাব প্রদান করছি। অসভ্য জগতে সভ্যতার এক নিদের্শন হিসেবে।’

উল্লেখ্য, গতকাল বুধবার সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, তাসনিম জারা ও খালেদ সাইফুল্লাহ- প্রত্যেককে শোকজ করেছে এনসিপি। এনসিপি’র ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় তাদের করা আলাদা শোকজ নোটিশের কপিও প্রকাশ করা হয়েছে।

Lading . . .