শের-ই-বাংলা মেডিকেলের চিকিৎসক-কর্মচারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে কর্মবিরতি, রোগীদের ভোগান্তি
প্রকাশ: ১৮ আগস্ট, ২০২৫

বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক-কর্মচারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ডাকা ধর্মঘটে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। হামলার প্রতিবাদে আজ সোমবার দুপুরে মানববন্ধন করেছেন চিকিৎসক, ইন্টার্ন ও মেডিকেল শিক্ষার্থীরা। হাসপাতালের মূল ফটকে আয়োজিত মানববন্ধনে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়।
আজ দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ভর্তি রোগীদের অনেকে হাসপাতাল ত্যাগ করছেন। আবার হাসপাতালে ভর্তি হতে এসে ফিরে যাচ্ছেন অনেকে।
মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হতে এই হাসপাতালে এসেছিলেন বাকেরগঞ্জের জাকির তালুকদার (৬৫)। তিনি বলেন, ‘অসুস্থ শরীর নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলাম। কিন্তু ধর্মঘট চলছে শুনে আবার বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।’ একই বিভাগে ভর্তি রোগী পিরোজপুরের নাজমুন নাহার জানান, সকালে একজন চিকিৎসক এলেও পরে আর কোনো ফলোআপ দিতে কেউ আসেননি।
মহিলা মেডিসিন ইউনিট-৩-এর ইনচার্জ জ্যেষ্ঠ নার্স আখিরুন্নেসা বলেন, ‘ইন্টার্ন চিকিৎসক না থাকায় খুব সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ফলোআপ কীভাবে দেব, তা বুঝতে পারছি না। অনেক রোগী চলে যাচ্ছেন। সকাল থেকে ডিসচার্জ নিতে ভিড় করলেও পরে নিয়মিত চিকিৎসকেরা আসায় কিছু রোগী থেকে গেছেন।’
নার্স আখিরুন্নেসা জানান, আজ এই ইউনিটে রোগীর সংখ্যা ৬১, যেখানে গতকাল রোববার ছিল ৯৮ জন এবং গত শনিবার ছিল ১২৪ জন। সেখানে ঘুরে দেখা গেছে, অনেক বেড খালি পড়ে আছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, রোগীদের মূল চিকিৎসা দেন নিয়মিত চিকিৎসকেরা আর ২৪ ঘণ্টা পার করে রোগীদের ফলোআপ করেন ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। এই হাসপাতালে ১৫০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক কর্মরত। তাঁরা আজ সকাল থেকে কর্মবিরতিতে যাওয়ায় রোগীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন।
মেডিসিন ইউনিট-৩-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ইমরান হোসেন বলেন, ‘ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা না থাকায় চিকিৎসায় প্রভাব পড়েছে। আমরা নিয়মিত চিকিৎসকেরা রোগী দেখা, প্রেসক্রিপশন লেখা এবং ফলোআপ সব একসঙ্গে করছি। এতে চাপ অনেক বেড়েছে।’
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মশিউল মুনীর বলেন, নিয়মিত চিকিৎসকদের দিয়ে আপাতত সেবা চালু রাখা হয়েছে। তবে হামলাকারী ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা না হলে পরিস্থিতি অবনতির দিকে যেতে পারে।
হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, বহির্বিভাগে চিকিৎসা তুলনামূলক স্বাভাবিক থাকলেও অন্তর্বিভাগে ফলোআপ ও আপৎকালীন চিকিৎসায় চরম অব্যবস্থা চলছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে পুলিশ মোতায়েন করা হলেও রোগী ও স্বজনেরা শঙ্কিত।
প্রসঙ্গত, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার আন্দোলনের অংশ হিসেবে টানা ২১ দিন ধরে বরিশালে আন্দোলন চলছে। গতকাল বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা হাসপাতালে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় আন্দোলনকারী ব্যক্তিদের দ্বারা এক চিকিৎসক, দুই কর্মচারী ও এক রোগীর স্বজনকে মারধরের ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে আজ সকাল থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা কর্মবিরতিতে যান। তাঁরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরির সময়সীমা বেঁধে দেন। তা না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এদিকে হাসপাতালের নিয়মিত চিকিৎসকেরা হামলাকারী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন। অন্যথায় তাঁরাও কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।