চাকরির স্বপ্ন দেখিয়ে ৬০ লাখ টাকা নিয়ে উধাও সমাধান ফাউন্ডেশন
প্রকাশ: ১৭ আগস্ট, ২০২৫

চাকরি হবে, সংসারটা একটু ভালোভাবে চলবে এই আশায় ৩০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। এখন বুঝতে পারছি সেটাই ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় কাঁটা। আমার এলাকা থেকে যারা সমাধান ফাউন্ডেশনে যুক্ত হয়েছিল তারা এখন আমার কাছ থেকে টাকা আদায়ে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এই কথাগুলো বলছিলেন জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার আঁওড়া গ্রামের ভুক্তভোগী মো. সাইফুল ইসলাম। কান্নাভেজা কণ্ঠে তিনি জানান, কীভাবে ‘সমাধান ফাউন্ডেশন’ নামের একটি ভুয়া এনজিও প্রতিষ্ঠানের ফাঁদে পড়ে জীবনের জমানো অর্থ হারিয়েছেন! ‘সমাধান ফাউন্ডেশন’ নামের একটি ভুয়া উন্নয়ন সংস্থার আড়ালে পরিচালিত প্রতারণার এই চক্রটি দেশের বিভিন্ন জেলা ঘুরে ঘুরে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জয়পুরহাট জেলার ১৯৭ জন তরুণ-তরুণীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে প্রায় ৬০ লাখ টাকা। শুধু সাইফুল ইসলাম নন, তার মতো অসংখ্য মানুষ চাকরির প্রলোভনে ফাঁদে পড়েছেন। ভুক্তভোগী সাইফুল ইসলামের বর্ণনা মতে, ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে তিনি এক আত্মীয়ের সূত্র ধরে বগুড়া শহরে ‘সমাধান ফাউন্ডেশন’ নামে একটি অফিসে যান। সেখানে আশরাফুল্যা, রাফিউর ও নাফিউর রহমানসহ কয়েকজনের সঙ্গে পরিচয় হয়। যারা নিজেদের প্রতিষ্ঠানটির নিয়োগদাতা বলে পরিচয় দেন। তাদের দাবি ছিল, ‘সমাধান’ একটি উন্নয়নমুখী প্রতিষ্ঠান, যা বিভিন্ন জেলায় বড় বড় প্রজেক্ট (যেমন ফুড প্রোডাক্ট, সুপারশপ, রিসোর্ট, ব্রিক ফিল্ড ও পানির ফ্যাক্টরি) বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। এসব প্রজেক্টে মাসিক ৪০ হাজার টাকা বেতনে চাকরির নিশ্চয়তা দেয়া হয়। তবে শর্ত ছিল প্রতি জনকে দিতে হবে ৩০ হাজার টাকা ‘জামানত’। অনেকে নিজের সঞ্চয় ভেঙে, কেউবা ধারদেনা করে এই অর্থ প্রদান করেন।
সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি ‘কালাই উপজেলার ইনচার্জ’ হিসেবে মনোনীত হন এবং তার অধীনে ২৫ জন ফিল্ড অফিসার থাকবে বলে জানানো হয়। তাকে দিয়েও সদস্য সংগ্রহ করানো হয়। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তিনি বুঝতে পারেন, প্রকৃতপক্ষে কোনো প্রজেক্টই নেই, সবই ছিল সাজানো গল্প। ভুক্তভোগী সাইফুল ইসলামের ভাষ্যমতে, এই প্রতারণা চক্রের মূলকেন্দ্র ছিল ঢাকার উত্তরা এলাকায়। সেখান থেকে খন্দকার মেহেদী হাসান নামের এক ব্যক্তি ‘সমাধান ফাউন্ডেশন’ পরিচালনা করতেন। একেক এলাকায় একেক নামে তারা কার্যক্রম চালাতো, কখনো এনজিও, কখনো চেইন কোম্পানি আবার কখনো সামাজিক উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করতো।
প্রথমে চুয়াডাঙ্গার মোহাম্মদী শপিং কমপ্লেক্সে একটি অফিস খুলে প্রতারণা শুরু করেন তারা। সেখান থেকে আদায় করে ৭৪ লাখ টাকার বেশি। এরপর ঝিনাইদহের নিঝুম টাওয়ারে অফিস খুলে হাতিয়ে নেয় ৪৬ লাখ টাকা। এই দুই জেলার সদস্যদের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হওয়ার ঘটনা জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রকাশের পরে ঝিনাইদহে পুলিশের অভিযানে আটক করা হয় সমাধান ফাউন্ডেশনের প্রধান খন্দকার মেহেদী হাসানকে। অফিস থেকে উদ্ধার করা হয় জাল রশিদ, ফাঁকা নিয়োগপত্র ও সাজানো প্রজেক্ট কপি এবং রেজিস্ট্রারে ৪৬৯ জনের নাম থাকলেও তথ্য ছিল মাত্র ৩৯ জনের। অভিযানের পর লিখিত অভিযোগ না থাকায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর একই কৌশলে তারা পরে বগুড়া ও জয়পুরহাটে প্রতারণা চালিয়ে প্রতিটি উপজেলায় গঠন করে ২৫ জন ফিল্ড অফিসার। তাদের কাজ ছিল নতুন সদস্য সংগ্রহ করা এবং তাদের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে ‘জামানত’ নেয়া। অনেক সময় ফিল্ড অফিসাররাও জানতেন না, তারাও এক বড় চক্রান্তের শিকার। কালাই উপজেলার ভুক্তভোগী সোহেল রানা জানান, তিনিসহ আরও ২০ জন মিলে আবেদন করেছিলেন। সবাই টাকা দিয়েছিল জেলা অর্গানাইজার রাফিউর রহমানকে। বলেছিল এক মাস পর ফোন আসবে। দশ মাস হয়ে গেল এখনো কোনো ফোন আসেনি।
আরও পড়ুন