প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

কারিগরি ছাত্র আন্দোলন উত্থাপিত ছয় দফা দাবির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবিতে জেলায় জেলায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার দুপুরে রংপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, দিনাজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও গাজীপুরে সড়ক অবরোধ করা হয়।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কোথাও চার দফা, আবার কোথাও ছয় বা সাত দফা দাবি জানান। শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো হলো প্রকৌশল অধিকার আন্দোলন কর্তৃক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের ‘প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি’ প্রদানকারী ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা; বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের ‘অযৌক্তিক’ তিন দফা দাবির পক্ষে পরিচালিত সব কার্যক্রম রাষ্ট্র কর্তৃক অবিলম্বে বন্ধ করা; কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশের উত্থাপিত ‘যৌক্তিক’ ছয় দফা দাবির রূপরেখা ও সুপারিশ অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ান-চ্যানেল এডুকেশন চালু করা।
আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর নগরের শাপলা চত্বরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন কারিগরি শিক্ষার্থীরা। এর আগে বেলা ১১টার দিকে নগরের বিভিন্ন কারিগরি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে জড়ো হন। সেখান থেকে ‘কারিগরি ছাত্র আন্দোলন’–এর ব্যানারে মিছিল নিয়ে নগরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে তাঁরা শাপলা চত্বরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে শাপলা চত্বর, স্টেশন রোড, লালবাগ রোডসহ সড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও পথচারীরা। প্রায় দুই ঘণ্টা পর অবস্থান কর্মসূচি শেষ করেন শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন টাঙ্গাইল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে টাঙ্গাইল শহর বাইপাসের রাবনা মোড় এলাকায় তাঁরা কর্মসূচি শুরু করেন। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা কর্মসূচির কারণে মহাসড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধ তুলে নিতে শিক্ষার্থীদের বারবার অনুরোধ করেন সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। পরে বেলা আড়াইটার দিকে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নিলে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
সাত দফা দাবিতে পটুয়াখালীতে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পটুয়াখালী সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। দুপুরে ইনস্টিটিউট থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সোনালী ব্যাংক চত্বরে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে বড় চৌরাস্তায় গিয়ে তাঁরা মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে প্রায় এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ হয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ এসে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, সাত দফা দাবিতে পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা দুপুরে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। পরে সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে মহাসড়ক থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন তাঁরা। পরে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক ছেড়ে দেন।
দাবি আদায়ে ময়মনসিংহে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। আজ দুপুর ১২টায় ইনস্টিটিউটের প্রধান ফটকের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে দিঘারকান্দা বাইপাস মোড়ে অবস্থান নিলে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এক ঘণ্টা পর শিক্ষার্থীরা সরে গেলে ঢাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ সচল হয়।
কুমিল্লায় বিএসসি প্রকৌশলীদের ‘অযৌক্তিক’ তিন দফা দাবি রাষ্ট্রের মাধ্যমে প্রত্যাখ্যানের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন কারিগরি শিক্ষার্থীরা।
আজ দুপুরে কুমিল্লা কোটবাড়ী এলাকায় কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসের সামনের সড়কে বসে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ করেন। এতে সড়কের দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া কাজী নাফিজ আবদুল্লাহ বলেন, বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের সংগঠন প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলন কর্তৃক উত্থাপিত তিন দফা দাবির বিরুদ্ধে তাঁরা আজ এ কর্মসূচি পালন করেছেন। তাঁদের কয়েকটি যৌক্তিক দাবি রয়েছে, সেগুলো সরকারকে মেনে নিতে হবে। অন্যথায় তাঁরা কঠোর আন্দোলন করবেন। প্রয়োজনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অচল করে দেওয়া হবে।
চার দফা দাবিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ–সোনা মসজিদ স্থলবন্দর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা সড়কের বারঘোরিয়া এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
প্রায় এক ঘণ্টা ধরে সড়ক অবরোধ করায় সোনা মসজিদ স্থলবন্দর থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন আটকে পড়ে। পরে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিলে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
দিনাজপুরে সাত দফা দাবিতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেছেন কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। আজ সকাল সাড়ে নয়টায় শহরের ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন তাঁরা। পরে তাঁরা দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কে বাঁশ ফেলে অবরোধ শুরু করেন।
এদিকে রেলপথ অবরোধ করায় পঞ্চগড় থেকে ঢাকা ও রাজশাহীগামী দুটি ট্রেন আটকা পড়ে প্রায় দুই হাজার যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েন। পাশাপাশি সড়ক অবরোধ করায় শহরে উভয় পাশে কয়েক শ যানবাহন আটকা পড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে বেলা দেড়টার দিকে প্রশাসনের কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার পর অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়।
উপসহকারী প্রকৌশলী পদ নিয়ে ‘ষড়যন্ত্র’ ও বিএসসি প্রকৌশলীদের তিন দফার প্রতিবাদে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গাজীপুর নগরের ডুয়েট এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে তাঁরা চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় গিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেন।
ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় প্রকৌশলী ইসহাক পিকু বলেন, ‘আমরা ৭ দফা কর্মসূচি দিয়েছি। কিন্তু সরকার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না৷ আমাদের এই দাবি যৌক্তিক। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন চলবে।’
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও প্রতিনিধি, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, দিনাজপুর, গাজীপুর ]